রাশেদুল হক রিয়াদ সম্পাদক নবদূত নিউজ চ্যানেল
ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘রূপকল্প ২০৪১, আমার সরকার এফডিআইসহ বেসরকারি বিনিয়োগকে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রধান খাত হিসেবে গ্রহণ করেছে। আমরা ২০৩১ সালের মধ্যে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগের অনুপাত ৩১ দশমিক ৪৩ শতাংশে উন্নীত করতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,’প্রতিবছর যদি গড়ে ৫ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখা যায়, তাহলে আশা করা হচ্ছে, ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে উন্নীত হতে সক্ষম হবে।’
আজ শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ বিজনেস সামিট-২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত ডিসেম্বরে আমরা মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ করেছি। এসব সাফল্যের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ এখন ২০৩১ সালে একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরিত হতে চাই। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা আমাদের রূপকল্প ২০৪১ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রনয়ণ করে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। এই রূপকল্প অর্জনের জন্য আমরা যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১ থেকে ২০৪১ এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ২০২১ থেকে ২০২৫ প্রনয়ণ করেছি সেখানে বেসরকারি এবং বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি তরান্বিত করণ এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতা সম্পন্ন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে একটি কৌশলগত পথরেখা প্রনয়ণ করা হয়েছে।’
২০১৫ সালেই আমরা মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা লাভ করেছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০২১ সালে যখন আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী ২০২০ সাল উদযাপন করি এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করি। সেই সময় আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনে সক্ষম হয়েছি।’
‘আমরা আশা করি ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করে ২০৩৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২০তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যাপকহারে টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ করেছি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করেছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, এলিভেডেট এক্সপ্রেস ওয়ে, নদীর তলদেশে ট্যানেল, গণপরিবহন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, আমাদের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় গত জুনে যুক্ত হয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে এই পদ্মা বহুমুখী সেতু আমরা নির্মাণ করেছি। আমরা যে পারি, সেটা প্রমাণ করেছি।’
‘এই সেতু শুধু বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলই নয়, এই সেতু আমাদের আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বাড়াবে এবং ন্যূনতম ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।’
ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘রূপকল্প ২০৪১, আমার সরকার এফডিআইসহ বেসরকারি বিনিয়োগকে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রধান খাত হিসেবে গ্রহণ করেছে। আমরা ২০৩১ সালের মধ্যে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগের অনুপাত ৩১ দশমিক ৪৩ শতাংশে উন্নীত করতে চাই।’
‘২০২৫ সালের মধ্যে শুধু লজিস্টিকস খাতেই ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারে পরিণত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ প্রায় ১৭ কোটি জনগোষ্ঠীর দেশ। আমাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা ২০৩০ সালের মধ্যে নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। যুক্তরাষ্ট্র বা জার্মানির মতো প্রতিষ্ঠিত বাজারগুলোকে এবং বর্তমান উচ্চ প্রবৃদ্ধির ভিয়েতনাম বা থাইল্যান্ডকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করি’, বলেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি জানি যে, এটা একটু বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষা। তারপরও উচ্চাকাঙ্ক্ষা করতে তো আপত্তি নেই। সব সময় আমাদের একটা ভালো লক্ষ্য থাকবে। ২০২৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত, ধনীক শ্রেণির সংখ্যা হবে ৩ কোটি ৪০ লাখ।’
‘২০৪০ সালের মধ্যে আনুমানিক মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়াবে ৫ হাজার ৮৮০ মার্কিন ডলার। কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে ৩০০ কোটি মানুষের আঞ্চলিক বাজারের কেন্দ্রস্থল হতে পারে এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে পূর্ব, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধন হিসেবে বাংলাদেশ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।’
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ব্যবসায়ের অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে। আমাদের দেশে বর্তমানে ৬৮ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ কর্মজীবী বয়স বিভাগে অবস্থান করছে।’
‘আমাদের রয়েছে সহজে প্রশিক্ষণযোগ্য একটি তরুণ জনগোষ্ঠী। যারা বেসরকারি বিভিন্ন খাতের বিনিয়োগে অবদান রাখতে সক্ষম। বর্তমানে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী প্রায় ১১ কোটি ৪০ লাখ নাগরিক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে যেকোনো বিনিয়োগে মূল্যবান অবদান রাখতে প্রস্তুত।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডিজিটাল খাত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে আইসিটি খাতে প্রায় ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে ২০২৫ সাল নাগাদ ডিজিটাল এবং ডিজিটাল ডিভাইস খাতে রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ৬ লাখ ৫০ হাজার ফ্রিল্যান্সার রয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী অনলাইনে শ্রমের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী। আমরা ৩৮টি হাইটেকপার্ক নির্মাণ করেছি। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য এসব পার্ক উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।’
‘কৃষি ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের অন্যতম একটি সম্ভাবনাময় খাত। চাল, শাক-সবজি, পাট, মাছ, আলু, আমসহ বিভিন্ন কৃষি ব্যবসার জন্য কৃষিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ কৃষিপণ্যে শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। অন্যান্য বেশ কয়েকটি খাতও অভ্যন্তরীণ ও রপ্তানি বাজারের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) এখন বাংলাদেশের জাতীয় ব্যবসায়ীক পরিবেশ কর্মসূচি- বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রোগ্রাম (বিআইসিআইপি) বাস্তবায়ন করছে। এর আওতায় আগামী ৫০ সপ্তাহে ৫০টি সংস্কার এবং আগামী ৩ বছরে ১০০টি বিনিয়োগ পরিবেশ সংস্কার করা হবে। যেন লাল ফিতার দৌরাত্ম্যটা না থাকে, সেটা সরিয়ে দেওয়া হবে। সিদ্ধান্ত হবে, সাথে সাথে সেটা বাস্তবায়ন হবে।’
‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষে কাজ করছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে। বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ও শক্তিশালী রপ্তানি কৌশল এবং শিল্পনীতি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে। যা শিল্পের প্রাণবন্ততা বৃদ্ধির জন্য চমৎকার নীতি ও নির্দেশনা প্রদান করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এখন ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য ৫ বছরের প্রস্তুতিমূলক সময় পার করছি। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ আমাদের জন্য একইসঙ্গে অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করবে আবার অনেকগুলো চ্যালেঞ্জও আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, কঠোর বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার অর্থনৈতিক সক্ষমতাও আমরা অর্জন করব।’
‘আমি দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে এসব সুযোগ কাজে লাগাতে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। এখন কোনো হতাশার কথা শুনতে চাই না। এখন থেকে নিজেদের তৈরি করতে হবে’, বলেন শেখ হাসিনা।