বিলাল মাহিনী, যশোর :
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যশোর জেলা শাখার ৩৯৯ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আংশিক কমিটির তিন বছরেরও বেশি সময় পর মঙ্গলবার রাতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়।
তবে কমিটি ঘোষণার পরপরই সমালোচনার ঝড় উঠেছে। জেলা ছাত্রদলের নেতাদের ভাষ্য, ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করে আওয়ামী লীগের মিছিলে থাকা অনেককে পদ দেয়া হয়েছে। যা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার।
অনেকেরই দাবি অছাত্র দিয়ে গঠিত ছাত্রদল আসছে আন্দোলন-সংগ্রামে বিশেষ কোন ভূমিকা রাখতে পারবে না। তারওপর বিশাল এ কমিটির কারণে ভেঙ্গে পড়তে পারে চেইন অব কমান্ড। যা জেলা বিএনপির জন্য হিতে-বিপরীত হতে পারে। যদিও এসব সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন দলটির নেতারা।
২০১৮ সালের ১৪ জুলাই কেন্দ্রীয় সংসদের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন অর রশিদ মামুন ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান যশোর জেলা ছাত্রদলের ১১ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৩০ দিনের মধ্যে জেলা কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য বলা হয়। তালিকা একাধিকবার কেন্দ্রে পাঠানো হলেও অজ্ঞাত কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি আলোর মুখ দেখেনি মেয়াদের তিন বছরে।
যশোর জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পি বলেন, ২০১৮ সালে কমিটি ঘোষণার পর ৩০ দিনের মধ্যে ২শ’এক সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিলো।
এরপর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে যায়। পরে আবারো তালিকা পাঠানো হয়েছিলো। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে কমিটি ঘোষণার কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছিলো।
সে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটায় কেন্দ্র মঙ্গলবার রাতে জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,বর্তমানে জেলা ছাত্রদলের অধিকাংশ নেতােরই ছাত্রত্ব নেই।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর বিবাহিত। তার দুইটি সন্তান রয়েছে। তিনি এখন মোটরপার্টস ব্যবসায়ী। সিনিয়র সহসভাপতি ওমর ফারুক তারেক বিবাহিত। আইন পেশার সাথে যুক্ত তিনি।
সহসভাপতি শামসুজ্জামান রিন্টু ও নাসির উদ্দিনের খোঁজ মেলেনি। সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পি মিনারেল পানির পাম্পের ব্যবসায় রয়েছেন।
সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহানুর রহমান শামিম ও আরিফুজ্জামান সাইলেন্ট বিবাহিত। যুগ্ম সম্পাদক রবিউল ইসলাম টিপুও ছাত্রদল ছেড়ে আইনজীবী ফোরামে যোগদান করেছেন।
সহসাধারণ সম্পাদক শেখ সউদ আল রশিদ ড্যানি স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলেন। কিন্তু পদ পাননি। সাংগঠনিক সম্পাদক শাহনেওয়াজ ইমরান একটি ক্লিনিকে কর্মরত। সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ কায়সার ইস্তি কর্মরত একটি কম্পিউটারের দোকানে।
অনুরুপ আরও অনেক নেতা ছাত্রদলে পদ পেলেও তাদের সম্পর্কে ন্যুনতম ধারণাও নেই জেলা নেতৃবৃন্দের। কেউ কেউ আবার আওয়ামীলীগ সমর্থিত। যাদেরকে দেয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পদ। যশোর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই হামলা,
মামলা আর গ্রেপ্তারের মধ্যে ছিলো ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও। তখন থেকেই আমরা কঠিন সময় পার করে আসছি। ওই সময়ে যারা তৃণমূলে ভূমিকা রেখেছে দল তাদেরকে মূল্যায়ন করেছে। যেকারণে বিয়ে কিম্বা অছাত্র বিষয়টি অতটা গুরুত্ব পায়নি।
তবে ৩৯৯ জনের কমিটির বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে রাজিদুর রহমান সাগর বলেুন, অন্তত ১শ’ নেতাকে আমরাই চিনি না। তারা কিভাবে পদে এসেছে এটি আমাদের বোধগম্য নয়।
এদের ভেতর আওয়ামীলীগের সক্রিয় কর্মী-সমর্থকও রয়েছে। অনেকেই আবার বিএনপির ভিন্ন অঙ্গ কিম্বা সহযোগী সংগঠনের পদেও রয়েছেন।
তাদেরকে আমরা চিহ্নিত করছি। সে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে বিষয়টি নিয়ে আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে বসবো। বিষয়টি নিয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, কিছু কিছু বিষয় আমরাও শুনেছি। তবে সবেমাত্র কমিটি ঘোষণা হয়েছে।
এখনও আমরা পুরোপুরি তথ্য পাইনি। তাছাড়া ছাত্রদল বিএনপির একটি সহযোগী সংগঠন। তাদের নিজস্ব গঠনতন্ত্র রয়েছে। সে অনুযায়ী তারাও কাজ করবে। মূল দল হিসেবে আমরা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি। পুরো প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলে, আমরা জেলা ছাত্রদলের সাথে বসে আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।
উল্লেখ, ২০১৮ সালের ১৩ জুন রাজীদুর রহমান সাগরকে সভাপতি ও কামরুজ্জামান বাপ্পিকে সাধারণ সম্পাদক করে যশোর জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। আর মঙ্গলবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।
পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহ-সভাপতি করা হয়েছে ৩২ জনকে। এছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৫০ জন, সহ সাধারণ সম্পাদক ৫৪ জন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে ৪৫ জনকে। কমিটিতে স্থান পাওয়া বাকি নেতারা বিভিন্ন সম্পাদক পদে ও সাধারণ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন।