” ভেবেছিলাম অনেকেই হয়ত অনারেবল ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামীজির সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে কূটনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন-ডিকাব এর এক মতবিনিময় সভার বক্তব্য নিয়ে কেউ কেউ হয়ত কিছু লিখবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য সবাই এত ব্যস্ত যে কেউ লেখার সময় পেলেন না। তাই,বাধ্য হয়ে বিবেকের তাড়নায় কিছু লিখছি।
আমি অবশ্যই ধন্যবাদ জানাই হাইকমিশনার সাহেব খোলাখুলি ভাবে অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন তিস্তা চুক্তি না হওয়া নিয়ে। তবে দুঃখজনক এ চুক্তি না হওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে সম্পুর্নভাবে দোষারোপ করা হয়েছে। যেটা,কিছু প্রশ্নের উদ্রেক করে। এবার ধরা যাক কাশ্মিরের সরকারও তো ৩৭০ প্রয়োগ চায়নি,চায়নি সে অঞ্চলের কোন মানুষ এ ধারার ব্যবহার। এমনকি ভারতের বিরোধী দলগুলো প্রতিবাদ জানালেও কেন্দ্রীয় সরকার অনায়াসেই কাশ্মীরের সকল গনতান্ত্রিক প্রতিষ্টানকে রুদ্ধ করে দিয়ে ফারুক আবদুল্লাহ থেকে শুরু করে কিশোর পর্যন্ত,অগনিতভাবে গ্রেফতার করেছে। এবার যদি ফিরে তাকাই আসামের দিকে। সেখানে বিভিন্ন ত্রুটি ধরা পড়লেও এনআরসি কিংবা ভারতের অধিকাংশ মানুষের মতের বাইরে গিয়ে সিএএ পাশ করলেন। আমি লেখার সংক্ষিপ্ততার জন্য আরো বিশদ উদাহরন না দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দিকে যদি তাকাই তাহলে সেখানকার রাজ্যপালের যে ব্যবহার একটি গনতান্ত্রিক রাজ্য সরকারের সাথে কিংবা রাজ্য সরকারের কোন মন্ত্রী,বিধায়ক অথবা তৃনমুলের কোন হেভিওয়েট নেতাকে বিজেপিতে জয়েন করাচ্ছে।
সেখানে হাইকমিশনার সাহেবের এ বক্তব্য অথবা কেন্ত্রীয় সরকারের সদিচ্ছার বিষয়টি আমাদেরকে আশ্বস্ত করতে পারে না। বরং মনে হয় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের মতোই হাইকমিশনার সাহেবের এ বক্তব্য কিছুটা যোগসুত্র মিলে যায়।
এবার আসি ভারতের সাথে বাংলাদেশের মানুষের সম্পর্কের বিষয়ে। আপনার এবিষয়ে দেয়া বক্তব্যকে আমি অত্যন্ত সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এর পুর্বে আপনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে ভারতের সাথে আওয়ামীলীগের ঘনিষ্ট সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছিলেন। আমি এখন দ্বিধাগ্রস্থ আপনার কোন বক্তব্যটি সঠিক। আগের না বর্তমান বক্তব্য। যদি আগের বক্তব্য সঠিক হয় তাহলে বর্তমান বক্তব্যটি অসার এবং অসত্য,প্রমান হবার যথেষ্ট সুযোগ থাকে। আর বর্তমান বক্তব্যটি যদি সত্য হয়,তবে আপনি শুধু আওয়ামীলীগ নয়, বিএনপি সিপিবি এবং সদ্য সাবেক ডাকসু ভিপি নুর সহ সকলের সাথেই বসা উচিত ছিল।
তাই আজ আমার দেশ জানতে চায়,আপনার কোন বক্তব্যটি ভুল। অন্য দেশের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে ভারত শংকিত নয়,এ কথাটিও আমরা গ্রহন করতে পারলাম না। কারন ঠাকুর ঘরে কে রে,আমি কলা খাই না। বাংলাদেশের সাথে কিছু দেশের নতুন সম্পর্ক স্থাপনের পরেই পটভুমির অনেক পরিবর্তন আমরা লক্ষ করছি। যেমন ধরা যাক,কিছুদিন পুর্বেও মানুষের মনে বিশ্বাস ছিল,ভারতীয় হাইকমিশনের আশীবার্দ থাকলে একটি বিশেষ দলের মনোনয়ন পেয়ে এমপি মন্ত্রী হওয়া কিংবা রাষ্ট্রের গুরুত্বপুর্ন পদে অধিষ্টিত হওয়া যায়। আজ কিন্তু সেই বিশ্বাসটা অনেকটাই দুর্বল আমাদের দেশে। আর তাই লক্ষ করা যায়,ভারতের হাইকমিশনার বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের অফিস থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঘন ঘন যাতায়াত করছেন। শেষ ইস্যু সীমান্ত হত্যা নিয়ে হাইকমিশনার সাহেব উল্লেখ করেছেন,দু দেশই নাকি দায়ী। এ ক্ষেত্রে আমার বিনীত জানবার,দুদেশ যদি দায়ী হবে তবে শুধু বাংলাদেশীরা কেন মরছে? দুদেশ যদি দায়ী হবে,তবে কেন কোন ভারতীয় সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হবে না। দুদেশ যদি দায়ী হবে, তকে শুধু বিএসএফ কেন বাংলাদেশীদের পাখিরমতো গুলি করে হত্যা করে, তৈরী করে ফেলানীর মত অসংখ্য ইতিহাস।
আমার দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উক্তিকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই ” আমি যা দিয়েছি ভারত চীরদিন মনে রাখবে” । তাই আমি,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়ার বিনিময়ে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন, সীমান্ত হত্যা বন্ধ সহ দুদেশের সকল দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা ইস্যুগুলোর সমাধান প্রত্যাশা করছি। আমি মুক্ত কন্ঠে ঘোষনা করছি পশ্চিমবঙ্গের জনগন সহ ভারতের জনগনকে আমি বন্ধু ভাবি। আমি ভারতের নীতিতেও আমার দেশের সাথে সাম্যের নীতির প্রত্যাশা করি। যে কোন আগ্রাসী নীতির প্রতিবাদ করে যাবই। যে কোন বাঙালীর বিরুদ্ধে অবিচার পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক তার প্রতিবাদ করবই। এ কথাগুলো একান্তই আমার মনের ভিতরের গভীরে থাকা এবং সত্য উপলব্ধির বহির্প্রকাশ । তাই এ লেখায় কেউ কষ্ট পেলে ক্ষমাপ্রার্থী। তবে প্রতিক্ষায় থাকব,যদি আমার প্রশ্নের উত্তর আমি পাই। ”
লেখকঃ বিপ্লব কুমার পোদ্দার,লন্ডনে বসবাসরত সমাজ ও রাজনৈতিক কর্মী।