Friday, November 15, 2024
Homeআন্তর্জাতিকলন্ডনে নাগরিক সংবর্ধনায় সিক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

লন্ডনে নাগরিক সংবর্ধনায় সিক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

রাশেদুল হক রিয়াদ (সম্পাদক নবদূত নিউজ চ্যানেল)

বাংলাদেশে গণতন্ত্র অব্যাহত রাখতে সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অগ্নিসন্ত্রাসের কথা জনগণ ভুলেনি। আন্দোলনের নামে জনগণের ওপর অত্যাচার করলে কোনো ছাড় নেই। জনগণ কোনো অগ্নিসন্ত্রাসীকে আর ছাড় দেবে না। ২ সেপ্টেম্বর সোমবার লন্ডনের স্থানীয় সময় বিকালে সেন্ট্রাল লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার এলাকার ম্যাথডিস্ট চার্চ হলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন, সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, সিলেট সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তাছাড়া উপস্থিত ছিলেন অনেক শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তিত্ব।

নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থান: মেথডিস্ট সেন্ট্রাল হল ওয়েস্টমিনস্টার লন্ডন। ছবি: সাংবাদিক রাশেদুল হক রিয়াদ

সংবর্ধনা সভায় যোগ দিতে আগে থেকেই জড়ো হতে শুরু করেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। লন্ডনের বাইরের দূর-দূরান্তের শহর ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকেও এই সভায় যোগ দিতে আসেন অনেকে।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে প্রচুর অর্থ সম্পদ বানিয়েছে। জনগণ কিছু না পেলেও তারা মানিলন্ডারিং করে প্রচুর টাকা বিদেশে পাচার করেছে। তাদের কারণেই দেশে ইমার্জেন্সি হলো। আমাকেই প্রথম জেল খাটতে হলো। তারা আন্দোলন করুক, আমাদের কোনো আপত্তি নেই।


দেশের মানুষকে হত্যা আর দেশের সম্পদ ধ্বংস করাই বিএনপির আন্দোলনের লক্ষ্য, তিনি আরও বলেন, জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। আন্দোলনের নামে তারা যদি দেশের মানুষকে আবার অত্যাচার করতে চায় তাহলে তাদের কোনো ছাড় নেই।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে, আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের অগ্নিসংযোগ ও নৃশংসতা হলে, সহনশীলতা দেখানো হবে না।” সোমবার (২ অক্টোবর) লন্ডনে, তার সম্মানে আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। 

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আরো বলেন “বিএনপি-জামায়াত জোট তথাকথিত আন্দোলনের নামে ২০১৩-২০১৪ সালে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা, সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস, বাস, ট্রেন ও লঞ্চ-সহ যানবাহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে, দেশজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিলো।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিকবৃন্দ

শেখ হাসিনা বলেন, “অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নারীসহ অনেকে গুরুতর দগ্ধ হয়েছেন এবং তারা তাদের আঘাত নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষ হত্যা এবং দেশের সম্পদ ধ্বংস করাই তাদের আন্দোলন।” তিনি আরো বলেন, “এর আগে তারা ২৯ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জীবন নিয়ে এমন কোনো চেষ্টা করা হলে কোনো ক্ষমা করা হবে না।”

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ধোঁকাবাজি করেছিলো। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি একটি প্রহসনমূলক নির্বাচন করে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মধ্যেই দেশের জনগণ তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে।”

শেখ হাসিনা আরো বলেন, “দেশের জনগণ কখনোই ভোট কারচুপিকারীদের ক্ষমতায় বসতে দেয় না। বিএনপি-জামায়াত জোট ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার নিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করেছিলো এবং সেই তালিকা দিয়ে নির্বাচন করার চেষ্টা করেছিলো।”

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “বরং, জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই জীবন উৎসর্গ করেছেন।”

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফের সাথে যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা

যে কোনো মূল্যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জনগণ যাদের ভোট দেবে তারাই সরকার গঠণ করবে।

এর আগে গতকাল তার অবস্থানস্থল লন্ডনের তাজ হোটেলে সাক্ষাৎকালে যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশবিষয়ক সর্বদলীয় সংসদীয় দলের সদস্যরা (এপিপিজি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এপিপিজি প্রতিনিধিদলকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনো মূল্যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র অব্যাহত রাখতে হবে। আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে। কোনোভাবেই অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতা দখল করতে পারবে না।
বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গাবিষয়ক এপিপিজির চেয়ার এবং বিনিয়োগ ও ক্ষুদ্র ব্যবসাবিষয়ক ছায়ামন্ত্রী রুশনারা আলী এমপির নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন বাংলাদেশের সদস্যদের নিয়ে

এপিপিজি নেতাদের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

এপিপিজি ভাইস চেয়ারম্যান বীরেন্দ্র শর্মা, এমপি, ভাইস চেয়ার ভ্যালেরি ওয়াজ, এমপি, ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান হুসেন, এমপি এবং ফয়সল চৌধুরী এমএসপি, চেয়ার, স্কটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশের ক্রস-পার্টি গ্রুপ। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম এবং প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাতের পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এসব তথ্য জানান।


একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে তারা প্রতিশ্রতিবদ্ধ জানিয়ে এপিপিজি প্রতিনিধি দলকে শেখ হাসিনা বলেন, এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব সংস্কার ইতোমধ্যে করা হয়েছে। একটি আইন প্রণয়ন করেছেন এবং সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করেছেন এবং ইসিকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য স্বাধীনভাবে কাজ করার সম্পূর্ণ প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতা দিয়েছেন।


তিনি বলেন, বিরোধী দলে থাকাকালীন তার দল আওয়ামী লীগের প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ছবিসহ ভোটার তালিকা ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বর্তমান সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে এপিপিজি প্রতিনিধি দল সন্তোষ প্রকাশ করেছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী সাধারণ নির্বাচন তদারকির জন্য বাংলাদেশ এপিপিজি প্রতিনিধি দলকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠানোরও প্রস্তাব দিয়েছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular