Saturday, September 21, 2024
Homeজাতীয়শিল্পীদের প্রতি অন্যায় আচরণের প্রতিবাদে শাহবাগে সাংস্কৃতিক সমাবেশ

শিল্পীদের প্রতি অন্যায় আচরণের প্রতিবাদে শাহবাগে সাংস্কৃতিক সমাবেশ

নবদূত রিপোর্ট:

শিল্পীদের প্রতি অন্যায় আচরণের প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে চারটায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে নাট্য পরিচালক মামুনুর রশীদ বলেন,”অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই আজ আমাদের এই সমাবেশ। বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলনে মুখ্য ভুমিকা পালন করেছে সাংস্কৃতিক কর্মীরা,শিল্পীরা। ভাষা আন্দোলন, পয়ষট্টির ছাত্র আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে, পরবর্তী স্বৈরাচার বিরোধী লড়াউসহ সকল লড়াইয়ে শিল্পীরা অগ্রগামী শক্তি হিসেবে ভুমিকা পালন করেছে। কিন্তু আমরা অত্যান্ত দুঃখ,বেদনা,ক্ষোভ সঙ্গে নিয়ে দেখছি মাঝে মাঝে আমাদের শিল্পীদের অধিকার হরণ করা হয়,অপমানিত করা হয়, অবহেলা করা হয়। শিল্পীর প্রতি কোনো অন্যায় হলে সমাজ তার পাশে বা দাঁড়ানোর কারণ, সরকার প্রকৃতার্থে শিল্পীদের কখনো মূল্যায়ন করেনি। বিভিন্ন আন্দোলনে শিল্পীদের অবদান মেনে নিয়ে কোনো সরকার তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি।

আজকে আমি নিজের অধিকারের কথা বলতে পারব না,মানুষের অধিকারের কথা বলতে পারব না এবং বলতে গেলেই সমাজে আমাদের একটা নিচু শ্রেণির প্রাণী হিসেবে দেখা হয়। জারি গান,পালা গান যারা গায় তাদেরকে জেলখানায় নিয়ে শাস্তি দেয়া হচ্ছে অথচ যারা ধর্মের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, রাষ্ট্রেকে চ্যালেঞ্জ করছে তাদের কোনো শাস্তি হচ্ছে না। এগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারছি শিল্পীর পাশে শিল্পীকে দাঁড়াতে হবে।”

ভার্চুয়ালী যুক্ত থেকে ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন,”পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে নারীরা নিগ্রহের শিকার একটা সামাজিক ব্যাধিতে পরিনত হয়েছে। এবং এটা দুর্ভাগ্যজনক, আমরা গর্ব করি নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
মৌলবাদী যারা নারীকে একটা নিকৃষ্ট প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করে, ভোগের প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে। মৌলবাদের বিরুদ্ধে আমাদের রাজনৈতিকভাবে লড়তে,সামাজিকভাবে লড়তে হবে, সাংস্কৃতিকভাবেও লড়তে হবে। সমাজের এসকল ব্যাধি থেকে মুক্তির পথ রয়েছে ৭২এর সংবিধানে। নারীর অধিকার থেকে শুরু করে সমাজের নির্যাতিত, নিগৃত মানুষের সকল অধিকার বাস্তবায়ন করতে পারতাম এই ৭২এর সংবিধানের মাধ্যমে।”

গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ বলেন,” স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে শিল্পীর প্রতি শুধু অবহেলা রয়ে গেছে বাংলাদেশে।একজন শিল্পী পেশা হিসেবে শিল্পী নিতে পারেন না। ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে থাকে অন্য কোনো পেশার কথা বলতে হয়। শিল্পীদের জন্য স্যালারী গ্র্যান্ড চালু করতে হবে। শিপ্লীর জন্য কর্মক্ষম ক্ষেত্র তৈরী করতে হবে।

এসময় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাড়িয়ে গেছে উল্লেখ করে তিন বলেন,শিল্পকলা একাডেমিকে স্পষ্ট করে বলতে তারা শিল্পীর জন্য কী করছে।

সমাবেশের আয়োজক মোস্তফা মনন লিখিত বক্তব্য পাঠকালে ছয় দফা দাবি পেশ করে বলেন,”আজ এই প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ থেকে আমরা দাবী করছি যে-১। শিল্প ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ এবং হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। শিল্প-সংস্কৃতি স্বাভাবিক গতিপ্রবাহকে বাধাগ্রস্থ করা যাবে না। ২। কোন অনিয়মতান্ত্রিক আইনী প্রক্রিয়ায় যেন শিল্পীদের হেয় করা না হয়। ৩। আর কোন শিল্পীকে যেন মোরাল পুলিশিং, সাইবার বুলিং, মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হতে না হয়। ৪। সরকার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায় থেকে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করছি। ৫। কিছু প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়ের বিকৃতির বিরুদ্ধে বিটিআরসির সক্রিয় ভূমিকা কামনা করছি। ৬। তল্লাশী, গ্রেফতার এবং রিমান্ড বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া দিকনির্দেশনার পূর্ণ বাস্তবায়ণ চাই।”

নির্মাতা অপরাজিতা সঙ্গীতা ও সুরভী রায়ের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন লেখক ও উপন্যাসিক সকৃত নোমান,বিথী ঘোষ,যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম, অভিনয় শিল্পী ও মঞ্চ নির্দেশক রিতু সাত্তারসহ আরো অনেক।

এসময় মিজানুর রহমানের নির্দেশনায় “একটি ফুল দেখা যায়” পথনাটক প্রদর্শন করে থিয়েটার বায়ান্ন, “মোড়ল পুলিশিং”নামে নাটক প্রদর্শন করে প্রাচ্যনাট। বাংলাদেশ আবৃতি সংসদ লুৎফুর রহমান লিটনের লেখা ” পুরুষতন্ত্রের দঁড়ি এবং একজন পরী” কবিতা কোরাস করা হয়। শারমিন ইতি সেই মেয়েটি শিরোনামে একটি গান পরিবেশন করেন।

RELATED ARTICLES

Most Popular