Thursday, November 14, 2024
Homeমতামতআসুন সমাজটাকে বদলে ফেলি

আসুন সমাজটাকে বদলে ফেলি

সলিসিটর বিপ্লব পোদ্দার

হঠাৎ করে হিন্দু আইন সংস্কার করার পক্ষে বিপক্ষে আলোচনার গতি বেশ ভালোই। অনেক দিন আগে এরকম আন্দোলন দেখেছিলাম কিন্তু কোনো কথা বলিনি কারণ আমি খুব অভাগা আমার কোনো বোন বা দিদি নেই। কথা বললে হয়তো বিরোধীরা মনে করতো আমার কোনো বোন বা দিদি নেই বলে শশুর বাড়ির সম্পত্তি পাওয়ার স্বার্থে হিন্দু মেয়েদের অধিকারের পক্ষে কথা বলছি। অনেক দিন পার হওয়ার পর আবার নতুন করে পুরোনো ইসু সামনে এলো, এবার সাহস সঞ্চয় করে লিখতে বসলাম, যা থাকে কপালে।
দুঃখিত নিজের কিছু কথা এখন লিখতে হচ্ছে , তবে আজ আমার মা নেই, যিনি আমার লিখার সত্যতা প্রমান করতে পারতেন। হয়তো আমার শ্রদ্ধেয়া মিনু ফুপি এবং কাকী জানতে পারেন বলে আমি বিশ্বাস করি, কারণ আমার সেই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলি ভিশন মিস করি, পুরো পারাটাই ছিল একটা বাড়ির মতো , তাই ওনারা জানবেন, এটাই স্বাভাবিক। আমি তখন লন্ডনে, ২০০২ সাল হবে, বিভিন্ন কারণে বিয়ে করাটা দরকার হয়ে পড়েছিল , আমার বাবু এবং মা ছিলেন আমার বন্ধুর মতো , অধিকাংশ বিষয় আলাপ করতে পারতাম, আমার মাকে বললাম , মা বিয়ে করবো , মেয়ে দেখো , যদি বিধবা হয় অথবা ডিভোর্সই হয় , আমার কোনো আপত্তি নেই। মা জিজ্ঞেস করলেন , কেন আমি একথা বললাম, আমি উত্তর দিলাম , মা দেশ এবং সমাজ থেকে অনেক পেয়েছি , এবার কিছু দিতে চাই। মা শুনে দ্বিমত করলেন না। তবে আমার বলে রাখা ভালো আমার মায়ের দেখা মেয়েটিকে আমি বিয়ে করেছি , এখন আমি দুই সুসন্তানের বাবা। তবে তিনি আমার দেয়া পসন্দের দুইটার মধ্যে পেলেন না। তখন আমি চিন্তায় পড়লাম , আমি কি স্বার্থবাদী , শুধু কি বলার জন্য বলা ? সুযোগ পেয়ে গেলাম একটা, আমার শশুর সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন, পাসপোর্ট এ আমার বউয়ের পদবি কি লিখবো , আমি সবিনয়ে বললাম , আমার বউ যেনামে বড়ো হয়েছে, সেই নামই থাকবে, এমনকি আমাদের বাড়িতেও এবং আজপর্যন্ত একই নাম রয়েছে। অন্তত একটা স্বাধীনতা দিতে পারলাম মেয়েদেরকে। একটি পুরুষের নাম যদি আগেরটা থাকে, তাহলে নববধূর নাম কেন পরিবর্তন হবে ? আমরা সমাজে অনেক বড়কথা বলি , চায়ের কাপে প্রয়জনে ঝড় তুলি, কিন্তু নিজের বেলায় ষোলোআনা বজায় রাখি, কি অদ্ভুত আমাদের এই সমাজ ব্যবস্থা !
এবার একটু দেখি ততাকথিত আমাদের শ্রদ্ধেয় হিন্দু নেতারা কি বলছেন ,
সংগঠনটির নেতা গোবিন্দ প্রামাণিক বলেছেন, তাদের মধ্যে সংঘাত তৈরির জন্য হিন্দু আইনে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে।
“হিন্দু নারীদের বিয়ের সময়ই পিতার সম্পত্তির বদলে স্বর্ণের অলংকার এবং নগদ অর্থ দেয়া হয়। সেখানে কখনও কোন হিন্দু নারী বা পুরুষ সংস্কার চায়নি,” তিনি দাবি করেন।
এমন দাবির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মি: প্রমাণিক আরও বলেছেন, “কিছু এনজিও এবং কিছু মুসলিম লোকজন এখানে ইন্ধন জুগিয়ে আইনে সংস্কারের বিষয় আনছে।”
আমার প্রশ্ন , আপনার ছেলের বিয়েতে কি খরচ করেন না ? আমার প্রশ্ন ছেলের বিয়েতে ছেলের বৌকে কি স্বর্ণালংকার দিয়ে বরন করেন না ? কঠিন বাস্তবতা হলো ছেলের বিয়েতে বেশি লোককে নিমন্ত্রণ করা হয় , মেয়ের বিয়েতে কম লোক নিমন্ত্রণ করা হয় কারণ মেয়ে বিয়েতে খরচ হওয়ার কারণ দেখিয়ে কিন্তু কঠিন বাস্তবতা হলো খরচ সমান হয়। এরপর দেখাযাক অধিকাংশ হিন্দু পরিবারে মেয়েদের লেখাপড়ার ক্ষেত্রে অনেক কম খরচ করা হয় , কারণ হিসেবে মেয়েতো পরের বাড়ি চলে যাবে , কি অদ্ভুত ঘুনে ধরা সমাজ ব্যবস্থা ! অথচ চেয়ে দেখুন মা-বাবা বৃদ্ধ বয়সে মেয়েদের কাছে বেশি ভরসা এবং আদর যত্ন বেশি পায়।

