লিখবো না কিছুই এমন কি একটা ফেসবুক স্ট্যাটাসও না, সিদ্ধান্তটা এমনই ছিলো। কারণ, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি কারো একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ে অন্য কারোরই আলোচনার সুযোগ নেই, তা নিতান্তই অসৌজন্য। তবু লিখতে হলো, লেখার অনুরোধের বাইরে একরকম বাধ্য হয়ে, কারণ শাকিব যা করেছেন তার প্রভাব কেবল একক তার বা তার পারিবারিক(?!) জীবনে নয়, হাজার লাখো মানুষের উপরও পড়ার আশংকা আছে..।
শাকিব খান এই দেশের সুপার স্টার। তিনি গোপনে বিয়ে করেন সমসাময়িক আলোচিত নায়িকাদের। একবার নয়, একাধিকবার। তার স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় স্ত্রী সন্তান সম্ভবা হোন, ক্যারিয়ার সব ফেলে স্ত্রীকেই আত্মগোপনে যেতে হয়, নিশ্চিতভাবে তা শাকিবের প্ররোচনাতেই। যে সন্তান সবচেয় কাঙ্খিত, যার আগমনে কেবল দুটো মানুষ বা পরিবার নয় পুরো ভক্তকুল আর দেশে সাড়া পড়ার কথা সেই সন্তান তারা জন্ম দেন একেবারে চুপিসারে। যেনো ভয়াবহ কোনো পাপ শেষ করা হলো গোপনে, কেনো?
এদেশের মেয়েদের মনস্তত্ত্ব আমি বুঝি। সে নায়িকা হোক বা একদম মধ্যবিত্ত গৃহিণী। সংসার, স্বামী তার কাছে অনেক বড় হয়ে উঠে। যে কোন কিছুর বিনিময়ে, যে কোনো শর্তে তা ধরে রাখাই যেনো একমাত্র যুদ্ধ আর ব্রত তাদের কাছে। অপু বিশ্বাস হোক বা বুবলী তারা ক্যারিয়ার, সব আনন্দ ফেলে দিয়ে গোপন করেছেন এমন সংবাদ কেবল শাকিবের জন্যই তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ তারা যখন অন্তরালে শাকিব তখন আনন্দ নিয়ে সিনেমা করেছেন দুই বাংলায়। ছিলেন প্রকাশ্যে স্বাভাবিক জীবনে। কিন্তু..।
অপু বা বুবলীর এই উৎসর্গ কোনো কাজে আসলে লাগেনি। ২ জন নায়িকাকেই সন্তান দিয়ে সোজা কথায় শাকিব খান ভেগেছেন।তারপর সিনেমার মতোই পিতৃত্বের দাবি নিয়ে ২ নায়িকাই হাজির হয়েছেন মিডিয়ায়। তখন হয়েছেন, যখন দেখেছেন তাদের সব ত্যাগ, সব ভালোবাসা নিঙড়ে নিয়ে, শাকিব আর নেই তাদের কাছে।প্রশ্ন হলো-
তুমুল জনপ্রিয় জুটি এবং ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সুসময়ে অপু বিয়ে করেছেন শাকিবকে বিশ্বাস করেই। তারপর যখন ছেলে নিয়ে হাজির হল তিনি মিডিয়ায়, তার ভাষ্যমতে সংসার জীবনের ৮ বছর কাটিয়েছেন তিনি শাকিবের স্ত্রী হয়ে, ভালোবাসার সেই মানুষ, সন্তানের মাকে ছাড়তে, অস্বীকার করতে ১ মিনিটও লাগেনি শাকিবের। কেনো গোপনীয়তা ভঙ্গ করেছে এই অপরাধে তালাক দিলেন তিনি অপুকে। কারণ আমার মনে হয় কেবল দেশবাসীর কাছ থেকে নয়, বুবলীসহ নানা নায়িকাকেও তিনি হাত করতে গোপন করেছেন অপুকে। হতেই পারে। জন্মাতে পারে নতুন ভালোবাসা। কিন্তু পুরো বিষয়টাই ঘটেছে বুবলীর সামনে তবু বুবলী শাকিবের সন্তানেরই মা হতে চাইলেন, কেনো?
আমাদের জানা নেই, সময় এলে জানা যাবে নিশ্চয়ই। কিন্তু আমরা যা জানি তা হলো যে বুবলীর জন্য তিনি অপুকে ছেড়েছেন সেই বুবলীও তার এখন পছন্দ নয়, সত্যতা নিশ্চিত নয়, শোনা যাচ্ছে বুবলীকেও ডিভোর্স দিয়েছেন মহান এই নায়ক। তার মানে বুবলীর প্রতি অসীম ভালোবাসায় তিনি অপুকে ছেড়েছেন তা নয়। কারণ এই সন্তানও তিনি জন্ম দিয়েছেন গোপনে এবং সন্তানের খবর নিয়ে এসেছেন বুবলীই। বুবলীর দিন শেষ, নায়কের নজর এখন অন্য নায়িকায়।
কেবল কিছু মজা বা হাস্যরস ছাড়া এই নায়ককে নিয়ে বড় কোনো আলোচনা নেই কোথাও। যা তিনি করেছেন এবং করছেন তা রীতিমতো অপরাধ বলছে না কেউ। যখন ইচ্ছে বিয়ে, সন্তান তারপর ছেড়ে দেয়া তারপর আবার একই কাজ করতে থাকা। শাকিব খান কি সমাজে এই বার্তা প্রতিষ্ঠা করছেন যে বিয়ে, সন্তান দান, ছেড়ে দেয়া এইগুলো খুবই ছেলেখেল? যখন তখন করা যায়? এবং করলে কিছুই হয় না? শাকিব খানের ফলোয়ার এই বাংলা ও বাংলা দু’বাংলাতেই। তার কোটি ভক্তের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন শাকিব যা করেন তাই সিদ্ধ, তাই আদর্শ তারা মনে করেন- তারাও তাহলে একের পর এক বিয়ে তালাক এইগুলো করে যাবেন?
শাকিব ব্যক্তিগতভাবে কি করবেন আমাদের দেখার বিষয় নয়, কিন্তু সমাজে আসলে তিনি কি বার্তা দিতে চাইছেন? চাইলেই এইসব সম্পর্ক গড়া এবং ভেঙ্গে ফেলা যায়? এইসব মানুষ কেবল স্টার বলে অপরাধ থেকে বেঁচে যাবে নাকি আসলে এমন আইনই নাই যাতে এদের থামানো যায়? যাতে বোঝানো যায় সম্পর্কের একটা ন্যূনতম মূল্য আছে। যা পরিশোধ করতে হয় সবাইকে, সে সাধারণ কেউ হোক অথবা সুপার স্টার।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।
এইচআর/এমএস