নবদূত রিপোর্ট:
কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও রংপুরসহ দেশের ২৭টি জেলায় দুর্গাপুজা মন্ডপ,হিন্দু বাড়িঘরে হামলা ও প্রতিমা ভাংচুরের প্রতিবাদ ও সাত দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এক অবস্থান কর্মসূচী ও মশাল মিছিল (আলোর মহাদীপ মিছিল) করে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।
শুক্রবার (১২ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি বিধান বিহারী গোস্বামীর সভাপতিত্বে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও সন্ধায় শাহাবাগ থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত মশাল মিছিল করে।
সভাপতির বক্তব্যে বিধান বিহারী গোস্বামী বলেন, গত এক মাসে দুষ্কৃতিকারী যারা হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা,অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, শ্লীলতাহানি ও প্রতিমা ও মন্দিরে ভাঙচুর করেছে তাদের বিচার করতে হবে এবং এই ঘটনার পেছনের কুশীলবদের গ্রেফতার করে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে বিচার করতে হবে। হামলার শিকার ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বারবার যাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে কেউ ফুটবলের মতো খেলতে না পারে সেজন্য জাতীয় সংসদে ৬০ টি সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। আগামী একমাসের মধ্যে দাবিগুলো পূরণ না হলে দেশব্যাপী বড় আন্দোলন করা ঘোষণা করা হবে।
এছাড়াও অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তাগণ গত ১৩ অক্টোবর থেকে কুমিল্লা, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, নোয়াখালীর চৌমুহনী, রংপুরের পীরগঞ্জ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুজা মন্ডপ, মন্দির প্রতিমা, বাড়ী ঘরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করে পুড়িয়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করার প্রকিবাদ জানিয়ে বলেন, প্রতিনিয়তই এই ঘটনা ঘটছে। আমরা মনে করি সমস্ত ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। একটি গোষ্ঠী ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।
বক্তাগণ আরো বলেন বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। হিন্দু সমুসলিমের মধ্যে প্রীতির বন্ধন বিরাজমান। গুটি কয়েক স্বার্থান্বেসী রাজনৈতিক ব্যক্তি ছাড়া দেশের বেশীরভাগ মানুষ অসাম্প্রদায়িক। কিন্তু এই গুটিকয়েক দুষ্ট মানষিকতার রাজনীতিকরাই বিভিন্ন সময়ে ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বার বার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালাচ্ছে। এতে করে হিন্দু সম্প্রদায়ই শুধু বার বার নির্যাতিত হচ্ছে না; বিশ্বে দেশের ভাবমুর্তিও ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে; সেকারণে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে এবং দুষ্ট রাজনীতিকদের হাত থেকে হিন্দু সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পূর্ণবহাল এবং একটি সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবী জানান এবং ক্ষতিগ্রস্ত সকল মন্দির বাড়ী ঘর পুনঃনির্মাণ ও ক্ষতিগ্রস্থদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ করার দাবী জানান।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিকের সঞ্চালনায় অবস্থান কর্মসুচীতে বক্তব্য রাখেন হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডঃ গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, নির্বাহী সভাপতি অ্যাডঃ দীনবন্ধু রায়, সিনিয়র সহ সভাপতি অ্যাডঃ প্রদীপ কুমার পাল, যুগ্ম মহাসচিব শ্যামল কান্তি নাগ, আন্তর্জাতিক সম্পাদক নরেশ হালদার, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডঃ প্রতীভা বাকচী, যুব বিষয়ক সম্পাদক কিশোর বর্মন, যুগ্ম মহাসচিব দুলাল কর্মকার, মুন্সীগঞ্জ জেলা সভাপতি সুশান্ত চক্রবর্তী, হিন্দু স্বেচ্ছাসেবক মহাজোটের সভাপতি অ্যাডঃ গৌরাঙ্গ মন্ডল, নির্বাহী সভাপতি পরেশ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক তোলন চন্দ্র পাল, হিন্দু যুব মহাজোটের সভাপতি প্রদীপ শঙ্কর, নির্বাহী সভাপতি গৌতম সরকার অপু, সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মৃণাল মধু, হিন্দু ছাত্র মহাজোটের সভাপতি সাজেন কৃষ্ণ বল, সাধারণ সম্পাদক সজিব কুণ্ডু, প্রধান সমন্বয়কারী ধ্রুব বারুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বপন মধু প্রমুখ।
জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সাত দফা দাবিসমূহঃ
১) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য চাকুরিতে ২০ শতাংশ কোটার ব্যবস্থা করা।
২)একটি বৈদিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও টোল শিক্ষাব্যবস্থা পুনঃজাগরিত করা।
৩) জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
৪)সকল বেদখলকৃত মন্দির ও দেবোত্তর পনুরুদ্ধার করা ও যাদুঘরে সংরক্ষতি দেববিগ্রহসহ সকল উদ্ধারকৃত দেববিগ্রহ পুজার জন্য ফেরত দেওয়া।
৫) দুর্গা পুজায় ৩ দিনের ও রথ যাত্রায় ১ দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা।
৬)সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সংখ্যালঘু কমিশন প্রতিষ্ঠা করা।
৭) হিন্দু পারিবারিক আইন অপরিবর্তনীয় রাখা ও হিন্দু বিবাহ আইন বাতিল করা।