Thursday, November 14, 2024
Homeমতামতস্বৈরতন্ত্রের পতন হয় স্বৈরাচার রয়ে যায়

স্বৈরতন্ত্রের পতন হয় স্বৈরাচার রয়ে যায়

৬ ডিসেম্বর সাবেক সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদের পতন দিবস। (১৯৮২-১৯৯০) দীর্ঘ ৯ বছরের গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের এই দিনে সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদ ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের সরকারকে হটিয়ে সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন। এরশাদ ক্ষমতা নেওয়ার দিন থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল হয়, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই বেশ সরব প্রতিক্রিয়া দেখান। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে কলাভবনে পোস্টার লাগাতে গিয়ে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ৩ নেতা গ্রেফতার হন। ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়।

১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলনের স্মরণে ৮২ সালের ১৭ ই সেপ্টেম্বর ‘ শিক্ষা দিবস ‘ পালন করার জন্য ১৪টি ছাত্র সংগঠন একত্র হয়। পরে আরও ৫ টি ছাত্রসংগঠন যোগ দেয়। ৮৩ সালের ১৪ ই ফেব্রুয়ারি ‘সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ‘সচিবালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষন করে। জয়নাল, দিপালী, জাফর,কাঞ্চনসহ বেশ কয়েকজন নিহত ও প্রায় শতাধিক আহত হয়। এছাড়া পরবর্তী ৮ বছরের সংগ্রামে নুর হোসেন, ডা.মিলন  ইব্রাহিম, দেলোয়ার, মনিরুজ্জামান, ময়েজউদ্দিন সহ অসংখ্য মানুষকে জীবন দিতে হয়।

তবে আওয়ামীলীগ এরশাদের অবৈধ ক্ষমতা দখলকে শুরু থেকেই এক প্রকার প্রচ্ছন্ন সমর্থন দিয়েছিল।এরশাদ ক্ষমতা দখলের পর শেখ ফজলুল করিম সেলিম সম্পাদিত আওয়ামীলীগপন্থী পত্রিকা ‘ দৈনিক বাংলার বাণী ‘তে সেদিন মোনাজাতরত এক নারীর ছবি ছাপে।যা দ্বারা বোঝানো হয়েছে, সামরিক শাসন জারি হওয়ায় তিনি শুকরিয়া জ্ঞাপন করছেন। এমনকি এরশাদকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে ৮৬ সালে এরশাদের পাতানো নির্বাচনেও আওয়ামীলীগ তার মিত্রদের নিয়ে অংশ নেয়। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে ১০ অক্টোবর আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে ৮ দল , বিএনপির নেতৃত্বে ৭ দল ও বামপন্থীদের নেতৃত্বে ৫ দলের সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনের মধ্যে দিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গঠিত হয় এবং গণআন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে।

৪ ডিসেম্বর রাতে এরশাদ পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন, ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের নিকট এরশাদ পদত্যাগ করেন। কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য সময়ের ব্যবধানে সেই সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদ জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা , প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়েছিলেন। এমনকি সেই স্বৈরাচারী সামরিক শাসকের দলই বর্তমান সংসদেরও বিরোধী দল। গণতন্ত্রের শহীদ ও মুক্তিকামী জনতার সাথে বেঈমানি করে আওয়ামীলীগ, বিএনপি দু’দলই ক্ষমতায় যেতে স্বৈরশাসক এরশাদকে কাছে টেনেছে। আওয়ামীলীগ বিএনপিকে ঠেকাতে এরশাদকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যে কারণে স্বৈরতন্ত্রের পতন হলেও বাংলাদেশ আজও স্বৈরাচার থেকে মুক্ত হতে পারেনি। স্বৈরতন্ত্রের পতন হয়, স্বৈরাচার রয়ে যায়! তাই আজকের দিনে আমাদের শপথ হোক গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং স্বৈরাচার ও স্বৈরাচারের দোসরদের নির্মূলের।

আসুন ভাঁওতাবাজির রাজনীতিকে ঘৃণা করি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের নতুন ধারার রাজনীতি গড়ি।

গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক।

লেখকঃ নুরুলহক নুর
সদ্য সাবেক ভিপি ডাকসু
যুগ্ম আহ্বায়ক ছাত্র অধিকার পরিষদ।
RELATED ARTICLES

Most Popular