নবদূত রিপোর্ট:
ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে প্রণোদনা স্বরূপ বৃত্তি প্রদান করে তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে আনার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।
বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় সংগঠনটির একাংশ। এ সময় তারা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের করোনাকালীন সকল বেতন ফি মওকুফেরও দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্র ইউনিয়ন একাংশের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দেড় বছর সশরীরের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেয়া হয়েছে দেশের মাধ্যমিক ও তাঁচ-মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। করোনার শুরু থেকেই ছাত্র ইউনিয়ন দাবি জানিয়ে
এসেছে এই সময়কালে ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন মওকুফ করার। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার পর থেকে এই দাবিকে সামনে রেখে ঢাকা শহরের বিভিন্ন থানায় ও সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে সভা-সমাবেশ করে আসছি আমরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বারংবার এই দাবি জানালেও তারা কর্ণপাত করেনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলাম, উল্টো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সঙ্গে সঙ্গেই নানা আলাপ শুরু হলো যে কী প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এই অর্থ আদায় করা যায়। শিক্ষামন্ত্রীর তরফ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি টিউশন ফি’তে ছাড় দেয়ার আহবান জানানো হলেও, মওকুফের জন্য কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। একবারে এত টাকা দিতে সমস্যা হলে কিস্তিতে টিউশন ফি নেয়ার কথাও তাদের বিবেচনা করতে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন মহামারীর পুরো সময়জুড়েই বেতন-ফি সম্পূর্ণ মওকুফের দাবি জানিয়ে এসেছে।
শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করেছি, কীভাবে মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার এই প্রসঙ্গে যতই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করুক না কেন, বাস্তবতা খুবই পরিষ্কার। গত বছরের আগস্ট মাসে সানেম (সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনোমিক মডেলিং) তাদের একটি গবেষণা প্রকাশ করে। এই গবেষণা থেকে আমরা জানতে পারি বাংলাদেশে মাধ্যমিক স্তরে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের হার করোনাকালে ৯% বেড়ে ৩৬%। থেকে ৪৫% তে পৌঁছানোর কথা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্ট মাসেই স্কুল খুলে দিলেও এই শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়ার কথা। এরপর আরও এক বছর ধরে স্কুল বন্ধ থাকার পরিনামে আরও কত তরুণ-তরুণী শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝড়ে পড়েছে তা জানার কোনো চেষ্টা সরকার করেনি।
তিনি আরও বলেন, করোনা মহামারীর কারণে বাংলাদেশের ৩ কোটি শিক্ষার্থী যে অপরিসীম ক্ষতির সম্মুখীন হলো, তা থেকে আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, এবারের জাতীয় বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে আমাদের দাবিকে আমলে নেয়া হবে। বাজেটের পূর্বে বারবার দাবি নিয়ে রাজপথে উপস্থিত থাকলেও আমরা দেখলাম, সরকার বরাবরের মতোই তার নিয়মিত প্রবৃদ্ধির হারেই শিক্ষাবাজেট পেশ করলেন। যেখানে করোনাকালে শ্রমজীবি মানুষের নতুন করে আয় কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ, সেখানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে করোনাকালীন পুরো সময়ের
টিউশন ফি আদায় করা সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্তে না আসতে পারা সরকারের চূড়ান্ত ব্যর্থতার আরও একটি উদাহরণ।
এ সময় তিনি ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া তুলে ধরে স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এই কর্মসূচি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে শুরু হবে বলে তিনি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সহ-সভাপতি অনিক রায়, জহর লাল রায়, মিখা পিরেগু, সহকারী সাধারণ সম্পাদক তামজিদ হায়দার চঞ্চল, ক্রীড়া সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার, কার্যকরী সদস্য জয় রায় ও ফাহিম পবন।