জন্মদিন মানুষের জীবনে একটি স্মরনীয় দিন। এ দিন এলেই অধুনাকালে সব বয়সী মানুষের; বিশেষ করে, ছোট বাচ্চাদের মধ্যে খুব একটা কৌতহুল কাজ করে। তারা তাদের বন্ধু-বান্ধব, আতত্মীয়-স্বজনদের বিষয়টি অবগত করানোর চেষ্টা করে। এমনকি বাবা-মাকে দিনটি ধুমধামের সাথে পালন করতে চাপ প্রয়োগ করে। বাবা-মা সন্তানের মনোরঞ্জনের জন্য অনেক সময় বাধ্য হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দিনটি উদ্যাপন করে। মুসলমান হিসেবে আমরা যা কিছু করি শরীয়ত সেটা অনুমোদন করে কি-না তা আগে জানা দরকার। সুনিদ্দিষ্ট দিনে জন্মদিন পালন করা শরীয়ত অনুমোদন করে না। বরং ইসলামী শরীয়াহ জন্মদিনে রোজা রাখতে উৎসাহিত করেছে। রাসুল (সাঃ) প্রতি সোমবার রোজা রাখতেন। সাহাবিগণ এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তরে বলেন, এদিন আমার জন্মদিন এবং এদিন আমার উপর প্রথম অহি অবতীর্ণ হয়। এই প্রসঙ্গে মিশকাত শরীফের بَابُ صِيَامِ التَّطَوُّعِ অধ্যায় এসেছে।
عَن أَبِي قَتَادَةَ قَالَ: سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ صَوْمِ الِاثْنَيْنِ فَقَالَ: ্রفِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَيَّগ্ধ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ অর্থাৎ, হযরত আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সোমবারের সওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এ দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি। এ দিনে আমার ওপর (কুরআন) নাযিল করা হয়েছে (সহীহ মুসলিম)। যে কারণে আমরা যারা প্রাপ্ত বয়স্ক তারা জন্মদিনে রোজা রাখতে পারি। আর বাচ্চরা যাদের পক্ষে রোজা পালন করা সম্ভব নয়, তাদের পক্ষ থেকে নিজ পিতা-মাতা রোজা রেখে তাদের কল্যাণের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারে। কেননা সন্তানের কল্যাণের জন্য বাবা-মায়ের দোয়া করা অবশ্যই কর্তব্য। নবী-রাসুলগণ এর বাস্তব প্রমাণ। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) যখন তাঁর স্ত্রী হাজেরা ও শিশু পূত্র ঈসমাইল (আঃ) কে মরুময় প্রান্তরে রেখে আসেন, তখন তিনি তাদের কল্যাণ ও নিরাপত্তার জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন। এ ব্যপারে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, رَبَّنَاۤ اِنِّیۡۤ اَسۡکَنۡتُ مِنۡ ذُرِّیَّتِیۡ بِوَادٍ غَیۡرِ ذِیۡ زَرۡعٍ عِنۡدَ بَیۡتِکَ الۡمُحَرَّمِ ۙ رَبَّنَا لِیُـقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ فَاجۡعَلۡ اَفۡئِدَۃً مِّنَ النَّاسِ تَهۡوِیۡۤ اِلَیۡهِمۡ وَارۡزُقۡهُمۡ مِّنَ الثَّمَرٰتِ لَعَلَّهُمۡ یَشۡکُرُوۡنَ অর্থাৎ ‘হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমি আমার কিছু বংশধরদেরকে ফসলহীন উপত্যকায় তোমার পবিত্র ঘরের নিকট বসতি স্থাপন করালাম, হে আমাদের রব, যাতে তারা সালাত কায়েম করে। সুতরাং কিছু মানুষের হৃদয় আপনি তাদের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন এবং তাদেরকে রিযিক প্রদান করুন, ফল-ফলাদি থেকে; আশা করা যায়, তারা শুকরিয়া আদায় করবে’ (সুরা ইব্রাহিমÑ৩৭)। তাই আসুন আমরা অনিসলমিক সভ্যতা ও সংস্কৃতি মোমবাতি জ¦ার্লিয়ে, কেক কেটে জন্মদিন পালন না করে, রাসুল (সাঃ) এর শেখানো নিয়মত রোজা রেখে দিনটি পালনের অভ্যাস গড়ে তুলি। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : উপাধ্যক্ষ : গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা, যশোর।