নবদূত রিপোর্ট:
বাংলাদেশের বর্তমান টেলিভিশন মার্কেটের প্রায় শতকরা ৬৫ ভাগ মার্কেট শেয়ার দেশীয় ব্র্যন্ডের দখলে। এর মধ্যে এককভাবে দেশী ব্র্যান্ড ওয়ালটনের দখলে ২৫%। বাকিগুলো ভিশন, মিনিস্টার, যমুনাসহ অন্যান্যদের দখলে। ৩৫% বিদেশী ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে সিঙ্গার, স্যামসাং, সনি, এলজি উল্লেখযোগ্য।
বুধবার (২৪ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সেমিনার কক্ষে ‘মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশ (এমডব্লিউবি) আয়োজিত বাংলাদেশে টেলিভিশন শিল্পের উপর গবেষণা কার্যক্রমের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই চিত্র উঠে এসেছে। গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও এমডব্লিউবি’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ড. মো. নাজমুল হুসেইন।
এই বছরের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত দেশব্যাপী একটি গবেষণাকার্য পরিচালনা করে সংগঠনটি। শুণগত এবং সংখ্যাগত উভয় পদ্ধতিতে গবেষণা কার্যটি পরিচালনা করা হয়। এতে প্রধানত প্রাথমিক উপাত্ত এবং কিছুটা সেকেন্ডারি উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে। গবেষণা পরিচালনার জন্য জরিপ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এতে ২৪৩৯ জন উত্তরদাতাকে আটটি বিভাগ থেকে নির্বাচন করা হয়। উত্তরদাতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক নমুনায়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।
গবেষণাপত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে সামগ্রিক ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজারের মতোই টেলিভিশনের বাজারও ক্রমবর্ধমান। বর্তমান বাংলাদেশে মোট বিক্রিত ইলেকট্রনিক্স পণ্যের মধ্যে টেলিভিশনের বাজারের আকার ৩০.০৩ শতাংশ। ২০২০ সালে টেলিভিশনের বাজারের আকার ছিল ৬৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০২৫ সালে বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৯৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
গবেষণাপত্রে টেলিভিশন শিল্পের হুমকিস্বরূপ ‘গ্রে মার্কেট’র (অননুমোদিত পণ্যের বাজার) কথা উল্লেখ করে বলা হয়, বিভিন্ন অননুমোদিত মাধ্যমে যে টেলিভেশন আনা হয় এটা বাজারের ১০-১২ শতাংশ দখল করে আছে। আর ৮ থেকে ১০ শতাংশ রয়েছে স্টিকার-ভিত্তিক। অর্থাৎ মোট ২০ শতাংশ নকল বা অননুমোদিত টেলিভিশন বাজারে রয়েছে। এতে বলা হয়, সর্বনিম্ন ৭০ শতাংশ আর সর্বোচ্চ ৮১ শতাংশ পর্যন্ত ব্যবহারকারী দেশীয় টেলিভিশনগুলোতে সার্বিকভাবে কোনো সমস্যা না থাকার কথা জানিয়েছেন।
গবেষণাপত্রে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়। সেগুলো হলো- উচ্চবিত্ত ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণে দেশি ব্র্যান্ডগুলোর মাল্টিব্র্যান্ডিং পদ্ধতি অনুসরণ করা, লেটেস্ট ফিচার যোগ করা, ওয়ারেন্টি অনুযায়ী কাস্টমার সেবা প্রদান করা, অনলাইন মার্কেটিং, ফ্রিইনসটলেশন ও ডেলিভারি, ইএমআই সুবিধা প্রদান করা, ক্রেতাদের অভিযোগ শোনার জন্য ২৪/৭ কলসেন্টার এবং চ্যাটবটের মতো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা এবং গবেষণা ও উন্নয়নে অধিক বিনিয়োগ করা।
দেশীয় টেলিভিশন শিল্পের বিকাশে সরকারের করণীয় সম্পর্কে গবেষণাপত্রে বলা হয়, নকল টিভির আমদানি সংযোজন ও বিক্রি বন্ধ করা, গ্রে-মার্কেটকে নিরুৎসাহিত করার জন্য বিদেশি টিভির ওপর বর্ধিত করোরোপসহ কর আদায়নিশ্চিত করা, দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করতে টিভি তৈরির সরঞ্জাম ও কাঁচামাল আমদানিতে কর কমানো এবং রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং রপ্তানীকারকদের আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করা।
মার্কেটিং ওয়াচের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও বিভাগের অধ্যাপক ড. রাজিয়া বেগম এবং ড. আবুল কালাম আজাদ।