আ ম ম আরিফ বিল্লাহ :
দেশ আজ মহাসংকটে। দেশের জনগণ আজ গণবিরোধী অক্টোপাসের শোষণ, নির্যাতন, হামলা ও মামলায় জর্জরিত! ভাবা যায়! শুধু মাত্র অবৈধ ভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য নিজ দেশের জনগণের বুকে গুলি চালানো হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ এবং ক্ষমতাসীনদের যৌথ হামলার শিকার হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের অধিকার আদায়ে সোচ্চার মজলুম জনতা।
পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী সংখ্যাগড়িষ্ঠতা পাওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগকে সরকারগঠন করতে না দিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে পাকসেনা নামিয়ে বাঙালী জাতিকে দাবিয়ে রাখতে চেয়েছিল। তার পরিনতিতে শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানী হানাদাররা তাদের দেশের অখন্ডতা রক্ষার জন্য লাখ লাখ বাঙালি হত্যা করেছিলো।
আর আজকে আত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশে জনগণ শুধুমাত্র ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার, দূর্নীতি ও অপশাসন থেকে পরিত্রাণের জন্য চলমান আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। গত এক যুগ ধরে এই আন্দোলন সংগ্রামে গুম, খুন, হত্যা, জেল, জুলুম, হামলা মামলার শিকার হয়েছেন অসংখ্য মানুষ! লাখো মানুষ জেলে বন্দী। লক্ষ লক্ষ মামলায় জর্জরিত জনতা।
এমনকি আজকে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা, মিছিলেও ছাত্র জনতাকে টিয়ার শেল লাঠিচার্জ এবং বুকে গুলি চালানো হচ্ছে! ক্ষমতায় মোহে এরা ধীরে ধীরে পাক হানাদারদের চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে!
এই অবস্থা চলতে পারে না। এই দেশ কারো বাপ দাদার জমিদারি নয়। জনগণ এই দেশের মালিক। জনগণের ভোটাধিকার, মৌলিক অধিকার সাংবিধানিক অধিকার। এই অধিকার আদায়ে এবং পশ্চিম পাকিস্তানীদের শোষণের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছিল। কারো দাসত্ব করার জন্য নয়। কোনো ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীর উগ্র লালসা বা চাওয়া পাওয়ার জন্য নয়। ধর্তব্য যে হানাদার ইয়াহিয়ার সামরিক শাসনামলেও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ল্যান্ডস্লাইড বিজয় পেয়েছিলেন।
ইয়াহিয়া খান চাইলে ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মত নির্বাচন কি করতে পারতেন না???
আর আজকে এই স্বাধীন দেশে মানুষের মৌলিক অধিকার ভোটাধিকার হরণ করা হয়! তাও আবার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে!
আমরা জানি। ক্ষমতার হাত বদল হতে হবে সুষ্ঠূ নির্বাচনের মাধ্যমে। যথাযথ প্রক্রিয়ায় জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে কোনো ব্যাক্তি বা দল একশো বছর দেশ চালাক তাতে এদেশের জনগণের কোনো আপত্তি থাকবে না। কিন্তু ২০১৪, ২০১৮ সালের মত জালিয়াতির নির্বাচন ও অবৈধ কর্তৃত্ববাদী সরকার গঠন এদেশের মানুষ আর মেনে নিবে না।
বর্তমান সরকার কিভাবে ভাবতে পারে তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব? ইতিহাস কাওকে ক্ষমা করে না। কেবল ১৪ এবং ১৮ সাল নয়। সদ্য অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবং সর্বশেষ ঢাকা ১৭ আসনে নির্বাচনের যে অভিজ্ঞতা তা এই সরকার এবং তার গৃহপালিত সিইসির গ্রহণযোগ্যতাকে পুরোপুরি নস্যাৎ করে দিয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। জনগণ এই সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করে তারা আর ভোটকেন্দ্রে যায় না।
এই সরকারের নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই: আপনারা যা যা করছেন আজকে যদি বিএনপি এইভাবে দেশ চালাতো আর আপনারা বিরোধী বলয়ে থাকতেন তাহলে কি আপনারা বিএনপির অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতেন? অবশ্যই না।
কথায় কথায় সংবিধানের দোহাই দিচ্ছেন। কিন্তু এটা তো আসল সংবিধান নয়। খায়রুল হকের মাধ্যমে আপনারা নিজেদের ইচ্ছামত কাটা ছেড়া করে এই সংবিধানের সার্বজনীন গ্রহনযোগ্যতা বিনষ্ট করেছেন। নিজেদের স্বার্থে সকল রাজনৈতিক দলের বীরোধীতা উপেক্ষা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন। আর খায়রুল হক সাহেব অবসরে গিয়ে এই কলঙ্কজনক রায় দিয়ে গোটা প্রক্রিয়াকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে গেছেন।
সুতরাং দয়া করে আর এই সংবিধানের দোহাই দিবেন না। যদি সংবিধানের কথাই বলেন তাহলে খায়রুল হক পূর্ব সংবিধানের কথা বলতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যেতে হবে। আসুন! দেশ এবং দেশের জনগণের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কার্যকর ভূমিকা পালন করুণ। দেশ ও জাতির কল্যাণে ব্রত হোন।
আ ম ম আরিফ বিল্লাহ
পিএইচডি, সোয়াস, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়
সাবেক চেয়ারম্যান
ফার্সী ও উর্দু বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সাবেক ভিজিটিং প্রফেসর:
জেএনইউ, জিনজু, দক্ষিণ কোরিয়া
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়।