নবদূত সম্পাদকীয়
বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বর্তমানে আলোচিত বিষয় কাতারভিত্তিক ইংরেজি গণমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন “All the Primeminister’ Men” বা ‘ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক ‘।
প্রতিবেদনটিতে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নজরদারির জন্য বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার ইসরাইল থেকে স্পাইওয়ার ক্রয়,প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা ও সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সহযোগিতায় সেনাপ্রধানের পলাতক ৩ সন্ত্রাসী ভাইদের ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বেশ কিছু স্পর্শকাতর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যা সরকারকে এক ধরনের অস্বস্তিতে ফেলেছে।
শুরুতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বিষয়টিকে নিয়ে ঐভাবে কোন সংবাদ পরিবেশন, বিশ্লেষণ কিংবা আলোচনা না করলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয় এবং সেনা সদর দপ্তর প্রতিবেদনের প্রতিবাদ করার পর থেকে গণমাধ্যম বিষয়টি নিয়ে কিছুটা কথা বলছে। আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, সেনাপ্রধান ও গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে স্পর্শকাতর সংবাদ পরিবেশেন করলেও বাংলাদেশের কোন গণমাধ্যম ঐভাবে কেন প্রতিক্রিয়া দেখতে পারছে না সেটি নিশ্চয়ই কারো অজানা নয়। গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের টুটি কণ্ঠরোধে বিতর্কিত ডিজিট্যাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ,মিথ্যা মামলা, হয়রানি,অদৃশ্য হুমকি ইত্যাদি কারণে চাইলেও বর্তমানে দেশে মুক্ত সাংবাদিকতা কিংবা স্বাধীনভাবে গণমাধ্যমের কাজ করা সম্ভব নয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আল জাজিরার প্রতিবেদনকে অসত্য, বানোয়োট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছে। এটিকে উগ্রপন্থী জামায়াত সংশ্লিষ্টদের কাজ বলে মন্তব্য করেন।
সেনাসদর দপ্তর এ প্রতিবেদনকে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে একটি অসৎ চক্রের কাজ বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ প্রতিবেদনকে ভিত্তহীন ও দেশবিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
তবে আল-জাজিরার প্রচারিত প্রতিবেদনে কোথায় কি ধরনের তথ্যের বিকৃতি বা ভুল রয়েছে তার সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ এখন পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সেনাসদর দপ্তর বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করে স্পষ্ট বক্তব্য বা বিবৃতি দেননি। যা তাদের বক্তব্য, বিবৃতির গ্রহণযোগ্যতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।
তবে প্রতিবেদনটি যে পুরোপুরি সত্য ও সঠিক তথ্যে সেটিও নিয়ে কিছু সংশয় রয়েছে। যেমন লন্ডনে এক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে সরকারের উচ্চপদস্থদের সহযোগিতায় সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে হারিস যে মিটিংয়ে অংশ নেয় সেটির পরবর্তী মিটিং বা আপডেট দেখানো হয়নি, দুই জায়গায় সেনাপ্রধানের কথোপকথন দেখানো হয়েছে, কিন্তু সেটি কার সাথে হয়েছে সেটির বিষয়ে বলা হয়নি। প্রতিবেদনেই একজন বক্তা হারিসকে ‘সাইকোপ্যাথ ‘ হিসেবে মন্তব্য করে যা প্রতিবেদনটিকেই হালকা করে দেয়।
তারপরও এখানে যথেষ্ট তথ্য রয়েছে যেগুলো একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেনাপ্রধানের ৩ ভাই হারিস, আনিস, জোসেফদের মতো চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও হত্যা মামলার আসামিদের সাথে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ, পুলিশ প্রধানের সাথে জোসেফের মতো শীর্ষ সন্ত্রাসীর ছবি, রাষ্ট্রপতির উপস্থিতির অনুষ্ঠানে হারিস ও আনিসের অংশ নেওয়া, হারিসের নাম পরিবর্তন ও বিভিন্ন ভূয়া ডকুমেন্ট তৈরি , হাঙ্গগেরি, প্যারিস, মালয়েশিয়ায় হারিসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান,মালয়েশিয়ায় আনিসের সম্পদ, আনিসের ছেলে আসিফের কাউন্সিলর হওয়া, মোস্তাফার ভাই মিজানুর ও সেলমি প্রধানের গ্রেফতার।
প্রকৃত সত্য উদঘাটনে এগুলো বিশদ তদন্তের প্রয়োজন। আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো, পুরো বিষয়টিকে তদন্তের জন্য একটা বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠণ করে প্রকৃত রহস্য উন্মেচন করা হোক।
একইসাথে সামরিক বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাই।