Saturday, September 21, 2024
Homeশিক্ষাঙ্গনঢাবির হাকিম চত্বরের হাকিম মামার মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ঢাবির হাকিম চত্বরের হাকিম মামার মৃত্যুবার্ষিকী আজ

নবদূত ডেস্ক:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কটি চত্বর সবার কাছে সুপরিচিত, তার মধ্যে একটি ‘হাকিম চত্বর’। আমাদের মধ্যে অনেকেই জানিনা এই চত্বরের নামকরণ কিভাবে হয়েছে। এই লেখাটা তাদের জন্য।


১৯৬৭ সালের কথা, ঢাকার দোহার থেকে বাবার সঙ্গে ১৫ বছর বয়সী এক যুবক এলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। নাম তার আব্দুল হাকিম। জীবিকার তাগিদে শুরু করেন চা বিক্রি। শুরুর দিকে পানও বিক্রি করতেন। বলে রাখা ভালো, আজকের হাকিম চত্বর ষাটের দশকে ছিল ঝোপঝাড়ে ভরা। সেখানেই বড় এক আম গাছের নিচে বসে চা বিক্রি করতেন হাকিম ভাই।
ধীরে ধীরে হাকিম ভাই বড় হতে লাগলেন, সেই সঙ্গে বাড়তে লাগল তার দোকানের বেচাকেনাও। আজকের মতো এত দোকান ছিল না সেই জায়গায়। তাই সব আড্ডা হাকিম ভাইকেন্দ্রিক। দোকানটি ছিল একেবারেই সাদামাটা। বসার জন্য তেমন কোনো আয়োজন ছিল না। ইটের উপর কয়েকটা তক্তা সাজানো ছিল-এই যা। ওখানেই জমে উঠতো তুমুল আড্ডা।


শোনা যায়, ষাটের দশকে হাকিম ভাইয়ের চা না খেলে নাকি অনেকের ঘুম হতনা, শত ব্যস্ততার মধ্যেও অনেকে ছুটে যেতেন হাকিম চত্বরে। হাকিম ভাইয়ের মিষ্টি ব্যবহার আর আন্তরিক হাসি ছিল চা এর সাথে উপরি পাওনা। হাকিম ভাইয়ের দোকানে ভিড়টা বেশি হতো সকাল এবং সন্ধ্যা বেলায়।


হাকিম ভাইয়ের চায়ের দোকানের আলোচনায় রাজনীতি, সাহিত্য, নাটক, গল্প, প্রেম-ভালবাসা কোনো কিছুই বাদ যেত না। অভিমানী অনেক তরুণ-তরুণীর কাছেও এক আস্থার মানুষ ছিলেন হাকিম ভাই। অনেক প্রেমিক-প্রেমিকাই হাকিম ভাই-এর কাছে চিঠি, গিফট পর্যন্ত রেখে যেতেন। এতটাই বিশ্বস্ত ছিলেন তিনি।
‘হাকিম ভাই’-এর চায়ের দোকানটি বড় বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল সামরিক সরকার এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর। তখন থেকেই ‘হাকিম ভাই’-এর চায়ের দোকান-এলাকা ‘হাকিম চত্বর’নামে পরিচিত হয়ে উঠে। প্রগতিশীল ছাত্রদের প্রাণবন্ত আড্ডা আর আন্দোলনের অন্যতম স্মৃতি স্মারক ‘হাকিম চত্বর’। আবার সে সময় ক্যাম্পাসের অনেক শিক্ষক, কবি, নায়ক, গায়কের প্রিয় স্থান ছিল এই চত্বর।


২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর ‘হাকিম ভাই’আকস্মিক মৃত্যুবরণ করেন। তারপর থেকে এই জায়গাটি স্থায়ীভাবে হাকিম চত্বর নাম ধারণ করে। ৫৫ বছর বয়সে মৃত্যুকালে দুই ছেলে আর তিন মেয়ে রেখে যান হাকিম ভাই। তার মৃত্যুর পর এক ছেলে ব্যবসা করতে হাকিম চত্বরে আসেন। তবে বাবার মতো এতটা জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেননি বলে মাত্র ৩ মাস পরই চলে যান হাকিম চত্বর ছেড়ে।


‘হাকিম ভাই’এর মৃত্যুর পর তার স্মরণে হাবিবুর রহমান জিন্নাহ, আকরাম হোসেন-এর নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয় ‘হাকিম ভাই’স্মৃতি পরিষদ। প্রতিবছর ‘হাকিম ভাই’স্মৃতি পরিষদ-এর পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় হাকিম চত্বরে। এবার সেটিও হয়নি।
হাকিম ভাই নেই আজ ২১ বছর। তবু আশি-নব্বইয়ের দশকের অনেক পাগল শিক্ষার্থী এখনও ছুটে আসেন হাকিম চত্বরে। হাকিম চত্বরে গিয়ে স্মৃতি হাতড়ান তারা। এত এত শিক্ষার্থীর ভালোবাসার হাকিম ভাই ওপারেও ভালো থাকুক…

RELATED ARTICLES

Most Popular