সলিসিটর বিপ্লব কুমার পোদ্দার (রাজনৈতিক বিশ্লেষক)
এই ফলাফল শুধু আফগানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে বলে আমি মনে করিনা। কারণ আমাদের এশিয়ায় রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে যাবে , সাথে পৃথিবীর রাজনীতিতেও পরিবর্তন হবে ।
অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে থাকা যুক্তরাষ্ট্র এরকম বাধ্য হয়েই আফগান থেকে ফিরে এলো খালি হাতে, যা নাকি তাদের নাগরিকদেরকে দুই ট্রিলিয়ন ইউএস ডলারের বিপরীতে ৬.৫ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার ২০৪৮ সাল পর্যন্ত ঋণ পরিষোধ করতে সময় লাগবে। এবার ফিরে দেখা যাক হতাহতের সংখ্যা। যদিও সেটা পুরোপুরি সঠিক ভাবে ধরা যায়না, কম বেশি হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী আফগান যুদ্ধে ২৪৪৮ মার্কিন সেনা নিহত হয়। কন্ট্রাক্টর মারা যায় ৩৮৪৬ , অন্যান্য সহযোগী থেকে মারা যায় ১১১৪, আফগান মিলিটারি এবং পুলিশ থেকে ৬৬০০০ , সিভিলিয়ান থেকে ৪৭২৪৫ , তালেবান এবং অন্যান্য ৫১১৯১, এইড ওয়ার্কার ৪৪৪ এবং সাংবাদিক ৭২ জন। এই যুদ্ধ কি শুধুই গণতন্ত্র নাকি পেশিতন্ত্রের মাধ্যমে অন্য দেশের সম্পদ লুন্ঠনের পরিকল্পনা ছিল , তা আজ বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। তবে এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি যে উদাহরণ সৃষ্টি করলো , তা আমাদের সবার জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে।
ছোটবেলার পড়াটাই সত্যি হয়ে যায় । যেমন, পরের জন্য গর্ত খুঁড়লে নিজেকেই সেই গর্তে পড়তে হবে কোনো একদিন তাই সৎ পথে থেকে ব্যাক্তি, দল, কূটনীতি কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সততার সাথে পরিছন্ন ভাবনা থাকা জরুরী। নাহলে সে যত বড়ই হোকনা কেনো, তার মূল্য অনেক উচ্চহারে পরিশোধ করতে হয়।
এবার নতুন এক চ্যালেঞ্জ আফগানিস্তানের জন্য অথবা তালেবানদের জন্য । যদিও আমি আশাবাদী , কারণ যেভাবে তালেবানরা নতুন যাত্রা শুরু করেছে , তা অনেকটা আশার আলো দেখাচেছ। আমি এক উপদেশ দিতে পারি। , অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন করা ।
আমি নিশ্চিত, তালেবানরা যে ঘোষণা দিয়েছেন তা যদি পালন করতে পারে তবে তারাই নির্বাচিত হবেন। তখন আর কারো কোনো বিরোধিতা করার সুযোগ থাকবে না । সময় পাল্টেছে , তাই যুগোপযোগী পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে , তবেই সফলতা ধরা দেবে।
বিশেষ করে চীন , পাকিস্তান এবং ইরান এর মধ্যে নতুন যে বোঝাপড়া, সাথে রাশিয়ার সমর্থন অনেকের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলবে। তা নিয়ে কোনো চিন্তার অবকাশ থাকতে পারে না।
বাংলাদেশকে এখন খুব সাবধানে আগামীর পথ চলতে হবে। সে কূটনীতি কিংবা নিজ দেশের রাজনীতি । মাঝে মধ্যে কিছু সুযোগ সন্ধানীরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করে , তাদের আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করে সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। শিকদার পরিবার, সোবহান পরিবার সহ তথাকতিত শ্রেণীর জন্য এক আইন আর সাধারণ মানুষের জন্য আর এক আইন বেশি দিন চলতে পারেনা ।দেরি না করে , নাটকের অবতারণা না করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করা অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে। নাহলে যেকোনো বিপদ ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা।
দেশটা সবার , তাই সবাইকে দেশকে ভালোবেসে দেশের জন্য কাজ করতে হবে , তখনই আমরা পৃথিবীর বুকে পাটা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো । আমাদের কোনো প্রভুর দরকার হবে না