নবদূত রিপোর্ট:
আজ (২৩ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কালো দিবস। ২০০৭ সালের এই দিনে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মদদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের গ্রেফতার, নির্যাতন করে তৎকালীন সেনা সদস্যরা।
সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির তৎকালীন সভাপতি সদরুল আমিন, যিনি কারারুদ্ধ ছিলেন চার মাসেরও বেশি সময়। যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,শুধুমাত্র একটি কেনো কালো দিবস? ঐদিন কে কেনো জিইয়ে রাখা হলো! এরপরেও অনেক ঘটনা ঘটেছে যা ঐদিনের চোয়েও মারাত্মক।
তিনি আরো বলেন, আমি যখন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলাম। তখন দলমত নির্বিশেষে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতাম। আমাদের একটি ইউনিটি ছিলো। আমরা শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে বড় করে দেখতাম। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেখানে বিপদের সম্মুখীন হয়েছে আমরা সেখানে গিয়েছি, কথা বলেছি ; অধিকার আদায় করেছি। বর্তমান শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই জায়গা টা নেই এবং সবসময় দলীয়করণকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক সদরুল।
*কী ঘটেছিলো সেদিন?
২০০৭ সালের ২০ আগস্ট বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের মধ্যে ফুটবল খেলা চলছিল। ওই খেলার জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সেনা সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাঁধে।সেনা সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালালে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম সেনা সদস্যদের দ্বারা লাঞ্ছনার শিকার হন।বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সেনাবাহিনীর সদস্যদের ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান। এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করার দাবি জানান।
এরপর দিন ২১ আগস্ট শিক্ষার্থীার রাস্তায় নেমে পড়েন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, শাহবাগ, নীলক্ষেত সহ বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র-শিক্ষক সম্মিলিতভাবে মিছিল সমাবেশ করে। পুলিশের টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটে আহত হন শত শত ছাত্র। আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র থেকে ক্যাম্প সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় সেনাবাহিনী।
তারপর দিন ২২ আগস্ট সেই আন্দোলন গোটা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে। রাজশাহীতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন রিকশাচালক আনোয়ার। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠলে তৎকালীন সেনা-তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২২ আগস্ট বিভাগীয় শহরগুলোতে কারফিউ জারি করে। ওইদিন সন্ধ্যার মধ্যেই ঢাবির আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপর ২৩ আগস্ট রাতে আটক করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদকে। তাদের চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় অজানা স্থানে।তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি সদরুল আমিনকে গ্রেফতার করা হয়। চারমাসেরও বেশি সময় ছিলেন তিনি কারাগারে।
এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইদুর রহমান খান, আবদুস সোবহান, মলয় কুমার ভৌমিক, দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস, আবদুল্লাহ আল মামুন এবং সেলিম রেজা নিউটনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশের অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে ঢাবির আরও দুই শিক্ষকসহ ৫ ছাত্র নেতাকে গ্রেফতার করে সেনা সমর্থিত সরকার।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়।ঘটনার পর দীর্ঘ ৬৬ দিন পর খুলে দেওয়া হয় ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচি:
সোমবার(২৩ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘কালো দিবস’ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচি অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ কালো ব্যাজ ধারণ করবেন।
এছাড়া বেলা ১১টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রশাসনিক ভবনস্থ অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ক্লাসরুমে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।