আমাদের এই আধুনিক যুগে আমরা আমাদের দেশ থেকে বিদেশে পড়তে আসি, বিদেশে দেখা যায়, ছেলে মেয়ে আলাদা কিছু নয়, সব সমান। কিন্তু পড়া শেষ করে দেশে ফিরে শুধু ওয়েস্টার্ন চাল চলন কিন্তু মেয়েদের বেলায় একেবারে পারলে আদিম যুগে চলে যায়। ইটা এক ধরণের হিপোক্রেসি এখনই সময় আইন করে বন্ধ করার। আমি হিন্দু বুঝি না, মুসলিম বুঝি না , তৃতীয় লিঙ্গ বুঝি না, জাত পাত বুঝি না, বুঝি শুধু সব সন্তানের সমান অধিকার , আর যারা মুসলিম আর এনজিওর কথা বলে দৃষ্টি ঘোরাতে চায় , তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। এমনকি অনেক হিন্দুই মনে করেন , ইন্ডিয়া তাদের অনুকরণীয় , তাদের দেশে কিন্তু আজ বিয়ে রেজিস্ট্রি হয় কিংবা ডিভোর্স হয়, মেয়েরা সমান অধিকার ভোগ করে,তাই আমাদের দেশেও সেই অনুকরণীয় বিষয়টা নাহলে বলবৎ করি , কি বলেন বাবু মশাইয়েরা?
শ্রদ্ধেয় আইন মন্ত্রী মহাদয় , আমি আপনার বাবাকে দেখার এবং জানার সুযোগ পেয়েছি। তিনি কিন্তু একজন সাহসী মানুষ ছিলেন , তিনি এরশাদের মামলা পরিচালনা করার জন্য আওয়ামীলীগ এর সভাপতি মণ্ডলী থেকে পদত্যাগ করেছিলেন, কিন্তু আপনি একটি আধুনিক সমাজের অগ্রজ হয়ে হিন্দুদের বিভাজনের কথা বলে , আইন পরিবর্তন কিংবা নতুন করে করতে অজুহাত দিচ্ছেন , অনুরোধ আপনি দেশের প্রধান মন্ত্রীকে দেখুন , তার মেয়েকে কি করে অত্যাচারী জামাইথেকে নিয়ে এসে ছেলে মেয়ে ভেদাভেদ নাকরে সমান মাতৃত্ব পালন করছেন। আজ আপনার বাবাকে আমরা স্মরণ করি , আপনাকেও স্মরণ করতে চাই , সুযোগটা কাজে লাগান।

RELATED ARTICLES

Most Popular