রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা প্রীতম দাশের মুক্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷
শনিবার অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম, সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাসিবউদ্দিন হোসাইন, সাংগঠনিক সমালোচক রাখাল রাহা প্রমুখ৷
সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত কাইয়ূম বলেন, সরকার এবং প্রশাসনের একটি অংশ পরিকল্পিতভাবে দেশে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা তৈরী করছে৷ প্রতিবেশী ভারতের সাম্প্রদায়িক শক্তির হাতে হাতিয়ার তুলে দিতে বাংলাদেশকে তারা সাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে চিহ্নিত করাতে চায়৷ প্রীতমকে সেজন্যই বিনা কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে৷
সংবাদ সম্মেলনে আরও দাবি করা হয়, পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতিকে উস্কে দিতে প্রীতম দাশকে গ্রেফতার করা হয়েছে ছাত্রলীগের একাংশের মদতে ।
গত ২৭/০৮/২২ তারিখে চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবির সাথে সংহতি জানিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন শ্রীমঙ্গলে একটি ‘সংহতি সমাবেশ’ আয়োজন করেছিল৷ সেই সমাবেশে শ্রীমঙ্গল পুলিশের একাংশের মদদে স্থানীয় ছাত্রলীগের একটি অংশ হামলা চালায়৷ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় সমন্বয় কমিটির দুই সদস্য প্রীতম দাশ ও রিয়াজ খানসহ অন্তত দশজন সেই হামলায় গুরুতর আহত হয়। হামলার একদিন পর গুরুতর আহত অবস্থাতেই হামলাকারীদের নাম প্রকাশ পূর্বক তাদের শাস্তির দাবিতে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে পরপর দুটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজিত হয়৷ সেখানে প্রীতম হামলাকারীদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে আহবান জানায়।
এই সংবাদ সম্মেলনের পরিপ্রেক্ষিতে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে শ্রীমঙ্গলে ব্যাপক জনমত ও সামাজিক ঐক্য তৈরি হয়। ফলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের একাংশের প্রত্যক্ষ মদদে হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতা আবেদ হোসেন প্রীতম দাশের ধর্মীয় পরিচয় ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেন। পরবর্তীতে শ্রীমঙ্গলে আগে থেকেই সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরি করতে সক্রিয় একটি চক্র এই সাম্প্রদায়িক প্রচারণায় অংশ নেয় এবং শ্রীমঙ্গল শহরে একটি মিছিল বের করে৷ সেই মিছিলে প্রীতম দাশের ছবি ব্যবহার করে দাবি করা হয়েছিলো প্রীতম দাশ ধর্মানুভূতিতে আঘাত করেছেন এবং তিনি রাষ্ট্রদ্রোহী, তাকে যেন গ্রেফতার করা হয়।
সেখান থেকে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছিল তাকে গ্রেফতার করা না হলে তার পরের শুক্রবার (০২-০৯-২০২২) বাদ জুম্মা আরও বড় পরিসরে তারা মিছিল করবে। তাদের এই ঘোষণা ও কৃত্রিম সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরির অপচেষ্টা বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সহায়তায় ভেস্তে যায়। সারাদেশ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করা হয় এবং সবচেয়ে বড় ভূমিকা নেয় শ্রীমঙ্গলের স্থানীয় সামাজিক নেতৃত্ব। সেখানকার মুসলমান, হিন্দু, রাজনৈতিক, সামাজিক বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্ব এগিয়ে এসে সেই জুম্মার পরে ঘটতে যাওয়া সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ঠেকিয়ে দেয়। দেশের সাম্প্রতিক সময়কালে প্রথমবারের মতো গণবিরোধী সাম্প্রদায়িক ফাঁদ কিভাবে ভেস্তে দিতে হয় তার একটা নজির তৈরি করে শ্রীমঙ্গল।
সাম্প্রদায়িক হামলার ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার পরেও থেমে থাকেনি ওই মহল। শ্রীমঙ্গলের পরিস্থিতি যখন পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে গেছে এবং কোন সাম্প্রদায়িক হামলাও করা যায়নি তখন আবারও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার শুরু করেছে সরকার। আসন্ন দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে দেশকে আবারও সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে এই ভোটারবিহীন মাফিয়া সরকার। সরকারের দুঃশাসন, ন্যায্য আন্দোলনে গুলি চালিয়ে মানুষ খুন, ভোটারবিহীনভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা, আসন্ন নির্বাচনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবিতে দেশের মানুষের মধ্যে যেরকম গণ-অসন্তোষ তৈরি হয়েছে সেগুলো থেকে মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরিয়ে দিতে এই অপতৎপরতা শুরু করেছে সরকার।
আমরা অবিলম্বে প্রীতম দাশের বিরুদ্ধে হওয়া এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তাকে সুস্থভাবে মুক্তি দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। আর বাংলাদেশের সকল মানুষকে এই জুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানাচ্ছি।