Wednesday, December 25, 2024
Homeসারাদেশযশোরে গ্রামীণ আর্থ-কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভুমিকা রাখছে এজেন্ট ব্যাংকিং

যশোরে গ্রামীণ আর্থ-কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভুমিকা রাখছে এজেন্ট ব্যাংকিং

বিলাল মাহিনী, যশোর:

সারাদেশের মতো যশোরের গ্রামীণ অর্থনীতি ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যাপক ভুমিকা রাখছে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম।

জেলার সব উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে ব্যাংকের এজেন্ট শাখা।
সুবিধা পাচ্ছে গ্রামের প্রান্তিক ও স্বল্প আয়ের মানুষ।

জেলার অন্যান্য উপজেলার মতো অভয়নগর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের হাতের কাছে এখন ব্যাংকিং সুবিধা। এ উপজেলার
মফস্বল বাজারগুলিতে গড়ে উঠেছে এই ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক এর এজেন্ট শাখাগুলো এ অঞ্চলের আর্থিক লেনদেন করেছে সহজ থেকে সহজতর।

আউটলেট যা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ব্যাংক সেবাগ্রহীতার লেনদেন নির্বাহ করে।ব্যংকের শাখার পরিবর্তে খুচরা আউটলেটের মালিক অথবা কর্মচারী লেনদেন নির্বাহ করে যা সেবাগ্রহীতাকে টাকা জমা করা, টাকা উত্তোলন, ফান্ড ট্রান্সফার, বিল পরিশোধ, হিসেব জানতে চাওয়া অথবা সরকারী সুবিধা গ্রহণ করা ইত্যাদি সুবিধা দিয়ে থাকে। ব্যাংকের এজেন্ট হিসেবে থাকতে পারে ফার্মেসী, সুপারমার্কেট, লটারী আউটলেট, ডাকঘর ইত্যাদি। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান হারে এইসব খুচরা বিক্রেতা ও ডাকঘরগুলো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ বণ্টন মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারিত হয়ে আসছে। এ অঞ্চলে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এজেন্ট ব্যাংকিং।

অভয়নগর উপজেলার ভৈরব নদের উত্তর-পূর্ব জনপদের সিংগাড়ী, হরিশপুর, ইছামতী, নাউলী, মরিচা বাজারে অবস্থিত এজেন্ট ব্যাংকগুলো এক অনবদ্য ভূমিকা রাখছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে। প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে চলে এ ব্যাংকিং কার্যক্রম। বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা তোলা, বিদ্যুৎ বিল জমা করা, টাকা ট্রন্সফার করা বিভিন্ন প্রকার সুবিধা ভোগ করছেন এই জনপদের সাধারণ মানুষ।

উপজেলার ৫ নং শ্রীধরপুর ইউনিয়নের হরিশপুর বাজারে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং ডাচ বাংলা ব্যাংকের দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। হরিশপুর বাজারের পাশের গ্রাম পাথালিয়া থেকে বিদ্যুৎ বিল জমা করতে আসা জনৈক গৃহবধু জানালেন, এই ব্যাংকিং ব্যবস্থা থাকার জন্য আমাকে নওয়াপাড়ায় যেতে হচ্ছে না। সময় এবং অর্থ দুটোই বেঁচে যাচ্ছে আমাদের। শশা ও কাঁচা তরকারির ব্যবসায়ী মফিজুর রহমান বলেন, আমরা এখান থেকে মাল ক্রয় করে ঢাকাতে পাঠাই আর ঢাকা থেকে আড়ৎদারেরা আমাদের একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেয়। খুব সহজেই এই অর্থিক লেনদেন সমাধান হচ্ছে।

অভয়নগর উপজেলার ৬ নং বাঘুটিয়া ইউনিয়নের অগ্রণী ব্যাংক সিংগাড়ী বাজার শাখার পরিচালক সেলিম রেজা জানান, আমরা আমাদের এজেন্ট শাখা গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল গ্রহণসহ বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকি। তবে বিনিয়োগ বা লোন কার্যক্রম এখনো চালু হয়নি। সিংগাড়ী বাজারের ডাচ বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট শাখায় বিদ্যুৎ বিল দিতে আসা জয়খোলা গ্রামের অমিত রায় জানালেন, আগে বিদ্যুৎ বিল জমা দিতে নওয়াপাড়ায় যেতে হতো সারাদিনের কাজ বন্ধ করে। কিন্তু এখন বিদ্যুৎ বিল জমা দিয়ে গ্রাহক কপি নিতে মোট ২০ মিনিটে বাড়ি ফিরে যেতে পারি।

ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের সিংগাড়ী এজেন্ট শাখার পরিচালক ইমরানুল ইসলাম রুমন জানান, ২০১৯ সালে এই শাখা স্থাপনের পর হতে বর্তমান পর্যন্ত সময়ে একাউন্ট হোল্ডার প্রায় ১ হাজার এবং আমানত প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এই শাখাও বিদ্যুৎ বিল গ্রহণ সহ রেমিটেন্স কার্যক্রম, অনলাইন ব্যাংকিং সেবা ছাড়াও ব্যাংকিং কার্যক্রমের সকল সেবা দেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, ব্যাংকিং সেবা একদম প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া এই শাখাগুলোর মুখ্য উদ্দেশ্য।

সিদ্দিপাশা ইউনিয়নের আমতলায় অবস্থিত ব্যাংক এশিয়া’র আমতলা শাখার পরিচালক জসীম উদ্দিন বাচ্চু জানান, ডিপিএস, জিপিএস,বিভিন্ন প্রকার ভাতা উত্তোলন, স্কুল ব্যাংকিং, পাসপোর্ট ফিস প্রদানসহ ব্যাংকিং এর প্রায় সকল প্রকার সেবাই প্রান্তিক জনসাধারণ ভোগ করে থাকে।

ভৈরব উত্তর-পূর্ব পাড়ের এ জনপদের বিভিন্ন ব্যাংকের এজেন্ট শাখা প্রায় ১২ টির মত। এই শাখাগুলো জনসাধারণের যেমন সেবা প্রদান করছে তেমনি প্রায় শতাধিক শিক্ষিত যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। হরিশপুর বাজারের ডাচ বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট শাখার কর্মচারী লিটন জানান, আমি আসলেই কোনোভাবেই আমার সুবিধামত কাজ পাচ্ছিলাম না, গত ছয় বছর প্রায় বেকার পড়ে আছি, মাঠে বিলে দিনমজুরের কাজও করতে পারি না।এখানকার এই কাজে নিয়োগ পেয়ে আমি সত্যিই নিজেকে ধন্য মনে করছি, এবং যে পরিমান বেতন পাই তাতে খুব ভালোভাবেই আমার জীবন চলে।

এলাকাবাসী যেমন সেবা পাচ্ছে তেমনি উদ্যোক্তারাও লাভবান হচ্ছেন। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক বিশাল ভূমিকা পালন করে চলেছে এই এজেন্ট ব্যাংকিং শাখাগুলো।

RELATED ARTICLES

Most Popular