ইবাদত কবুল হবে যে সকল মৌলিক শর্তে
বিলাল হোসেন মাহিনী
মহান আল্লাহর আদেশ মান্য করা ও নিষেধ থেকে নিজেকে দূরে রাখার নামই ‘ইবাদত’। তবে সে ইবাদত হতে হবে খালেস নিয়্যতে আল্লাহর রাসূলের (সা.) দেখানো পদ্ধতিতে। তবেই তা আল্লাহর নিকট কবুলযোগ্য হবে। (ইন-শা-আল্লাহ)। নেক আমলের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতে মহান আল্লাহর সাহায্য ও রহমত পাওয়া যেতে পারে। তবে মানুষের ভালো কাজগুলো নেক আমল (ইবাদত) হিসেবে গণ্য হওয়ার জন্য কিছু মৌলিক শর্ত রয়েছে। নিম্নে তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো :
(এক) ঈমান ও ইসলাম : আল্লাহর ইবাদত কবুলের প্রথম মৌলিক শর্ত হলো- বিশুদ্ধ ঈমান ও ইসলামের পূর্ণ অনুসরণ। মহান আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষী দেওয়া এবং মহানবী (সা.)-কে মহান আল্লাহর বান্দা ও রাসুল হিসেবে বিশ্বাস করা। যাদের আল্লাহ, রাসুল (সা) তথা ইসলামের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস নেই, পরকালে তাদের ভালো কাজের কোনো মূল্য নেই। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর যারা কুফরি করে, তাদের আমলসমূহ বালুময় মরুভূমির মরীচিকার মতো, পিপাসার্ত ব্যক্তি যাকে পানি মনে করে। অবশেষে যখন সে তার নিকট আসে, তখন সে দেখে সেটা কিছুই নয়। সে সেখানে পায় আল্লাহকে। অতঃপর আল্লাহ তার হিসাব পরিপূর্ণ করে দেন। আর আল্লাহ অতি দ্রুত হিসাব গ্রহণ করে থাকে। (সুরা নুর, আয়াত : ৩৯)
এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, ইবাদত কবুল হতে হলে অবশ্যই ইসলামের প্রতিটি ভিত্তির উপর পূর্ণ বিশ্বাস থাকতে হবে। যে ঈমানদার ভালো কাজে আত্মনিয়োগ করবে, পবিত্র কোরআনে তার জন্য সুসংবাদ রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদের উত্তম প্রতিদান দেব।’ (সুরা নাহাল, আয়াত : ৯৭)
(দুই) খুলুসিয়াত বা ইখলাস : ইবাদত কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো, নিঃশর্ত খুলুসিয়াত। ইখলাস (একনিষ্ঠতা ও একাগ্রতা) না থাকলে সেই আমল মূল্যহীন হয়ে পড়ে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, আমি তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমার কাছে ওহি প্রেরিত হয়েছে যে, তোমাদের মা’বুদ এক, সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেনো সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে। (সুরা কাহফ, আয়াত : ১১০)
(তিন) ইবাদতে রাসুলের সুন্নতের অনুসরণ : ইবাদতে অবশ্যই নবীজি (সা.)-এর সুন্নতের অনুসরণ করতে হবে। নবীজি (সা.)-এর সুন্নতের পরিপন্থী কোনো পদ্ধতিতে আমল করার কোনো সুযোগ নেই। পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে সতর্ক করতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘রাসুল তোমাদের জন্য যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করো, আর তোমাদের যা থেকে নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাকো, আল্লাহকে ভয় করো, আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা।’ (সুরা হাশর, আয়াত : ৭)
অতএব কোনো মুমিন যদি চায় যে তার আমলগুলো মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হোক, দুনিয়া-আখিরাতে কল্যাণ ও মুক্তির উসিলা হোক, তাহলে অবশ্যই আমলে নবীজি (সা.)-এর অনুসরণ করতে হবে। এ বিষয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে (ব্যক্তি) এমন ইবাদাত করলো, যাতে আমাদেও (দ্বীনের) কোনো নির্দেশনা নেই, তা পরিত্যাজ্য হিসাবে গণ্য হবে। ’ (সহীহ মুসলিম : ৪৫৯০)
(চার) শিরক মুক্ত জীবন-যাপন : মহান আল্লাহর সাথে বা তার কোনো সিফাতের সাথে কাউকে বা কোনো শক্তিকে অংশিদার করলে সকল ভাল আমল (ইবাদত) নষ্ট হয়ে যায়। তাই ইবাদতে কবুল করাতে চাইলে, কোনো প্রকার শিরকের সাথে সম্পৃক্ত থাকা যাবে না। শিরকের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আমল কবুল হয় না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরিক স্থির করেন, তবে আপনার আমল নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। ” (সূরা জুমার, আয়াত : ৬৫)
(পাঁচ) হালাল উপার্জন করা : ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য হালাল উপার্জন অন্যতম পূর্বশর্ত। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র। তিনি শুধু পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন।’ আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ তোমরা পবিত্র বস্তু-সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুজি হিসেবে দান করেছি।’ (সহীহ মুসলিম : ২৩৯৩)
বিলাল হোসেন মাহিনী
পরীক্ষক : ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ও প্রভাষক : গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা, অভয়নগর, যশোর।