প্রবাসী অধিকার পরিষদের যৌক্তিক ১০ দফা দাবির সাথে শতভাগ সমর্থন জানালেন মেজর জেনারেল ইব্রাহিম বীরপ্রতীক।
অদ্য, ৮ই মে, ২০২৩ ইং সোমবার, সকাল ১০টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটে বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ৪র্থ বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে প্রবাসীদের ভূমিকা ও সংকট নিরসনে রাষ্ট্রের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা ও মিলনমেলা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে মেজর জেনারেল ইব্রাহিম বীরপ্রতীক প্রবাসী অধিকার পরিষদের ১০ দফার শতভাগ সমর্থন করে সরকারকে যৌক্তিক দাবি গুলো মেনে নেওয়ার জোর দাবি জানান।
বাংলাদেশে সরকারী হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ বাংলাদেশি নাগরিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী হিসেবে অবস্থানরত আছেন, যদিও বেসরকারি হিসেবে প্রায় দুই কোটি। যা বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ শতাংশ। কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতায়, জীবন ও জীবিকার তাগিদে, উচ্চশিক্ষা ও উন্নত জীবনযাপনের লক্ষ্যে বিপুল সংখ্যক এই বাংলাদেশি নাগরিক তাদের শ্রম ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে উপার্জিত বিপুল পরিমান বৈদেশিক অর্থ বাংলাদেশে প্রেরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। প্রবাসীরা প্রতিবছর বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। রেমিট্যান্স হলো দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি এবং উন্নয়নের ভিত্তি, স্বপ্নের সোনালি সোপান ও অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য বৈদেশিক সম্পদ অর্জনের অন্যতম প্রধান উৎস হলো রেমিট্যান্স। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে পাওয়া উন্নয়ন সহায়তার চেয়ে এর ভূমিকা ও গুরুত্ব অনেক বেশি এবং বেসরকারি ঋণ সংস্থান ও পোর্টফোলিও ইকুইটি প্রবাহের চেয়েও অনেক বেশি স্থিতিশীল। অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেমিট্যান্সের অবদান মোট জিডিপির ১২ শতাংশ এবং বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। প্রবাসী এসব শ্রমিক যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাচ্ছেন, তা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের অর্ধেক। তৈরি পোশাকের পরে অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদান সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ দ্বিতীয় স্থান, যা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে রাখতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। প্রবাসীদের কারণে এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণে আছে। রেমিট্যান্স একই সঙ্গে দেশের বেকার সমস্যা ও কর্মসংস্থান নিরসনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তা ছাড়া জনশক্তি রপ্তানির ফলে বিরাটসংখ্যক জনগণের দৈনন্দিন চাহিদা ও খাদ্যসামগ্রীও স্থানীয়ভাবে জোগাড় করতে হচ্ছে না। সারা বিশ্বের দেড় শতাধিক দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখের বেশী বাংলাদেশি, যারা সার্বিকভাবে আমাদের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন।
প্রতিটি প্রবাসী বাংলাদেশি জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে সকল নাগরিক অধিকারের পূর্ণ প্রাপ্যতা থাকলেও প্রকৃত অর্থে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকেরা তাদের ন্যায্য নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। সকল বাংলাদেশি প্রবাসীদের সুযোগ, সুবিধা, নাগরিক অধিকার, স্বার্থ সংরক্ষণ, প্রাপ্য অধিকার আদায়, সংরক্ষণ, ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা এবং সেই সাথে সকল প্রবাসী ও প্রবাসীদের পরিবারের নিরাপত্তা, শিক্ষা ও চিকিৎসা সহ সকল ন্যায্য অধিকার সুনিশ্চিত করা সরকার ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ১ কোটি ২০ লাখের বেশী প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ এর পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানেঅনলাইনে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী মোঃ কবীর হোসেন ১০টি সুনির্দিষ্ট দাবি বাংলাদেশ সরকার ও রাষ্ট্র বরাবর তুলে ধরেন।
প্রবাসীদের যৌক্তিক ১০ দফা দাবিঃ
১/ প্রবাসে মারা যাওয়া সকল বাংলাদেশী নাগরিকদের মৃতদেহ রাষ্ট্রীয় খরচে দেশে নিতে হবে।
*অনিয়মিত, আনডকুমেন্টেড, দুস্থ এবং অসহায় প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীর মরদেহ পরিবহন ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালা, ২০২২ দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।*
২/ প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটাধিকার চাই।
~*সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সকল দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রম অতিশীগ্রই শুরু করার জোর দাবি জানাচ্ছি।*
৩/ বিমানবন্দরে প্রবাসী হয়রানি বন্ধ চাই।
*বিমানবন্দরে প্রবাসী কর্মীদের জন্য ভিআইপি লাউঞ্জের সেবা চাই।*
৪/ প্রবাসীদের জন্য যুগপোযোগী দ্বৈত নাগরিকত্ব আইন ও পেনশন সুবিধা চাই।
৫/ পাসপোর্ট সংশোধনের সুযোগসহ দালালমুক্ত পাসপোর্ট ও দূতাবাস সেবা চাই।
~*পাসপোর্ট সংশোধন সহজ প্রক্রিয়ায় ও দ্রুততার সাথে চাই।*
৬/প্রবাসী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন চাই।
৭/জাতীয় বাজেটে প্রবাসীদের জন্য (৫%) বিশেষ বরাদ্দ চাই।
