Friday, November 15, 2024
Homeরাজনীতিগণফোরাম থেকে গনঅধিকার পরিষদ রেজা কিবরিয়া থামবেন কোথায়?

গণফোরাম থেকে গনঅধিকার পরিষদ রেজা কিবরিয়া থামবেন কোথায়?

অনেকেই এখন প্রশ্ন তুলেছেন ড. রেজা কিবরিয়া থামবেন কোথায়? আওয়ামী লীগ থেকে গণফোরামে যোগদান, গন ফোরাম থেকে বের হয়ে গন অধিকার পরিষদে যোগদান। এখন গন অধিকার পরিষদ থেকে ছিটকে পড়ে কোন রাজনৈতিক দলে যুক্ত হবেন ড. রেজা কিবরিয়া?

গনঅধিকার পরিষদের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতার সাথে কথা হলে তারা জানান, গণঅধিকার পরিষদের মতো একটা সম্ভাবনাময় দলের আহ্বায়ক হয়েও তিনি ঐভাবে দলের মিটিং-মিছিল,কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকায় উপস্থিত থাকতেন না। আমরা এই বিষয়ে অনেকবার ড. রেজা কিবরিয়াকে প্রশ্ন করেছিলাম যে, তিনি কি কারনে অনুপস্থিত থাকছেন, কিন্তু তিনি কোন সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা বা উওর দেননি।

তাছাড়া তিনি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্টদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন, যাতে করে বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে নির্বাচন করা সম্ভব হয়। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ , বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আরেক নেতা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উকিল আব্দুস সাত্তার এমপি সহ অনেক বহিষ্কৃত বিএনপি, জামায়াতের নেতাদের সাথে নিয়ে বিএনপির সাবেক যোগাযোগ ও তথ্যমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার ২০১৫ সালের ২০ নভেম্বর তৃণমূল বিএনপি নামে যে দলটি গঠন করে সেই দল সহ জাতীয় ইনসাফে কায়েমকে নিয়ে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পরিকল্পনা করেন।

গণধিকার পরিষদের আরো বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেছেন, গতকাল ১৯/০৬/২০২৩ ইং তারিখে গনঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পূর্বনির্ধারিত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় সাংগঠনিক আলোচনা ছাড়াও গন অধিকার পরিষদের আহবায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। উপস্থিত গনঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সকল সদস্যদের মতামত ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুশৃঙ্খলভাবে দলের নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার নিমিওে ১ নং যুগ্ম আহ্বায়ক মো: রাশেদ খাঁনকে সর্বসম্মতিক্রমে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হিসেবে মনোনীত করা হয়।

আর এই ঘোষণা আসার থেকেই ড. রেজা কিবরিয়া নূরের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার করতে শুরু করেছেন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও গনমাধ্যমে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটা খুবই কমন ঘটনা। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন করে তাকে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা করা। আরো দুঃখজনক হলেও সত্যি নূরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো তার আগে সরকার ও সরকারি মিডিয়ার তরফে বারবার তদন্ত হয়েছে, কিন্তু ভিপি নুরের উপর যে অভিযোগ ছিল তা মিডিয়া ও সরকার প্রমান করতে ব্যর্থ হয়েছিল।

তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীদের প্রশ্ন যদি ভিপি নূরের বিরুদ্ধে কোন নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকতো, তাহলে ড. রেজা কিবরিয়া কেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহীর কমিটির মিটিং এ আলোচনা করলেন না, তাহলে সাংগঠনিক ভাবে সমস্যা সমাধান কার যেত কিন্তু তিনি তা না করে এই বিষয়গুলোকে কেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে প্রকাশ করলেন। তাছাড়া তিনি যে কথা গুলো মিডিয়াতে ছড়াচ্ছেন তৃণমূলের কর্মীরা মনে করে ভিপি নুরের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং গন অধিকার পরিষদকে বিতর্কত করার উদ্দেশ্যে তিনি এই কার্যক্রমগুলো করছেন। তাতেই বুঝা যায় তিনি সুস্পষ্টভাবে এই দলের মধ্যে বিভাজন এবং এই দলকে বিতর্কিত করতে চাচ্ছেন।

