স্টাফ রিপোর্টার আব্দুল গফফার, সিলেট :
সিলেটে দফায় দফায় হচ্ছে ভূমিকম্পে বাড়ছে আতঙ্ক। আর আতঙ্কের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে হাজারো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। এই ঝুঁকি হ্রাস ও তীব্র মাত্রার ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এবার মহানগরীর ৪২ হাজার ভবন পরীক্ষা-নিরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)।
পরীক্ষার এ কাজে সিসিকের প্রকৌশলীদের পাশাপাশি নেয়া হবে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বিশেষজ্ঞদের পরমার্শ। ইতোমধ্যে অধিক ঝুঁকির কারণে বন্ধ থাকা নগরীর ১০টি মার্কেট পর্যবেক্ষণে নেমেছেন শাবিপ্রবি’র বিশেষজ্ঞরা।
সিসিক সূত্র জানায়, ২৬.৫ বর্গকিলোমিটারের সিলেট নগরীতে বর্তমানে হোল্ডিংয়ের সংখ্যা প্রায় ৭৪ হাজার। এর ১ থেকে ২১ তলা পর্যন্ত বিল্ডিং রয়েছে ৪১ হাজার ৯৯৫টি। ২০১৯ সালে সার্ভে করে নগরীর ২৪টি বহুতল ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভূক্ত করেছিল সিসিক। গত ২৯ ও ৩০ মে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আট দফা ভূমিকম্পের পর এই ২৪টি ভবনের মধ্যে ১০টি মার্কেট নগর পিতা আরিফুল হক চৌধুরীর নির্দেশে বন্ধ করে দেয়া হয়। ১০ দিন পর মার্কেটগুলো খুলে দেয়ার কথা থাকলেও ১২ দিন পরও খুলেনি।
গত সোমবার (৭ জুন) এক মিনিটের ব্যবধানে আবারও দুইদফা ভূমিকম্প হওয়ায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া মার্কেটগুলো খুলে দেয়া থেকে বিরত থাকে নগরভবন। বৃহস্পতিবার (১০ জুন) সিসিক ও শাবিপ্রবি’র দুটি টিম ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলো পরিদর্শন করেছেন। বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে মতামত পাওয়ার পরই মার্কেটগুলো খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান।
বিপরীতে, সিলেট নগরীতে প্রায় ৪২ হাজার ভবন থাকলেও কোনটির ভূমিকম্প সহনীয় ক্ষমতা কতটুকু তার কোন তথ্য নেই নগরভবনে। তাই ভবনগুলো পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একটি সমঝোতা স্মারক চুক্তি করতে চায় সিলেট সিটি করপোরেশন।
এ লক্ষ্যে গত বুধবার (৯ জুন) সিসিক ও শাবিপ্রবি’র মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নগরীর নিরাপত্তা এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সনাক্ত ও করণীয় নির্ধারণে নগরভবনের পক্ষ থেকে শাবির সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও সহযোগিতা চাওয়া হয়। এতে শাবির বিশেষজ্ঞরাও সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, ‘নগরীর ৪২ হাজার ভবন একসাথে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করা হচ্ছে। প্রকৌশলীরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে হেলেপড়া, ক্র্যাক, জরা-জীর্ণ ও অনুমোদিত ভবনগুলোর তালিকা করবেন। এরপর ওই তালিকা ধরে সিসিক প্রকৌশলী ও শাবিপ্রবি বিশেষজ্ঞরা ভবনগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। এতে চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো সংস্কার করে ঝুঁকিমুক্ত করা না গেলে ভেঙ্গে ফেলা হবে।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, ‘ভূমিকম্পের ডেঞ্জার জোনে রয়েছে সিলেট। দফায় দফায় ছোট ছোট ভূমিকম্প হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে কোন সময় তীব্র মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। আর এরকম ভূমিকম্প হলে যাতে জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায় সেজন্য নগরীর সকল ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।