অসহনীয় তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন : স্বস্তির বৃষ্টির অপেক্ষা
সব্যসাচী বিশ্বাস,
বিশেষ প্রতিনিধি :
অসহনীয় তাপপ্রবাহে সারাদেশের জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে দিন-রাতের অধিকাংশ সময় থাকছে না বিদ্যুৎ। গরমে হিটস্ট্রোকের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। ৪ জুন সন্ধ্যায় যশোরের অভয়নগর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের সিংগাড়ী গ্রামে হিটস্ট্রোক করে মারা গেছেন বিল্লাল ফকির নামের এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি।
বৃষ্টির দেখা নেই বহুদিন।
যশোরসহ দক্ষিণাঞ্চলের জনসাধারণ ভুলেই গেছে শেষ কবে বৃষ্টি হয়েছিল।
সারাদেশের সাথে রৌদ্রের খরতাপে পুড়ছে এ অঞ্চল । নেই মেঘ, নেই বৃষ্টি, নেই স্বস্থির বাতাস। একটানা রোদ্দুর, সকাল থেকেই শুরু করে দুপুরে তা চরমে ওঠে। গ্রামের বেশিরভাগ ঘরবাড়ি টিনের চাল হওয়ায় রোদের তাপে তা চরম অবস্থার সৃষ্টি করছে। নির্জন দুপুর শব্দগুচ্ছ সাহিত্যের ভাষায় ছিলো এতদিন, এখন তা বাস্তবে। ভোগান্তিতে জনসাধারণ। উপজেলার বেশিরভাগ পুকুর, ডোবা, বিল এমনকি টিউবওয়েলেও পানি নেই। মাটির নিচের পানির লেয়ার নেমেছে নিচে। স্বস্তি নেই কোথাও। সারা বাংলাদেশের সাথে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হলেও বন্ধ হয়নি মাদরাসা।শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম হলেও চলছে ক্লাস। বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না বা বের হতে চাইছে না মাদরাসার শিক্ষার্থীরা।রোদের প্রখরতা দিন দিন বাড়ছে তো বাড়ছেই।
বিশেষ সমস্যার মধ্যে আছে খেটে খাওয়া দিন মজুরেরা। তাদের ঘরে নেই খাবার আবার প্রচন্ড তাপে অসুস্থ হওয়ার ভয়।বাজারগুলোর দোকানও বেশিরভাগ ফাঁকা নেই বেচাকেনা। যানবাহনের যাত্রী নেই, ভ্যান রিকশা আটোবাইকের চালকেরা দুরাবস্থার মধ্যে সময় পার করছে। যাত্রী না হলে তাদের আয়-রোজগারে ভাটা পড়ে। শিশু রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। অস্বাভাবিক এই তাপমাত্রা শরীরে মানিয়ে নিতে পারছে না শিশু ও বৃদ্ধরা। গাছের ছায়ায় বসেও মিলছে না বিশেষ শান্তি, যে টুকু বাতাস আসছে তা প্রচন্ড গরম, মনে হচ্ছে আগুনের হল্কা। দিনের বেলায় এমন পরিস্থিতির মোকাবেলা করে কাটালেও রাতে নেই ঘুম। সারারাত হাত পাখার বাতাস খেয়ে শরীর ঠান্ডা করতে করতে ঘুমানোর সময় নেই। তার উপর বিদ্যুতের লোডশেডিং তো আছেই। এক ঘন্টা বিদ্যুৎ চলমান থাকলে পরবর্তী দুই ঘন্টা লোডশেডিং চলছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অভয়নগর উপজেলার শ্রীধরপুর ইউনিয়নের বর্ণী হরিশপুর বাজারের দোকান খোলা কিন্তু কেউ নেই। ক্রেতার অভাবে দোকান খোলা রেখে দোকানীরা গাছের ছায়ায় বিলের পাশে বসে আছে। চায়ের দোকানদার আসর আলী বলেন, বাজারে আসতে মানুষ ভয় পাচ্ছে, এরকম কিছু দিন চললে স্বাভাবিক জীবন আর থাকবে না। ড্রামে রাখা পানি সাথে সাথে গরম হয়ে যাচ্ছে।
লোকজন নেই বাজারে বেচাকেনাও নেই।উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়নের মফস্বল বাজারগুলোর একই অবস্থা। অভয়নগর উপজেলার নদীবন্দর নামে দেশে বিখ্যাত নওয়াপাড়ায় জাহাজ থেকে মালামাল উঠানামার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। কোনো শ্রমিক এই গরমে কাজ করতে চাইছে না।ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে তাপপ্রবাহের কারণে। কবে আসবে বৃষ্টি, কবে স্বস্তিতে ফিরবে উপজেলাবাসী? প্রশ্ন জন সাধারণের মনে।
নবদূত/ ৫/৬/২৩