বিলাল হোসেন মাহিনী
৫ অক্টোবর ‘শিক্ষক দিবস’ পালিত হয়। কিন্তু কী পান আমাদের সম্মানিত শিক্ষক সমাজ? শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য থেকে জানা যায়, শিক্ষার রূপান্তর বা পরিবর্তন শুরু হয় শিক্ষকদের দিয়ে। প্রতিপাদ্যটি শতভাগ যথার্থ। কিন্তু শিক্ষার পরিবর্তন শিক্ষকদের দিয়ে শুরু করতে হলে শিক্ষকের মান উন্নত করতে হবে। শিক্ষকের মানের উন্নতির জন্য প্রয়োজন বৈষম্যহীন উন্নত নিয়োগ প্রক্রিয়া, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, শিক্ষকদের জীবিকা নির্বাহের জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদান ও পদোন্নতি প্রভৃতি।
এবার কয়েকটি শিক্ষক সংগঠন থেকে দাবি করা হয়েছে- বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৫ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করা, সর্বশেষ বেতন স্কেলের ৫০ শতাংশ বাড়িভাড়া, ২০ শতাংশ চিকিৎসাভাতা ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা প্রদানসহ শিক্ষা জাতীয়করণের। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রনালয় বা সরকারের পক্ষ থেকে একটি দাবিও কী আমলে নেয়া হয়েছে? শুধু তাই নয়, অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ে হাজার হাজার শিক্ষক বিনা বেতনে বছরের পর বছর পড়াচ্ছেন, তাদের বেতন-ভাতাদি নিয়েও কী কোনো সুসংবাদ আছে?
তবে আশার দিক হলো, এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ, উন্নত প্রশিক্ষণ ও শিক্ষায় আইসিটি ব্যবহারের ফলে বেসরকারি শিক্ষা সেক্টর পর্যায়ক্রমে মানসম্মত হচ্ছে। এখন প্রয়োজন জীবনমূখী মানসম্মত শিক্ষাক্রম, শিক্ষকদের অর্থনৈতিক সুবিধা ও পদোন্নতির ব্যবস্থা করা। একজন শিক্ষক কিভাবে ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতায় ঈদ বা পূজা উদযাপন করবেন তা ভেবে দেখা দরকার।
শিক্ষকদেরও পুরনো ধ্যান-ধারণা থেকে বের হতে হবে। শিক্ষার্থীদের সাময়িকভাবে ভয় দেখিয়ে, শারীরিক শাস্তি দিয়ে শেখানো যায় না। এটি একেবারেই পুরনো ধারণা। আমাদের মনে রাখতে হবে, শিক্ষকতা পেশায় অনেক কিছু নেই, আবার এমন অনেক বিষয় আছে যা কোনো পেশায় নেই। এই পেশায় এমন কিছু পাওয়া যায়, যা দুনিয়ার কোনো অর্থ বা সম্পদ দিয়ে পাওয়া যায় না। এ পেশার এমনই ধরন, এর মধ্যে আনন্দ খুঁজে পেতে হলে শিক্ষকদের আরো গবেষণা করতে হবে, আরো ডেডিকেটেড হতে হবে, আর মোটিভেটেড হতে হবে। শিক্ষকগণ যখন নিজ পেশাকে প্রকৃত অর্থেই ভালোবাসব, তখনই এ পেশায় পরিবর্তন আসবে।
বাংলাদেশের শিক্ষকতা পেশায় সমস্যা অন্তহীন। বেতন-ভাতা, পদোন্নতিতে সরকারি-বেসরকারি খাতে পাহাড়সম বৈষম্য।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূর করার কথা আছে। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে যেখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে তার প্রতি আচরণ বিমাতাসুলভ। অন্যদিকে গত চার দশকে বাংলাদেশে শিক্ষকদের অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে, এটা ঠিক। তবে সময় ও বিশ্বের তুলনায় তা এখনও আশাব্যঞ্জক নয়। এখনও মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসছে না। অভিজ্ঞ শিক্ষকরা অবসরে চলে যাচ্ছেন। এসব শূন্যস্থান যথাযথভাবে পূরণ হচ্ছে না। মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের মত হলো, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সরকারি কোষাগারে জমা করতে পারলে এবং শিক্ষার্থী প্রতি মাত্র ২০টাকা বেতন তুলতে পারলে দেশের সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করতে সরকারের এক পয়সাও ব্যয় হবে না। অধিকিন্তু, উপকৃত হবে প্রান্তিক অঞ্চলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক।
বিলাল হোসেন মাহিনী
পরীক্ষক, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ও প্রভাষক : গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা, যশোর।