৮/ বিদেশে কাগজপত্র বিহীন প্রবাসীদের বৈধকরণে সরকারের সহযোগিতা চাই।
৯/ বিদেশে প্রবাসীদের জন্য পর্যাপ্ত বাংলাদেশী দূতাবাস ও শ্রম কল্যাণ উইং চাই।
১০/ অভিবাসন ব্যয় ১ লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ও প্রবাস ফেরতদের কর্মসংস্থান, সুদমুক্ত পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধা চাই।
প্রবাসীদের সংকট উত্তরণ শীর্ষক আলোচনা শেষে সন্মানিত বিশিষ্টজন, সাংবাদিক সহ বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ এর বিভিন্ন ইউনিটকে সন্মাননা প্রদান করা হয়।
“প্রবাসী অধিকার সন্মাননা” প্রাপ্ত ব্যক্তি ও সংগঠন হচ্ছে:
১/ আলতাফুন্নেসা মায়া
চেয়ারম্যান
গণস্বাস্থ্য ট্রাস্টি বোর্ড।
২/ সাইফুল রাজিব, সম্পাদক, প্রবাসের সাতকাহন।
৩/ আইয়ুব আল আনসারী
সহ প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ।
৪/ তারেক রহমান
উপদেষ্টা, বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ।
৫/ এস এম সাফায়েত হোসাইন
সাধারণ সম্পাদক
কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ
বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ
৬/ ফয়েজ উল্লাহ
উপদেষ্টা, বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ।
৭/ মো: আব্দুস সোবহান হাওলাদার, সমন্বয়ক
বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, লিবিয়া শাখা।
৮/ বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, গ্রীস শাখা।
৯/বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, সৌদি আরব শাখা।
১০/ বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, মালয়েশিয়া শাখা।
১১/ বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, সংযুক্ত আরব আমিরাত শাখা।
১২/ বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, যুক্তরাজ্য শাখা।
১৩/ বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, ইতালি শাখা।
১৪/ বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, ফ্রান্স শাখা।
১৫/ বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, লেবানন শাখা।
১৬/ বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, দঃ কোরিয়া শাখা।
১৭/ বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, কুয়েত শাখা।
১৮/ বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, মালদ্বীপ শাখা।
১৯/ বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, ব্রনাই শাখা।
২০/ বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, মরিশাস শাখা।
২১/ বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, জার্মানি শাখা।
২২/ বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, ইথিওপিয়া শাখা।
২৩/ বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, জাপান শাখা।
২৪/ বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, ওমান শাখা।
২৫/ বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, কাতার শাখা।
২৬/ বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, বাহরাইন শাখা।
২৭/ বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, লিবিয়া শাখা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেজর জেনারেল ইব্রাহিম বীরপ্রতীক।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্র বিজ্ঞানী দিলারা জাহান চৌধুরী, ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান, এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, সিনেট সদস্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যারিষ্টার শিহাব উদ্দিন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, মোস্তফা ফিরোজ, সোলায়মান চৌধুরী, মেজর জেনারেল আ.ম.সা আমিন, ড. রেজা কিবরিয়া, অর্থনীতিবিদ ও আহবায়ক, গণ অধিকার পরিষদ, নুরুল হক নুর, প্রধান উপদেষ্টা, বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ ও সদস্য সচিব, গণ অধিকার পরিষদ, গণঅধিকার পরিষদ এর কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়ক রাশেদ খান, ফারুক হাসান, বিপ্লব কুমার পোদ্দার, হাসান আল মামুন, যুগ্ন আহ্বায়ক শাকিল উজ্জামান যুগ্ম সদস্য সচিব তারেক রহমান, ছাত্র অধিকার পরিষদ এর সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আরিফ, যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাদিম হাসান, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা সহ আরো অনেকে।
আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের সেবা ডেস্কের সমন্বয়ক আব্দুস সোবহান হাওলাদার, সোহাগ হোসেন ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাজু চৌধুরী, আবির খান সহ আরো অনেকে।
অনুষ্ঠানে অনলাইনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী মো: কবীর হোসেন ও প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন উপকমিটির কমিটির সকলে ও কেন্দ্রীয় কমিটি ও দেশীয় কমিটির অসংখ্য নেতাকর্মী।
আরো উপস্থিত ছিলেন গণ অধিকার পরিষদ ও ছাত্র, যুব, শ্রমিক, পেশাজীবি ও প্রবাসী অধিকার পরিষদ এর অসংখ্য নেতাকর্মী।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল অতিথিবৃন্দ ও নেতাকর্মী প্রবাসীদের যৌক্তিক ১০ দফা দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে সরকারকে অতিশীঘ্রই দাবী গুলো বাস্তবায়ন করার জন্য জোর দাবি জানান।
অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ এর কেন্দ্রীয় কমিটির আইয়ুব আল আনসারী ও ইমরান আল নাজির।
আমরা আশা করব সকল প্রবাসীদের প্রাণের যৌক্তিক ১০ দফা দাবী বাস্তবায়নে সরকার ও রাষ্ট্র জোড়ালো ভূমিকা রাখবে।