শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রসঙ্গে কিছু কথা
বিলাল হোসেন মাহিনী
বিলাল হোসেন মাহিনী
বর্তমান সরকার ও সরকারি দল নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি দাবি করে, কিন্তু শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, সঠিক মুক্তিযোদ্ধার তালিকা ও স্বাধীনতা বিরোধীদের (রাজাকারদের) তালিকা করতে পারেনি আজও। শুধু তাই নয়, পরপর তিন দফায় ক্ষমতার মসনদে থাকলেও স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতেও পারেনি সরকার। কিন্তু কেনো?
২০২১ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ বুদ্ধিজীবীদের নামের চূড়ান্ত একটি তালিকা প্রকাশ করে সরকার। তখন প্রথম পর্যায়ে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ১৯১ জন শহিদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশের এই তথ্য প্রদান করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সেই তালিকার শীর্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় চার নেতাকে স্থান দেওয়া হয়।
কিন্তু, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও আলোর মুখ দেখেনি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা। কিন্তু, কেনো? কেনো আজও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করা হলো না? এই প্রশ্ন স্বজনহারা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের। উল্লেখ্য, গত ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের নাম প্রকাশিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এক সংবাদ সম্মেলনে এই তালিকার বিষয়ে বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ের তালিকা প্রকাশ করা হলো। পরে ক্রমান্বয়ে আরো তালিকা প্রকাশ করা হবে। (বিবিসি নিউজ, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯) উক্ত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জানান, মুক্তিযোদ্ধাদেরও একটি আনুষ্ঠানিক তালিকা প্রকাশ করা হবে। এই তালিকাটি প্রকাশ করা হবে আগামি বছরের ২৬শে মার্চ।
কিন্তু, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করলাম, সরকার মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারের তালিকা (কম-বেশি) প্রকাশ করলেও পর্দার অন্তরালে থেকে যায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা। সর্বশেষ, চলতি বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রী জানান, সারা দেশে রাজাকারের তালিকা ২০২৪ সালের মার্চে প্রকাশ করা হবে। এবারও মন্ত্রী মহোদয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধদের তালিকা প্রকাশের বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন। কিন্তু কেনো? এখনো বাংলাদেশে ৭০-৮০ বছর বয়সের বহু মানুষ জীবিত আছেন। রয়েছেন রণাঙ্গনের অসংখ্য জীবিত বীরযোদ্ধা। তাঁদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে এখনো শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা সম্ভব বলে মনে করেন সচেতন নাগরিকগণ।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা না থাকায়, তাঁদের সন্তান, স্ত্রী, পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। বঞ্চিত হচ্ছেন সরকারি ভাতা থেকে। খোঁজ নিয়ে দেখা যাবে, এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধা নিয়মিত ভাতা তুলছেন, যারা শুধু যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, কিন্তু নানা কারণে যুদ্ধে অংশ নিতে পারেন নি। আবার এমন অনেকে আছেন যাদের জন্ম একাত্তরের পর! মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২০১৮ সালের পরিপত্র অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধার (গেজেটভুক্ত) বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাস ছিল, তাঁদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। সে হিসাবে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার ন্যূনতম বয়স হবে সাড়ে ৬১ বছর। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য অনুযায়ী, ভাতাপ্রাপ্ত প্রায় দুই হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার বয়স ৫০-এর নিচে। এমন তথ্য উঠে এসেছে ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায়। আর ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা তো আছে! তাদের সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। তাহলে, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হবে না কেনো? তাদের স্ত্রী-সন্তানগণ সরকারি ভাতা বঞ্চিত হবে কেনো?
শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা না থাকায়, তাঁদের সন্তান, স্ত্রী, পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। বঞ্চিত হচ্ছেন সরকারি ভাতা থেকে। খোঁজ নিয়ে দেখা যাবে, এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধা নিয়মিত ভাতা তুলছেন, যারা শুধু যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, কিন্তু নানা কারণে যুদ্ধে অংশ নিতে পারেন নি। আবার এমন অনেকে আছেন যাদের জন্ম একাত্তরের পর! মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২০১৮ সালের পরিপত্র অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধার (গেজেটভুক্ত) বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাস ছিল, তাঁদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। সে হিসাবে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার ন্যূনতম বয়স হবে সাড়ে ৬১ বছর। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য অনুযায়ী, ভাতাপ্রাপ্ত প্রায় দুই হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার বয়স ৫০-এর নিচে। এমন তথ্য উঠে এসেছে ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায়। আর ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা তো আছে! তাদের সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। তাহলে, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হবে না কেনো? তাদের স্ত্রী-সন্তানগণ সরকারি ভাতা বঞ্চিত হবে কেনো?
অন্যদিকে, বর্তমান সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে অনেক মন্ত্রী-এমপি স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা জানিয়েছিলেন বিগত এক যুগ আগে। ২০১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।’ এরপর দশ বছর পেরিয়ে গেলো, স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারিনি সরকার। কেনো তাদের নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না, বা নিষিদ্ধের জন্য আইন করা হচ্ছে না? প্রশ্ন স্বাধীনতা প্রজন্মের। চলতি সরকারসহ বিগত দুটি সরকার চাইলেই স্বাধীনতা বিরোধীদের নিষিদ্ধ করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে কী উদ্দেশ্যে তাদের জিইয়ে রাখা হলো, এর সদুত্তর দেবেন কে? তবে কি রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য তাদের সভা-সমাবেশের বৈধতা ও নিষিদ্ধে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে?
বিলাল হোসেন মাহিনী,
নির্বাহী সম্পাদক : ভৈরব সংস্কৃতি কেন্দ্র, যশোর।
নির্বাহী সম্পাদক : ভৈরব সংস্কৃতি কেন্দ্র, যশোর।