Friday, November 22, 2024
Homeমতামতনারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন থামবে কবে

নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন থামবে কবে

নবদূত রিপোর্টঃ

নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি (২৬ জানুয়ারি) খুলনার ফুলতলা থেকে এক তরুনীর মস্তকবিহীন খণ্ডিত নগ্ন মরদেহ ও হত্যার তিনদিন পর গ্রেফতারকৃত দুই ধর্ষকের সহযোগিতায় উক্ত তরুনীর খণ্ডিত মাথা উদ্ধার করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। এমন চাঞ্চল্য হত্যাকাণ্ডে হতবাক গোটা দেশ। কী শুরু হলো দেশে! কবে থামবে নারীর প্রতি অবিচার-অত্যাচার? নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা এবং নৈতিকতা বিবর্জিত আচরণ ও শিক্ষা দিন দিন মায়ের জাতি নারীদেরকে পণ্য হিসেবে পরিগণিত করছে বলে মনে করেন সচেতন মহল। যে মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত, সেই নারীদের প্রতি পুরুষ শাসিত সমাজের কুদৃষ্টি নারীর প্রতি সহিংসতার বৃদ্ধির জন্য অনেকাংশে দায়ী। নারীর প্রতি পুরুষের কুদৃষ্টি রোধকল্পে পবিত্র কুরআনে পুরুষদেরকে তাদের দৃষ্টি নত রাখার এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করতে বলা হয়েছে, একইভাবে নারীদেরও পর্দার সাথে থাকতে এবং পুরুষ হতে দৃষ্টি নি¤œগামী করে রাখতে ও যৌনাঙ্গের হেফাজত করতে বলা হয়েছে। শুধু তাই নয় অবৈধ যৌনাচার (যিনা-ব্যভিচার) থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের সমাজে দিন দিন বেহায়াপনা বেড়েই চলেছে। অবাধ যৌনাচার ও নারীপুরুষের মেলামেশা যেনো এক প্রকার সামাজিক বৈধতা পেয়ে গেছে। ফলে বাড়ছে বিপর্যয়।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘নারী’ কবিতায় লিখেছিলেন, ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ কবিতাটি তিনি শেষ করেছিলেন এভাবে, ‘সেদিন সুদূর নয়, যেদিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীরও জয়!’ কিন্তু সে ‘সুদূর নয়’ যে আসলে কত দূর, তা আজও আমাদের অজানা। আজও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, স্বীকৃতিবিহীন নারীর শ্রম, পারিবারিক সহিংসতা, অর্থ-সম্পত্তির ওপর নারীর নিয়ন্ত্রণহীনতার বিষয়গুলো নারীর ক্ষমতায়িত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ক্রমাগত ব্যাহত করে চলেছে। খুলনায় ধর্ষণের পর গলা কেটে হত্যা হওয়া মেয়েটা একজন মিল শ্রমিক ছিল। হত্যার পূর্বে ধর্ষকদের কাছে বার বার তার অসুস্থ পিতার কথা বলে পরিত্রাণ চেয়েও রক্ষা জীবন। নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের ফলে বাড়ছে মানবিক বিপর্যয়।

পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে নারীর এগিয়ে যাওয়া, গতিশীলতা, অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা ও দৃশ্যমান ভূমিকা থাকার পরও নারী নির্যাতন কমছে না বরং নির্যাতনের ধরন বদলাচ্ছে। জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের পাশাপাশি দিনে দিনে মানবসমাজে নতুন অপরাধের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। যার অন্যতম উদাহরণ ‘নারীর প্রতি সহিংসতা’ বা নারী নির্যাতন। বর্তমানে ধর্ষণ ও পারিবারিক নির্যাতন ভয়ংকর অবস্থায় পৌঁছে গেছে। বিশেষ করে নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা ইদানীং ব্যাপক আকারে বেড়েছে। এ নিয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে এর কোনো প্রতিকার হবে না। সমাজে নারীদের প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিকভাবে অপদস্ত হতে হচ্ছে। এমনকি আধুনিক সময়ে এসেও পথেঘাটে, বাস-ট্রেনে এমনকি বাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কর্মস্থলেও নারীরা ব্যাপকহারে নির্যাতিত হচ্ছে।

যৌতুক, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, ধর্ষণ, হত্যাকসহ এমন নারী সহিংসতার ঘটনা নিত্যদিনের। নারীরা রাজনৈতিক সহিংসতারও শিকার হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পারিবারেই তারা সহিংসতার মুখোমুখি হয়। নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা যেন স্বাভাবিক ঘটনা। নারীর ওপর পুরুষের অবিরাম ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে সম্প্রতি এই নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে চলেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো স্থান থেকে ধর্ষণের খবর পাওয়া যায়। প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই পাওয়া যায় একাধিক ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের খবর। পৃথিবীব্যাপী এসব সহিংসতার শিকার হয়ে প্রতি বছর অসংখ্য নারীর মৃত্যু হচ্ছে। এখন ঘরে ঘরে অশান্তি, আত্মহত্যা, ডিভোর্স যেন লেগেই আছে। নারী সমাজকে এই হীনমন্যকর পরিস্থিতি থেকে রক্ষায় সোচ্চার নারীবাদীরা, প্রণীত হয়েছ নানা আইনও। তবু নারী সমাজের দুর্দশা থেকে মুক্তি মিলছে না।

নারী মমতাময়ী মা, কখনো প্রিয়তমা স্ত্রী, স্নেহের বোন বা আদরের সোনামনি মেয়ে হিসেবে বিবেচিত হয়। অন্যদিকে এই স্বর্গতুল্য মাকে কোনো কোনো সময় ও অবস্থায় অলক্ষী প্রেতাত্মা পেত্নী এমনকি নিষিদ্ধ পল্লীর সেবিকা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এছাড়াও এক শ্রেণির ধনীক ব্যবসায়ী নারীকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করে নারীর সম্মান মর্যাদা ভুলণ্ঠিত করছে। তাদের দৃষ্টিতে নারীকে স্বল্প পোশাকে নগ্ন বা অর্ধ নগ্ন করে নাটক সিনেমা বিজ্ঞাপন-এ মডেল হিসেবে উপস্থাপনে দ্রুত সম্পদশালী হওয়া যায় এবং এটাকে তারা নারী স্বাধীনতা বা প্রগতি বলে চালিয়ে মূলত: নারীর সাথে প্রহসন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। নারীকে স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতার দিকে ধাবিত করা হচ্ছে। প্রকারন্তরে সেই পুরুষতান্ত্রিত সমাজ-ই গড়ে তুলছে তারা। আকাশ সংস্কৃতি বা ভিনদেশী সংস্কৃতির অনুশীলন, বেহায়াপনা, সৌন্দর্যেও নামে দেহ প্রদর্শনের মাধ্যমে নারীরা (কেউ কেউ) নিজেদেরকে এক শ্রেণির পুুরুষের কছে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করছে। শালীনতা বিবর্জিত পোশাক ও সাজসজ্জা কখনো কখনো নারীর সম্ভ্রম ও সম্মান লুটে নিচ্ছে। হতে হচ্ছে লাঞ্চিত অপমানিত ও ধর্ষিত।

বিলাল হোসেন মাহিনী
নির্বাহী সম্পাদক : ভৈরব সংস্কৃতি কেন্দ্র, যশোর।
bhmahini@gmail.com

RELATED ARTICLES

Most Popular