Thursday, December 26, 2024
Homeসারাদেশমহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৮ তম জন্মদিন আজ

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৮ তম জন্মদিন আজ

নবদূত রিপোর্টঃ

আজ (২৫ জানুয়ারি) অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবক্তা আধুনিক বাংলা সাহিত্যের মহানায়ক মহাকবি মাইকেল মধূসূদন দত্তের ১৯৮তম জন্মদিন। প্রতিবছর ঘটাকরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সপ্তাহ ব্যাপী অনুষ্ঠিত হত মধু জন্মজয়ন্তী।

করোনা ভাইরাসের কারণে এবারও কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সাগরদাঁড়িতে মধুমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।

আজ (২৫ জানুয়ারি) মঙ্গলবার মহাকবির জীবনীর উপর ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে আলোচনা করবেন, যশোর জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।

এছাড়াও কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অপর্ণ করা হবে।
ঐতিহ্যবাহী যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি জন্ম গ্রহন করেছিলেন বাংলা সাহিত্যের মহাপুরুষ, অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক আধুনিক বাংলা কাব্যের রূপকার মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

সাগরদাঁড়ি গ্রামের জমিদার বাবা রাজনারায়ন দত্ত ও মাতা জাহ্নবী দেবীর কোল আলোকিত করে বাঙ্গালীর প্রিয় এ কবি জন্ম গ্রহণ করেন। শৈশবে নিজ গ্রামের মাওলানা লুৎফর রহমানের কাছে শিশু মধুসূদন শিক্ষা জীবন শুরু করেন। প্রাথমিক শিক্ষা তার মা জাহ্নবী দেবীর কাছ থেকেই শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আরও বিদ্যার্জন করেছেন কলকাতার লালবাজার গ্রামার স্কুল, হিন্দু কলেজ ও বিশপস কলেজে। লন্ডনের বিশ্ববিদ্যালয় গ্রেজ ইন থেকে ব্যারাস্টারী শিক্ষা সমাপ্ত করেন। মধুসূদন হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে বিলেত যাবার বাসনায় খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন।

১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে ধর্মান্তরের পর শ্রী মধুসূদন দত্তের আগে মাইকেল পদবী যোগ হয়ে তিনি হন মাইকেল মধুসূদন।
মাত্র নয় বছর বয়সে মধুসূদন সাগরদাঁড়ী ছেড়েছেন। তার পরে দুএকবার এসেছেন। কিন্তু তাঁর জন্মভূমিকে কখনও ভোলেন নি। তাঁর রচনায় বারবার ফিরে এসেছে সাগরদাঁড়ীর প্রকৃতি ও অনুষঙ্গ। প্রবাস জীবনে সুদূর ভার্সাই নগরীতে বসেও বাড়ীর পাশ দিয়ে প্রবাহিত কপোতাক্ষ নদকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন।

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলা রেনেসাঁসের অন্যতম প্রাণপুরুষ, বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার অগ্রদূত। যার জন্মভূমি কপোতাক্ষ নদের তীরের সাগরদাঁড়ী আজ বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত গ্রাম। মধুভক্ত মানুষের কাছে এ এক তীর্থভূমি।
জমিদার পুত্র হয়েও অগোছালো জীবন যাপনের কারণে তিনি যেমন চরম দুঃখ দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করেছেন; তেমনি বাংলা সাহিত্যে আধুনিক কাব্য, নাটক রচনা করে খ্যাতির শিখরে উঠেছেন। তাঁর ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ বাঙালির প্রথম সার্থক মহাকাব্য। যার গ্রহণযোগ্যতা আজও হয়নি। মধুসূদন বাংলা সাহিত্যে প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দের স্রষ্টা। সর্বপ্রথম সার্থক নাটক, প্রহসন রচয়িতা। প্রথম পত্রকাব্যকার। প্রথম সার্থক ছান্দনিক কবি। তিনি বাংলাসহ বারোটি ভাষায় লিখতে ও পড়তে পারতেন।

তিনিই আমাদের প্রথম বহুভাষাবিদ পন্ডিত কবি। প্রথমে বাংলা ভাষাকে অবজ্ঞা করে ইংরেজি ভাষায় কাব্যচর্চা করতেন। ইংরেজি ভাষায় তাঁর প্রথম কাব্য ‘ঞযব ঈধঢ়ঃরাব খবধফর’। পরে তাঁর মোহভঙ্গ হয়। এই সময়ে তিনি রচনা করেন ‘শর্ম্মিষ্ঠা নাটক’, ‘পদ্মাবতী নাটক’, ‘কৃষ্ণকুমারী নাটক’ নাটক ‘মায়াকানন’; প্রহসন ‘একেই কি বলে সভ্যতা?’; ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ’। কাব্য ‘তিলোত্তমা সম্ভব কাব্য’, ‘মেঘনাদবধ কাব্য’, ‘ব্রজাঙ্গনা কাব্য’, ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’, ‘চতুর্দ্দদশপদী কবিতাবলি’ উল্লেখ যোগ্য। আরও কিছু কাব্য ও নাটক অসমাপ্ত অবস্থায় আছে।
তিনি ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জুন কলকাতার একটি হাসপাতালে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, মহাকবির জীবনীর উপর ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে আলোচনা করবেন, যশোর জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। এছাড়াও কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অপর্ণ করা হবে। করোনা ভাইরাসের কারণে এবারও কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সাগরদাঁড়িতে মধুমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।

বিলাল হোসেন মাহিনী
যশোর

RELATED ARTICLES

Most Popular