কুরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঈমানি দায়িত্ব / বিলাল হোসেন মাহিনী
‘পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ’ এটা আমরা সবাই জানি। আল্লাহ তায়ালা নিজেও পবিত্রতা পছন্দ করেন। আসছে ঈদুল আযহায় আমরা লক্ষ লক্ষ পশু আল্লাহর রাহে কুরবানি করি। ত্যাগের শিক্ষা আসে কুরবানি থেকে। কুরবানির পর সমান্য পরিশ্রমে আমরা চাইলে কুরবানি পশুর রক্ত-বর্জ্য পরিষ্কার করে পরিবেশ দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে পারি। আমাদের এই সামন্য ত্যাগের অভাবে কুরবানি পরবর্তী সময়ে ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কুরবানির পশুর রক্ত, মজ্জা, হাড়গোড় আর বিষ্ঠায় কোনো কোনো এলাকা ভাগাড়ে পরিণত হয়। দুর্গন্ধে ঈদের আনন্দটাই যেন ম্লান হয়ে যায়। কুরবানির পশুর বর্জ্য সময়মতো অপসারণ না করাই এর মূল কারণ। তাই আসুন ঈমানি দায়িত্ব মনে করে কুরবানির বর্জ্য পরিষ্কারের ব্যাপারে অবহেলা না করি। মনে রাখতে হবে বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব শুধু পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের কাজ নয়। বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব প্রথমত কুরবানি দাতার। যথাসময়ে বর্জ্য অপসারণে অবহেলা করায় তা প্রতিবেশী, আশপাশের মানুষের কষ্টের কারণ হলে এর দায় কুরবানিদাতাকেই নিতে হবে। যত্রযত্র কুরবানির বর্জ্য ফেলে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়ার অধিকার ইসলাম কাউকেই দেয়নি। এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যার কষ্ট থেকে আশপাশের মানুষেরা নিরাপদ নয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সহিহ বুখারি: ৫/২২৪০)
অন্যদিকে, বর্জ্য অপসারণের মাধ্যমে জনসাধারণকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকলে জান্নাতের মতো মহান পুরস্কার পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,‘যে ব্যক্তি হালাল খাদ্য খেয়ে জীবনযাপন করবে, সুন্নত অনুসারে আমল করবে এবং কোনো মানুষ তার দ্বারা কষ্ট না পায়- সে জান্নাতি হবে’। (তিরমিজি: ৪/৬৬৯)
মনে রাখতে হবে, কুরবানির আসল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর নিকট তোমাদের কুরবানির জন্তুর রক্ত-মাংস কোনো কিছুই পৌঁছায় না, তাঁর নিকট পৌঁছে শুধু তোমাদের অন্তরের তাকওয়া।’ (সুরা আল-হজ : ৩৭) সুতরাং যে কুরবানি জীবন, সমাজ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে, তা কখনো আল্লাহর উদ্দেশে নিবেদিত হতে পারে না। তাছাড়া হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, কুরবানির পশুর রক্ত, বর্জ্য পরিষ্কার করা ইমানের দাবি। তা ছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে জান্নাতে যাওয়াও সম্ভব নয়। ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যথাসাধ্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকো। কেননা, আল্লাহতায়ালা ইসলামকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি ছাড়া কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (জামে সাগির, হাদিস : ৩০১)
আমাদের করণীয় : ক. কুরবানির পশু জবাইয়ের জন্য বসতবাড়ি থেকে সম্ভাব্য দূরবর্তী কোনো পরিষ্কার স্থান বেছে নিতে হবে। খ. এমনভাবে জবাই করতে হবে যেন পশুর রক্ত গর্তেই জমা হয়, চতুর্দিকে ছড়িয়ে না পড়ে। গ. জবাইয়ের পরে গর্তটা মাটি দিয়ে এমনভাবে ঢেকে দিতে হবে যেন রক্ত-পচা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে না পড়ে। ঘ. পশুর সব বর্জ্য বড় আকারের গর্ত করে তার মধ্যে রেখে মাটিচাপা দিতে হবে। ঙ. চামড়া ছাড়ানো ও মাংস সংগ্রহের পরে ওই জায়গাটা উত্তমরূপে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং যথেষ্ট পরিমাণ ব্লিচিং পাউডার সেখানে ছিটিয়ে দিতে হবে, যাতে জনদুর্ভোগের কারণ না হয়।
বিলাল হোসেন মাহিনী, পরীক্ষক-ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ও প্রভাষক- গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা, যশোর।