তেল-গ্যাস সমৃদ্ধ ব্রুনাইয়ের কাছ থেকে জ্বালানি চাহিদার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ।
ব্রুনাই বাংলাদেশ থেকে হালাল মাংস, মাছ পেতে চেয়েছে। আর তেল-গ্যাস সমৃদ্ধ ব্রুনাইয়ের কাছ থেকে জ্বালানি চাহিদার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ। ব্রুনাইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার পর রোববার বিকেলে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, ব্রুনাইয়ের সুলতান বাংলাদেশ থেকে তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, কৃষি ও মৎস্য পণ্য ও হালাল মাংস নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমাদের দেশের ছাগল বেঙ্গল গোট উনার খুব পছন্দ। আমরা উনার সঙ্গে যাওয়ার সময় কিছু বেঙ্গল গোট জীবিতভাবে দিয়ে দেব। আসার পর থেকেই উনাদের আমাদের ছাগলের কাচ্চি বিরিয়ানি খাওয়াচ্ছি।
বাংলাদেশের চাহিদা বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা উনাদের বলেছি, আমাদের জ্বালানির চাহিদা রয়েছে। সুলতান বলেছেন, চাহিদা অনুযায়ী তারা বাংলাদেশকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করবেন।
ব্রুনাই থেকে বাংলাদেশে ‘তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এবং পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহে’ একটি সমঝোতা স্মারক সই হয় রোববার। দুই দেশ এলএনজি ও অন্যান্য জ্বালানি পণ্য সরবরাহ নিয়ে সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে এলএনজিসহ অন্যান্য জ্বালানি পণ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ব্রুনাই বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী এসব পণ্য সরবরাহ করবে।
মন্ত্রী বলেন, বৈঠকে দুই দেশের তথ্যপ্রযুক্তি, মৎস্য শিল্পসহ সম্ভাব্য সব খাতসহ বাণিজ্য বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের নিয়মিত বৈঠকের ব্যাপারে একমত হয়েছেন দুই শীর্ষ নেতা।
তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা শুধু পশ্চিমামুখী ছিলাম। এখন আমরা পূর্ব দিকের দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক বাড়াব। কারণ পূর্বের দেশগুলোতে অনেক সম্ভাবনাময় সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ-ব্রুনাই এক সঙ্গে কাজ করলে দুই পক্ষই লাভবান হবে।
ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা সেখানে নির্মাণ ও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে কাজ করেন। এ নিয়ে দুই দেশ একটি সমঝোতা করেছে। এতে অধিক বাংলাদেশি সেখানে কাজ করতে যেতে পারবেন। ব্রুনাই বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য নিরাপদ স্থান। ব্রুনাই নিয়ে তাদের কোনো অভিযোগ নেই। সুলতান ক্ষমতায় থাকার ফলে ওই এলাকায় স্থিতিশীলতা ও শান্তি এসেছে। তিনি ওই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতীক। আমরাও শান্তি ও স্থিতিশীলতা চাই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও এ অঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের প্রতীক।
তিনি বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জোট আসিয়ানের সেক্টরাল সংলাপ অংশীদার হতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। ব্রুনাই এতে সমর্থন দেবে এ নিশ্চয়তা দিয়েছেন সুলতান। সম্প্রতি মানবাধিকার পরিষদে হয়ে যাওয়া নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ চিন্তায় ছিল। ব্রুনাই বাংলাদেশকে কথা দিয়ে ছিল ভোট দেবে এবং তারা দিয়েছে।
রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সুলতানের সফর উপলক্ষে দুই দেশের পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এতে জানানো হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতায় কাজ করতে আগ্রহী ব্রুনাই। এ ছাড়া জাতিসংঘ, ওআইসি, কমনওয়েলথ এবং এআরএফের মতো বহুপক্ষীয় ফোরামগুলোতে অভিন্ন স্বার্থে একে অপরকে সহযোগিতা করবে দুই দেশ। আর রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানিয়ে এর দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে ঢাকার প্রতি ব্রুনাইয়ের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা দেন সুলতান।