Wednesday, December 25, 2024
Homeশিক্ষাঙ্গনপূজামণ্ডপে কুরআন পাওয়া নিয়ে হামলার ঘটনায় ঢাবিতে প্রতিবাদ

পূজামণ্ডপে কুরআন পাওয়া নিয়ে হামলার ঘটনায় ঢাবিতে প্রতিবাদ

নবদূত রিপোর্ট:

কুমিল্লা শহরের একটি পূজামণ্ডপ থেকে কোরআন পাওয়ার জের ধরে বেশ কয়েকটি পূজামণ্ডপে হামলা ও প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনার মৌন প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে দাঁড়িয়ে এ মৌন প্রতিবাদ জানান তারা। মৌন প্রতিবাদে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

‘সাম্প্রদায়িক হামলার দায় কী রাষ্ট্র এড়াতে পারে?’,
‘আমার মন্দিরে হামলা কেন?দেশ ছাড়তে হুমকি কেন? রাষ্ট্র জবাব চাই!’, ‘মানবসেবা যাদের ধর্ম তাদের ওপর হামলা কেন?’, ইত্যাদি প্লেকার্ড প্রদর্শন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানায়।

মৌন প্রতিবাদ শেষে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব সিরাজী বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করে এবং যুগ যুগ ধরে একসাথে বসবাস করে আসছি। দুঃখজনকভাবে এবার দেশের কিছু কিছু জায়গায় এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবে প্রতিমা ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটেছে। তারই প্রতিবাদে আজ আমরা মৌন প্রতিবাদের আয়োজন করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কখনোই সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী নয়। আমরা প্রত্যাশা করি অচিরেই যারা এসব কর্মকান্ডে লিপ্ত আছে তাদের আইনের আওতায় আনা হয় এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়।

নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া আঁখি বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী। গতকাল কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেওয়া হয়েছে তারই প্রতিবাদে আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি। যারা এর সাথে জড়িত তাদের সকলের বিচার দাবি করছি এবং একইসঙ্গে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে এমন ঘটনা আর ঘটবে না বলে প্রত্যাশা করি।

এদিকে একই ঘটনার প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ ব্যানারে একদল লেখক, প্রকাশক, সাংবাদিক ও বিভিন্ন বাম দলের নেতাকর্মী। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশ করেন তারা।

সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শরিফুজ্জামান শরিফ বলেন, এই ঘটনাগুলি কেন হচ্ছে? এর কারণ হলো, আমরা কিছু হলে, এর সমস্ত দায়ভার  বিএনপির উপর চাপাবো, জামাতের উপর চাপাবো। আজকে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একেবারে গবেষকের মত বলেছেন, কুমিল্লার ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে। আপনারা আজকে এই অপরাধীদের ধরতে পারছেন না। বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে ফেসবুকে একটা পোস্ট দেয়ার কারণে বাংলাদেশে বহু মানুষ গ্রেফতার হয়।  কিন্তু আপনি ইন্টারনেটে যান, বহু লিঙ্ক ব্যবহার করে উসকানি দেয়া হচ্ছে। আমাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কোথায়, মন্ত্রীরা কোথায়। আমাদের বিটিআরসি কোথায়। 

তিনি বলেন, আজকে যদি বাংলাদেশে হিন্দুদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয় তাহলে মনে রাখবেন সীমানার ওপাড়ে যে মুসলিমরাও বিপন্ন হতে পারে। 

বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সভাপতি হাফিজ আদনান জিহাদ বলেন, কুমিল্লায় যখন পরিস্থিতি একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে তখন পুলিশ ভূমিকা নেয়া শুরু করেছে। তার আগ পর্যন্ত সেখানে কোন জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই। বাংলাদেশে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে এর পিছনে কারণ কি?  এর কারণ হচ্ছে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে এই সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে আশ্রয় দেয়া হচ্ছে।

সমাবেশে অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন
আকরামুল হক, রবিন আহসান, খান আসাদুজ্জামান মাসুম, জমসেদ আনোয়ার তপন প্রমূখ।

কি হয়েছিল কুমিল্লার সেই মন্দিরে:

জেলা প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তার সূত্র জানা যায়, মঙ্গলবার খুব ভোরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর আসে যে নানুয়ারদীঘির পূজামণ্ডপের ভেতরে প্রতিমার পায়ের উপর একটি কোরআন রাখা আছে।

খবর পেয়েই জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। পরে পুলিশ সেখান থেকে কোরআন নিয়ে আসেন।

এদিকে সকাল দশটা নাগাদ একটি ছবি ব্যাপক ভাবে সামাজিক মাধ্যমে ছড়াতে থাকে যেখানে দেখা যায় প্রতিমার হাঁটুর উপর কোরআন। বিষয়টি নিয়ে মুসলিম ধর্মাবলম্বী অনেকই সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। অনেকে এটি দিয়ে নানা ধরণের লাইভ বক্তব্য দিয়ে কোরআন অবমাননার অভিযোগ করতে থাকেন।

এদিকে উত্তেজনার জের ধরে কুমিল্লা, ঢাকা বিভাগের নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জসহ ২২টি জেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া সেখানে কী ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

RELATED ARTICLES

Most Popular