সৈয়দ সুহেল আহমেদ একজন ব্রিটিশ-বাংলাদেশী চাকরিজীবী ও সমাজসেবক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সপরিবারে ব্রিটেনে বসবাস করে আসছেন। তিনি বর্তমানে Vaultex (HSBC & BARCLAYS Bank Cash management) অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। গত বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সৈয়দ সুহেল আহমেদ ব্রিটেনের ন্যাশনওয়াইড ব্যাংকের শ্রেষ্ট কর্মীর সন্মাননা ও স্বীকৃতি পেয়েছেন।
Vaultex (HSBC & BARCLAYS bank Cash management) এর পক্ষ থেকে এ সন্মাননা সুহেল আহমেদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সৈয়দ সুহেল আহমেদ নবদূতকে জানান, ‘As a Bangladeshi I feel proud to get the highest award . I feel proud to represent my country.’
তিনি বলেন, আমার কোম্পানির সিইও সহ সকল উর্ধ্বতন কর্মকর্তরা আমাকে সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করেছেন আলহামদুলিল্লাহ। তিনি নবদূতকে আরও বলেন, তাকে দেওয়া পুরস্কারের সম্পুর্ন অর্থ তিনি চ্যারিটি ও সমাজসেবা সংস্থাকে দান করে দিবেন।
সৈয়দ সুহেল দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটেনের ব্যাংকিং সেবায় আত্ননিয়োগ করেছেন ।
বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজারে তাঁর জন্মস্থান। উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে সৈয়দ সুহেল বাংলাদেশের রাজনীতিতে ও সক্রিয় ছিলেন । তিনি বর্তমানে “বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ ” যুক্তরাজ্য শাখায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের” দায়িত্ব পালন করছেন।
সৈয়দ সোহেল আহমেদের জন্ম ১৯৬৮সালের ডিসেম্বরে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানাধীন বৃন্দাবনপুরের দুর্গাপুর গ্রামে। হজরত শাহ সৈয়দ ইসমাঈলের এক অধঃস্তন বংশধর জনাব আহমদের এক পূর্ব পুরুষ সৈয়দ আব্দুস্ সত্তার এর পুত্র সৈয়দ আব্দুল ওয়াহিদ আটার শতকের শেষ দিকে মৌলভীবাজারের মোস্তফাপুর থেকে দুর্গাপুর এসে সম্ভ্রান্ত বংশের দেওয়ান আদম খাঁ এর অধস্তন বংশধর জরিফ মোহাম্মদ চৌধুরীর একমাত্র কন্যা ময়মনা খাতুন চৌধুরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দূর্গাপুরেই স্থায়ী হয়ে যান।
সৈয়দ সোহেল আহমদের পিতা জনাব মরহুম সৈয়দ আব্দুর রহমান পেশায় একজন শিক্ষক ছিলেন।জনাব রহমান এলাকায় অনেকের নিকট দেওয়ান মাষ্টার নামে পরিচিত। শিক্ষকতা পেশায় থাকা অবস্থায় জনাব আব্দুর রহমান ১৯৭৪সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের নতুন শিক্ষক নিয়োগ ও নতুন স্কুল বাস্তবায়ন কমিটির কমলগঞ্জ থানার সেক্রেটারীর দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। তৎকালীন থানা শিক্ষা অফিসার আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত এই কমিটি সেই সময়ে এলাকার ৭৯জন কে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেয় এবং আটটি স্কুল সরকারীকরনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাঁর পিতামহ মৌলানা আব্দুস শহীদ একজন বিজ্ঞ আলেম ছিলেন।
উল্লেখ্য, তিনি তৎকালীন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্বর্ন পদক প্রাপ্ত ছিলেন। তিনি ১৯৪৩ সালে অতি অল্প বয়সে পরলোক গমন করেন।তার দুই বোন তারা বিবাহিতা এবং মৌলভীবাজার শহরেই বসবাস করেন। সর্ব কনিষ্ট বোন সৈয়দা ইয়াসমীন জাহান শহরের প্রাচীনতম বিদ্যাপিঠ কাশিনাথ আলাউদ্দিন উদ্দীন উচ্চবিদ্যালযে শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত। তাঁর নানা জহুর ঊদ্দীন ত্ৎকালিন বৃটিশ সরকারের সিলেট -আসাম প্রদেশের রেলওয়ের একজন চৌকুশ কর্মকর্তা ছিলেন। সৈয়দ সোহেল আহমদের লেখাপড়ার হাতেখড়ি তাঁর মায়ের নানা বাড়ি কুলাউড়ার জালালাবাদ গ্রামে । তাঁর মায়ের মায়ের মামারা দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ডীন ও বিভাগীয় প্রধান ডক্টর আব্দুল মজীদ, দূর্নীতি দমন বিভাগের সচিব আব্দুল গণি ( অবসর প্রাপ্ত)।
তিনি মৌলভীবাজার সরকারী কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে বি এস সি পাশ করে ১৯৮৮সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। রসায়ন শাস্ত্রে এম এস সি শেষ করার পূর্বেই একটি বেসরকারী সংস্থায় বৃহত্তর বরিশাল ও ফরিদপুরের বিভাগের দায়িত্ব নিয়ে চাকুরী জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে তিনি একই প্রতিষ্ঠানের আঞ্চলিক ম্যানেজার ও বায়োকেমিষ্ট হিসাবে সিলেট বিভাগেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৭সাল পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতার সহিত দায়িত্ব পালন করে ফাঁড়ি জমান ইংল্যান্ডে। ইংল্যান্ডের নিউহাম কলেজ থেকে কম্পিউটার এ ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে ব্যাংকার হিসাবে যোগ দেন দি রয়েল ব্যাংক অব স্কটল্যান্ডে।
২০০৩সাল থেকে তিনি এইস এস বি সি ব্যাংক ও বার্কলেস ব্যাংকের যৌথ ক্যাশ ম্যানেজম্যান্ট যা Vaultax UK নামে পরিচিত এতে সুপারভাইজার হিসাবে কর্মরত আছেন। সৈয়দ সোহেল আহমদ একজন দক্ষ ব্যাংকার হওয়া সত্ত্বেও দেশে ও বিদেশে সামাজিক কর্মকান্ডের সাথেও সম্পৃক্ত। ইংল্যান্ডের মূলধারার একজন কর্মজীবী হয়েও তিনি নিজ কমিউনিটির মানুষের সুখে ও দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করেন।
২০০৩ থেকে ২০০৭সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডনস্থ কমলগঞ্জ সমিতির সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করেন। ব্রিটেনে বাংলাদেশীদের দাবি আদায় আন্দোলনের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ভয়েস অব জাষ্টিস এর তিনি একজন একটিভ মেম্বার। এ ছাড়া তিনি দেশে প্রতিষ্টিত সৈয়দ আব্দুর রহমান ও সুফিয়া রহমান ওয়েলফেয়ার এন্ড এডুকেশন ট্রাষ্ট এর পৃষ্ঠপোষক। তাছাড়া আহমদ নগর মাদ্রাসায় তাঁর মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত সুফিয়া রহমান স্মৃতি পাঠাগারের (প্রতিষ্টাকাল ২০০৪)প্রতিষ্টাতা। একজন ব্যাংকার ও নিবেদিত প্রাণ সমাজকর্মী হিসাবে পরিচিত জনাব সৈয়দ সোহেল আহমেদ ব্যক্তি জীবনে বিবাহিত। তাঁর এক মেয়ে লন্ডনের একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্রী। পরিবার পরিজনসহ জনাব সৈয়দ সোহেল আহমদ লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।