সম্প্রতি ড. রেজা কিবরিয়া জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির এক সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। এর পরই এ বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদে সমালোচনা তৈরি হয়। রোববার রাতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে রেজা কিবরিয়ার কাছে ইনসাফ কায়েম কমিটির সমাবেশে থাকা নিয়ে জানতে চাওয়া হয়।

সম্প্রতি বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদের নেতৃত্বে সংগঠনটির সব কর্মসূচিতে রেজা কিবরিয়া অংশগ্রহণ করেছেন। এ নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বিএনপির এক ধরনের ভুল বোঝাবুঝি ও দূরত্ব তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

ভিপি নুর জানান, তারা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। 

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বিএনপিকে বিভক্ত করার উদ্দেশ্যে বিএনপির বহিষ্কৃত ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদকে দিয়ে ইনসাফ কায়েম কমিটিকে মাঠে নামিয়েছে। এর উদ্দেশ্য শওকত মাহমুদকে দিয়ে বিএনপিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উকিল আবদুস সাত্তারের মতো লোক তৈরি করা। আমাদের দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ওই ইনসাফ কায়েম কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এবং ইনসাফ কায়েম কমিটির সভায় অংশগ্রহণ করেছেন। আমরা বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে আছি। তাই বিএনপির একজন বহিষ্কৃত নেতার কমিটির সভায় আমাদের আহ্বায়ক উপস্থিত থাকবেন– এটা অপ্রত্যাশিত।

অন্যদিকে রেজা কিবরিয়া বলেন, বিদেশ থেকে যে টাকা-পয়সা আসে সেটার কোনো হিসাব দিতে রাজি নন নুর। এখানে অনেক টাকা আসে। প্রবাসীদের কমিটিতে নিজেকে তিনি প্রধান উপদেষ্টা বানিয়েছেন। সেখানে দলের আর কাউকে রাখেননি। প্রবাসীদের পুরো টাকা তিনি নিজেই রাখেন বলে অভিযোগ তুলেন ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে।

ঢাকা পোষ্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রেজা কিবরিয়া আরো বলেন আমার সন্দেহ তিনি সরকারি দলের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে দলে একটা ভাঙন তৈরি করার জন্য কাজ করছেন। আমি তাকে সন্দেহ করি, তিনি সরকারি এজেন্ট হতে পারেন! যদিও আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই।

গন অধিকার পরিষদের বর্তমান এই রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক সালাউদ্দিন নেওয়াজকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন ড. রেজা কিবরিয়া দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি এই প্রথম নয়, তিনি বলেন আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এস এম কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণফোরামে যোগ দেন। হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে রেজা কিবরিয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে নির্বাচনও করেন। ২০১৯ সালে গণফোরামের কাউন্সিলের পর ৫ মে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দলের সভাপতি ড. কামাল রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদকের পদে বসান। এরপর থেকে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুসহ দলের কিছু জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে রেজা কিবরিয়ার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। একপর্যায়ে দলে দুটি ভাগ হয়ে পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার চলে। তিনি আরো বলেন ড. কামাল হোসেনের ২৬ বছরের গণফোরাম ভেঙেছে ড. রেজা কিবরিয়া বিশৃঙ্খলা ও একক আধিপত্য বিস্তার করার কারনে।

তিনি আরো বলেন ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় গন ফোরামের বেশ কিছু ভুল সিদ্ধান্ত ড. রেজা কিবরিয়া মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় যার ফলে বিএনপি সহ পুরো জোট নির্বাচনে বড় ধরনের পরাজয় বরণ করে।

অনেকেই এখন প্রশ্ন তুলেছেন ড. রেজা কিবরিয়া থামবেন কোথায়? আওয়ামী লীগ থেকে গণফোরামে যোগদান, গন ফোরাম থেকে বের হয়ে গন অধিকার পরিষদে নতুন করে যোগদান। এখন গন অধিকার পরিষদ থেকে বের হয়ে কোন রাজনৈতিক দলে যুক্ত হবেন ড. রেজা কিবরিয়া?

RELATED ARTICLES

Most Popular