বর্ষায় এবার আর ইলিশ খাওয়া হবে না পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির। ইলিশ মিললেও, পাওয়া যাবে না বাংলাদেশের ইলিশ। ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার বরাত দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে।
বর্ষায় এ বার আর পাত ভরে ইলিশ খাওয়া হবে না পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির। ইলিশ মিললেও, পাওয়া যাবে না বাংলাদেশের ইলিশ। বাংলাদেশ এবার রীতি মেনে ইলিশ পাঠাচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গে। ভারতীয় কূটনীতিকদের ধারণা,বাংলাদেশকে টিকা পাঠানো হয়নি বলেই ইলিশ আসছে না। এ পার বাংলার বাঙালির পেট থেকে জাতীয় কূটনীতি– সর্বত্রই যা রীতিমতো আলোড়ন ফেলে দিয়েছে।
নিয়ম মতো বহুদিনই ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ। কিন্তু নিয়মের ব্যত্যয়ও হয়েছে রীতি মেনে। ২০২০ সালেও জামাই ষষ্ঠীর মরসুমে পশ্চিমবঙ্গের বাজার আলো করেছিল খাঁটি পদ্মার ইলিশ। পশ্চিমবঙ্গে দুই হাজার টন পদ্মার ইলিশ রপ্তানির ছাড়পত্র দিয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার। এর আগেও একই ভাবে বিভিন্ন সময়ে ভারতে পদ্মার ইলিশ পাঠানোর ছাড়পত্র দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু এবছর ব্যতিক্রম ঘটছে। বাংলাদেশ জানিয়ে দিয়েছে, ইলিশ পাঠানো সম্ভব নয়। কেন? স্পষ্ট উত্তর না মিললেও ভারতীয় কূটনীতি মহলের অভিমত, ভ্যাকসিন না পাঠানোর জন্যই বাংলাদেশের এই পদক্ষেপ। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এতটাই আড়ষ্ট হয়ে পড়েছে যে ইলিশ কূটনীতির আবহই নষ্ট হয়ে গেছে।
বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারত। প্রাথমিক ভাবে ১৬ লাখ ভ্যাকসিন পাঠানোও হয়েছিল। যে ১৬ লাখ মানুষ ভারতে তৈরি টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছিলেন, তারা এখন সবচেয়ে সমস্যায়। কারণ, দ্বিতীয় ডোজ পাঠায়নি ভারত। দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, দেশের মানুষকে টিকা দেওয়ার আগে বিদেশে তা রপ্তানি করা হবে না। ফলে দ্বিতীয় ডোজের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের ১৬ লাখ মানুষ দ্বিতীয় টিকা পাননি। এই পরিস্থিতিতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কেও চিড় ধরেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
বস্তুত, বাংলাদেশকে চীনও টিকা পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু ভারত প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় প্রথম দিকে বাংলাদেশ চীনের ভ্যাকসিন নিয়ে বিশেষ আগ্রহ দেখায়নি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই চীনের ভ্যাকসিনের উপরই তাদের ভরসা করতে হচ্ছে। এই বিষয়টিও বাংলাদেশ ভালো চোখে দেখেনি বলে মনে করছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ স্তরের এক কর্মকর্তা। নামপ্রকাশ করা যাবে না, এই শর্তে তিনি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, গত মার্চে নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সফরে গিয়েও টিকা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতিও রক্ষা হয়নি। তার আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রীংলা ঝটিতি বাংলাদেশ সফরে গিয়ে টিকা পাঠানোর চুক্তি করে এসেছিলেন।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে ইলিশ কূটনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিস্তা জলবন্টন নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ বিবাদ অনেক দিনের। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বার বার এই চুক্তিতে বাদ সেধেছেন। এক সময় শেখ হাসিনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেছিলেন, তিস্তার জল ছেড়ে দিলে ইলিশ এমনিই সাঁতার কেটে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে পড়বে। রসিকতার সুরে বললেও বাংলাদেশ যে ইলিশ কূটনীতি থেকে সরে আসছে, তা তখনই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন হাসিনা।
স্থলচুক্তি সই করতে গিয়ে হাসিনার এই মন্তব্য শুনে এসেছিলেন মমতা। গঙ্গা এবং পদ্মার জল তারপর আরো অনেক দূর গড়িয়েছে। লকডাউনের প্রথম পর্বে বাংলাদেশে ট্রাক ঢুকতে দেয়নি পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তিস্তা চুক্তিও বেশি দূর গড়ায়নি। তারপর টিকা নিয়ে সমস্যা– সব মিলিয়ে দুই দেশের সৌজন্যের সম্পর্কে যথেষ্ট চিড় ধরেছে বলেই মনে করছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা। ভারতীয় কূটনৈতিক মহলও সেই মতকে মান্যতা দিচ্ছে।
এসজি/জিএইচ (আনন্দবাজার)