নবদূত রিপোর্ট:
করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনলাইন পরীক্ষার কথা ভাবলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানান তাদের এ বিষয়ে কোনো দক্ষতা নেই। এছাড়া ১২.৭% শিক্ষার্থী পর্যাপ্ত দক্ষ, ২৯.৮% মোটামুটি দক্ষ, ২৪% কিছুটা দক্ষ, ১২.৪% দক্ষতার ব্যাপারে সন্দিহান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বিষয়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ-এর সোস্যাল সায়েন্স টিম’-এর এক জরিপ প্রতিবেদনের ফলাফলে এসব তথ্য উঠে আসে।
চলতি বছরের ৩০ মে থেকে অনলাইনে হওয়া এই জরিপে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল অনুষদ ও ইন্সটিটিউটের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন বিভাগের সকল বর্ষের ৩৭৩০ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ৫৫.৫% ছাত্র এবং ৪৩.৪% ছাত্রী এবং ১.১% শিক্ষার্থী লিঙ্গ প্রকাশে অনিচ্ছুক। ব্যবসায় শিক্ষা ও কলা অনুষদ থেকে সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। যথাক্রমে ২৬.৯ ও ২৬ শতাংশ। করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের ৪৪.৫% গ্রাম, ১৫.৭% ছোট শহর, ১৯.৩% শহর ও ২০.৩% মহানগর এলাকায় অবস্থান করছেন।
প্রতিবেদনের ফলাফলে দেখা যায়, জরিপে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনলাইনে ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ৫২.৭% শিক্ষার্থী ইচ্ছুক, ৪৫% শিক্ষার্থী ইচ্ছুক নন এবং বাকিরা এখনো নিশ্চিত নন। ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮৭.৪% অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে পরীক্ষা দিতে আগ্রহী। এছাড়াও অনেকেই ওপেন বুক (২১.১%), এমসিকিউ (১৯.৭%), সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (১৯.৪%) বা বড় প্রশ্নোত্তর (৫.৪%) পদ্ধতিতে এবং শুধুমাত্র ৪.২% শিক্ষার্থী লাইভ ভিডিওর মাধ্যমে পরীক্ষা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
অনলাইন পরীক্ষায় অনিচ্ছুকের মূল কারণ দূর্বল নেটওয়ার্ক সংযোগ:
জরিপে অনলাইনে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা ভালো নেটওয়ার্ক সংযোগ না থাকায় ৫৭.৪%, বিদ্যুতের সমস্যা ৩৮.১% বাড়িতে পরীক্ষা দেয়ার নেয়ার পরিবেশ না থাকা ৪৫.৮% প্রয়োজনীয় ডিভাইস না থাকা ২২.২%, ডিভাইস বা ডেটা কেনার সামর্থ না থাকা ১৬.৬%, পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে সন্দিহান থাকা ৫৭.৪%, অনলাইন পরীক্ষার অভিজ্ঞতা না থাকা ৪০.৬% এবং প্রস্তুতি না থাকাকে ২৭.৩% শতাংশ শিক্ষার্থী দায়ী করেছেন।
অনলাইন ক্লাসে অসন্তুষ্ট ৪৬.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী:
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে ২৩.১% শিক্ষার্থী অসন্তুষ্ট ও ২৩.৩% শিক্ষার্থী খুব বেশি অসন্তুষ্ট বলে মত প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে ২৩.৯% শিক্ষার্থী মোটামুটি সন্তুষ্ট, এবং মাত্র ২.৭% শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে সন্তুষ্ট বলে মতামত দিয়েছেন।
অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে সিলেবাস শেষ হয়েছে ৪৬.৩% শিক্ষার্থীর এবং শেষ হয়নি ৫৩.৭% শিক্ষার্থীর।
অনলাইন পরীক্ষায় অংশ নেয়ার দক্ষতা নেই ২১ শতাংশ শিক্ষার্থীর:
জরিপে অনলাইন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য পর্যাপ্ত টেকনিক্যাল দক্ষতা আছে কিনা জানতে চাওয়া হলে ১২.৭% শিক্ষার্থী পর্যাপ্ত দক্ষ, ২৯.৮% মোটামুটি দক্ষ, ২৪% কিছুটা দক্ষ, ১২.৪% দক্ষতার ব্যাপারে সন্দিহান এবং ২১% শিক্ষার্থী কোন দক্ষতা নেই বলে জানান। ইতিপূর্বে অনলাইনে অনুষ্ঠিত মিড-টার্ম বা সমমান পরীক্ষায় বিভাগ/ইন্সটিটিউট থেকে ৬২.৮% শিক্ষার্থী সঠিক দিকনির্দেশনা পেয়েছিলেন, ২৩.৮% শিক্ষার্থী কোনো রকম দিকনির্দেশনা পাননি এবং বাকি ১৩.৪% শিক্ষার্থী এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে মতামত দিয়েছেন।
অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে পরীক্ষা দিতে আগ্রহী ৮৭.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী:
জরিপে দেখা যায়, অনলাইনে ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮৭.৪% শতাংশ শিক্ষার্থী অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে পরীক্ষা দিতে আগ্রহী। এছাড়াও ওপেন বুক ২১.১%, এমসিকিউ ১৯.৭%, সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ১৯.৪%, বড় প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে ৫.৪% এবং শুধুমাত্র ৪.২% শিক্ষার্থী লাইভ ভিডিওর মাধ্যমে পরীক্ষা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড মোঃ মঞ্জুরুল করিম এবং কমিউনেকশন ডিসঅর্ডারস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারপার্সন তাওহিদা জাহান এর সার্বিক দিক-নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধায়নে গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ-এর সোস্যাল সায়েন্স টিম’-এর মোঃ তানবীরুল ইসলাম (টিম ম্যানেজার), সুমাইয়া ইমতিয়াজ (কো অর্ডিনেটর), মোঃ আতিকুজ্জামান, জাওয়াদ সামস, রাগীব আনজুম, মো. ওমর ফারুক ও সুমাইয়া আহমেদ। গবেষণা প্রবন্ধটি বিশ্লেষণ ও পুনর্বিন্যাসে সহযোগিতা করেছেন নাসরিন জেবিন, সাইফুল্লাহ সাদেক, শাহরিন ফারাহ খান, এবং ইসতিয়াক উদ্দিন।