নবদূত রিপোর্ট:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) প্রতি ৩ জন পর্দানশীল ছাত্রীর একজন বিভিন্ন বৈষম্যে ও বিরুপ মন্তব্যের শিকার হচ্ছেন উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাব-নিকাব পরার নির্বিঘ্ন অধিকার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন একদল নারী শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে ‘প্রোটেস্ট অ্যাগেইনস্ট হিজাবোফোবিয়া’ নামক প্ল্যাটফর্ম থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ দাবি জানান তারা। এসময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তাসফিহা তাহসিন ইমা।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা গত দুই মাস ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হিজাবোফোবিয়া নিয়ে কাজ করছি। আমরা একটি জরিপও পরিচালনা করেছি। এ দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় আমরা তাদের থেকে জানতে পেরেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাব নিকাব পরার অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিকাব পরা অধিকাংশ ছাত্রী তার ছাত্রত্ব থাকাকালীন সময়ে কখনো না কখনো অপমান, টিজিং, হেনস্তা অথবা বুলিংয়ের শিকার হয়। ক্লাসমেট, বন্ধু, সিনিয়র, জুনিয়র, কর্মকর্তা, কর্মচারী এমনকি ক্লাসরুমে শিক্ষকরা পর্যন্ত হিজাব ও নিকাব পরা ছাত্রীর প্রতি বিরূপ আচরণ করে। কেউ বিদ্রুপ করে, কেউ বাজে মন্তব্য করে। এমনকি অনেক শিক্ষক তো নিকাব পরার কারণে ক্লাস থেকে বের করে দেয়।
জরিপের ফলাফল উল্লেখ করে তিনি বলেন, হিজাব-নিকাবের কারণে ক্যাম্পাসে বা হলে কোনো বৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছেন কি? জানতে চাইলে এ জরিপে অংশ নেন ২২১ জন ছাত্রী। তাদের মধ্যে না বলেছেন ১৪৮ জন আর হ্যাঁ বলেছেন ৭৩ জন। অর্থাৎ প্রতি ৩ জন পর্দানশীল ছাত্রীর একজন বিভিন্ন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। আমাদের আরেকটি প্রশ্ন ছিল- হিজাব-নিকাবের কারণে কোনো শিক্ষক, কর্মচারী, বা সহপাঠীর বিরূপ মন্তব্যের শিকার হয়েছেন কি? এই প্রশ্নের উত্তরেও না বলেছেন ১৪১ জন এবং হ্যাঁ বলেছেন ৮০ জন। অর্থাৎ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি ৩ জনের মধ্যে একজন থেকেও বেশি ছাত্রী পর্দা করার কারণে বিরূপ মন্তব্যের শিকার হচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, অনেক ছাত্রী অভিযোগ করেছে যে, পরীক্ষার হল ও ভাইভাতে নিকাব খুলতে বাধ্য করা হয়। একটা মেয়ে যে সবসময় নিকাব পরে এবং নিকাবকে তার ধর্মীয় আদেশ মনে করে তাকে নিকাব খুলতে বাধ্য করাটা অন্যায়। অথচ আমরা এমন অনেকগুলি ঘটনা পেয়েছি যেখানে ছাত্রীকে নিকাব খুলতে বাধ্য করা হয়েছে। নিকাব না খোলায় ভাইভা নেয়া হয়নি। পরীক্ষা দেরী করে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও হিজাব ও নিকাবের কারণে বাজে মন্তব্য, হেইট স্পিচের সম্মুখীন হয়েছেন এমন অনেকেই আছেন। যা আমরা আমাদের পরিচালিত জরিপে দেখেছি।
হিজাবোফোবিয়া বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন,
আমাদের দাবি হচ্ছে, হিজাব ও নিকাব নিয়ে যেন কোনো বিদ্বেষমূলক আচরণ বাজে মন্তব্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সহ্য না করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ছাত্রীকে হিজাব খুলতে যেন কোনো শিক্ষক বাধ্য না করে। এর পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেন এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করে যাতে করে একজন ছাত্রীকে তার চেহারা দেখানো ছাড়াও বৈজ্ঞানিকভাবে সনাক্ত করা যায়। সেটি সম্ভব না হলে অন্তত একজন ম্যাডাম দ্বারা সেই ছাত্রীকে সনাক্ত করা হয়। তাও যেন কোনোমতেই একজন ছাত্রীকে গাইরে মাহরাম শিক্ষকের সামনে চেহারা খুলতে বাধ্য না করা হয়। তার ধর্মীয় অধিকার ক্ষুণ্ন না করা হয়। ক্লাসে যেন হিজাব নিকাবের কারণে কোনো ছাত্রীকে বের করে দেয়া, বাজে কথা বলা না হয়। পর্দার কারণে যেন কোনো বৈষম্য দেখানো না হয়। একই দাবি হলের ক্ষেত্রেও।
শাস্থির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, মোট কথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হিজাব ও নিকাব পরার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। এবং যে বা যারা হিজাব ও নিকাব পরার কারণে কাউকে অপমান করবে, বিদ্রুপ, তাচ্ছিল্য করবে, বৈষম্যমূলক আচরণ করবে; বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি প্রদর্শন করবে এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিবে। এটাই আমাদের প্রাণের দাবি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাসিফা সিদ্দিকা, নিশাত তামান্না প্রমুখ।