Monday, December 23, 2024
Homeমতামতসহিংসতা ও বিভেদমুক্ত সমাজ

সহিংসতা ও বিভেদমুক্ত সমাজ


বিলাল মাহিনীঃ

ধর্ম বা মতাদর্শকে পুঁজি করে রাষ্ট্র ও সমাজে বিভেদ কম্য নয়। আমরা বাঙালি ও বাংলাদেশী। এটাই আমাদের প্রথম পরিচয় হওয়া দরকার। সুতরাং একজন বাঙালি মুসলিম মসজিদে যাবে, বাঙালি হিন্দু মন্দিরে, অন্যান্য ধর্মের লোকেরা প্যাগোডা বা চর্চে অথবা নিজ নিজ উপাসনালয়ে যাবে এটাইতো স্বাভাবিক। মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এখানে প্রত্যেক জনগোষ্ঠী তার নিজ ধর্ম-কর্ম সানন্দে পালন করবে কোনোরূপ বাধা বা প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই। পন্ডিত ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, ‘আমরা হিন্দু ও মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি।’ তাই আমাদের আগে বাঙালি হতে হবে। কোনো বিশেষ দর্শন যেনো আমাদের সংকীর্ণ বা আত্মঘাতী না করে তোলে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। উদারতা ও পরমতসহিষ্ণুতা যেনো আমাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির মূলকথা হয়।

উগ্রতা বা সাম্প্রদায়িকতা শুভ প্রবনতা নয়। এতে সামাজিক সহনশীলতা বিনষ্ট ও ধর্মীয় পবিত্রতা ম্লান হয়। তাই এ সকল অশুভ প্রবণতা থেকে সমাজকে মুক্তি দিতে হবে। তবে তা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এর জন্য সমাজের সকল সচেতন মানুষকে দলমত ও ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে এগিয়ে আসতে হবে। যারা আমাদের সভ্যতা ও মনুষ্যত্বের প্রতিপক্ষ তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। সাম্প্রদায়িক বিভেদ নিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বহু আগেই বলে গেছেন, ‘ভূতে পাওয়ার মতো ইহাদের মন্দিরে পাইয়াছে, ইহাদের মসজিদে পাইয়াছে। ইহাদের বহু দুঃখ ভোগ করিতে হইবে। যে দশ লক্ষ মানুষ প্রতি বৎসর মরিতেছে শুধু বাংলায়, তাহারা শুধু হিন্দু নয়, তাহারা শুধু মুসলমান নয়, তাহারা মানুষ-স্রষ্টার প্রিয় সৃষ্টি।’

বর্তমান সময়ের জন্য লিও টলস্টয়ের একটি মন্তব্য খুবই প্রযোজ্য। বিশ্বখ্যাত এই সাহিত্যিক বহু বছর আগে বলেছিলেন, ‘একটি দেশকে ধ্বংস করতে হলে সে দেশের মানুষের মধ্যে ধর্মের নামে লড়াই লাগিয়ে দিলেই হবে।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বহুবার এবং বহুভাবে ধর্মের বাড়াবাড়ি নিয়ে বাঙালিকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন- ‘ধর্মের বেশে মোহ যারে এসে ধরে/ অন্ধ সে জন মারে আর শুধু মরে।’ সাম্প্রতিক সময়ের সংঘাত নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে বহু সাধারণ মানুষ। তবে আশার কথা হলো, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন। মনে রাখা দরকার, সাধারণ মানুষ কখনোই সংঘাত চায় না, করেও না; করে স্বর্থান্বেষী ও কুচক্রী মহল। তাদের সমাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে মোকাবেলা করা সময়ের দাবি।

বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন আমাদের দেশটা হবে গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কিন্তু তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেটা বাস্তবায়ন হতে দেয়নি একটি মহল। তাই আজও নিরাপত্তাহীনতায় কাটে সাধারণ মানুষের জীবন। বাংলাদেশ রাষ্ট্র বিনির্মানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান- সকলের রক্ত ঝরেছে। সেই রাষ্ট্রে কেনো সকলের সমান নিরাপত্তা থাকবে না? স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের পথে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ।

নির্বাহী সম্পাদক : ভৈরব সংস্কৃতি কেন্দ্র, যশোর

RELATED ARTICLES

Most Popular