রমজান এলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলগুলো যেন একেকটি পরিবার হয়ে উঠে। মিলেমিশে আনন্দঘন পরিবেশে ইফতারের আয়োজন যেন ভুলিয়ে দেয় নিজ পরিবার থেকে দূরে থাকার হতাশা। ইফতারকে কেন্দ্র করেই ক্যাম্পাসজুড়ে ও প্রত্যেকটি হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলে উৎসবের আমেজ।
রমজানের প্রথম দিনে ঢাবির হলগুলোতে দেখা যায়,
আসরের নামাজ আদায় করে হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা দলবেঁধে যাচ্ছেন ইফতার সামগ্রী কিনতে। ইফতার কিনে সহপাঠী ও বন্ধুবান্ধব মিলে একসাথে ইফতার করবেন তারা। সবাই মিলে টাকা তুলে কী কী আইটেম দিয়ে ইফতার করবেন সেই পরিকল্পনা চলে অনেকক্ষণ। কে কী কাজ করবে তাও ভাগ করে নেন সবাই।
এরপর হলের ক্যান্টিনসহ আশেপাশের দোকান থেকে সংগ্রহ করা হয় ইফতার সামগ্রী। ছোলা মুড়ি, পেয়াজু, জিলাপি, বেগুনি কেনার ধুম পড়ে যায়। যারা ইফতারের আরো জৌলুস বাড়াতে চান তারা যোগ করেন, কলা, আনারস, তরমুজ, বাঙ্গি, লিচুসহ হরেক রকম মৌসুমি ফল।
দেখা যায়, কবি জসিম উদ্দিন হল, বিজয় একাত্তর হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলসহ প্রায় সবকটি হলের সামনেই বাহারি ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা।
কবি জসিম উদ্দিন হলের এক দোকানি বলেন, এখানে ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, পেঁয়াজুসহ অনেক আইটেমের ইফতারি বিক্রি করছি আমরা। বেচা-বিক্রি ভালো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে হলের রুমে, মাঠে বিকেলের পর থেকেই শুরু হয় ইফতার উৎসব। এসব আয়োজনে উপস্থিত হচ্ছেন বন্ধু, সহপাঠী, ছোট ভাই, বড় ভাইয়েরা। সকলের সম্মিলনে এই ইফতারের আয়োজন যেন ভুলিয়ে দেয় সব বাধা ব্যবধান।
বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী মাশরুর শরীফ বলেন, সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের সময় বন্ধুরা সবাই মিলে একসাথে ইফতার করছি। আয়োজনটা ছোট হলেও এখানে আছে ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা আর ভালোলাগা। এই দিনটির অপেক্ষায় থাকি বছর ধরে।
শুধু আবাসিক হলগুলোর মাঠ নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি), বিভিন্ন অডিটোরিয়াম, সবুজ চত্বর, মল চত্বর, সিনেট ভবন প্রাঙ্গণ, বটতলা, ক্যাফেটেরিয়া, হাকিম চত্বর, কার্জনের মাঠসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় এমন দৃশ্য চোখে পড়ছে।
পবিত্র রমজানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিভাগের ক্লাস বন্ধ থাকলেও অধিকাংশ বিভাগের চলছে ক্লাস-পরীক্ষা যাদের শেষ হয়েছ তারা ইতিমধ্যে চলে গেছে বাসায়। আবার অনেকের পরীক্ষা শুরু হবে সামনে। চাকরি প্রত্যাশীসহ সব মিলিয়ে হলগুলোতে এখনও রয়েছে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর উপস্থিতি রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক হলে প্রশাসন থেকে একদিন উন্নত মানের ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়।