ক্যাম্পাস ডেস্ক:
‘উইমেন লিডার্স প্রকল্প: সমাপ্তি সমাহার’ উপলক্ষে আজ ১৩ ডিসেম্বর,২০২১ (সোমবার) সকালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন লিডার্স সংগঠনটি বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করেছে।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকালে ভাইস-চ্যান্সেলর (অন্তর্বর্তীকালীন) প্রফেসর মো. জালাল উদ্দিন এর উপস্থিতিতে সকাল ৯:৩০ টায় বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী ও বিজয়ের মাস উদযাপন উপলক্ষে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হয়। এরপর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন স্মরণে পদযাত্রা শুরু করে প্রশাসনিক ভবনে শেষ হয়।
কনফারেন্স রুমে মূল আলোচনা সভা শুরু হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের ফুল এবং বই দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
আলোচনা সভায় মাননীয় উপাচার্য বলেন, ‘আমরা আমাদের জীবনে মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা সকলকে নানাভাবে লিডারের ভূমিকায় পাই। এই ধারা সবক্ষেত্রেই আরো বাড়বে উইমেন লিডার্সের মাধ্যমে।’
এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ শাখার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাবেক সভাপতি ফেরদৌস আরা মাহমুদা হেলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, ছাত্র উপদেষ্টা তপন কুমার সরকার ,সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়া উদ্দীন এবং প্রজেক্ট প্রকল্প পরিচালক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোঃ বাকীবিল্লাহ।
‘উইমেন লিডার্স’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত ‘নেটওয়ার্ক ফর রিলিজিয়াস এন্ড ট্র্যাডিশনাল পিসমেকার্স’ এর আওতায় আহা (অ্যাওয়ারনেস উইথ হিউম্যান অ্যাকশন) প্রজেক্টের একটি উদ্যোগ। যেখানে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে যুক্ত আছে ফিন চার্চ এইড, ওয়ার্ল্ড ফেইথ ডেভেলপমেন্ট ডায়ালগ, সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা সভায় জনাব বাকীবিল্লাহ বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ পৃথিবীর জন্য নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। উইমেন লিডার্স সেই কাজ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই কাজ আরো বেগবান হবে এমনই প্রত্যাশা।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ জন নারী শিক্ষার্থী ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী-স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে ২০২১ সালের জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে ‘উইমেন লিডার্স’। শান্তি, সামাজিক সহিষ্ণুতা, ঘৃণা- বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য পরিহার এবং কোভিড-১৯ এর পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট নারী সহিংসতা প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করছে এই প্রকল্প।
সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজেক্টের ম্যানেজার জিয়া উদ্দীন বলেন,অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন লিডার্স এবং উইমেন পিস ক্যাফের যৌথ কার্যক্রম ইতিমধ্যে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শান্তি ও নারীর ক্ষমতায়নে একটি রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে । তিনি প্রজেক্ট পরবর্তী সময়েও উক্ত কাজের ধারবাহিকতা বজায় রাখার আহবান জানান। তিনি সেন্টার পিস এন্ড জাস্টিস ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এর পক্ষ থেকে ভবিষ্যত কার্যক্রমের কারিগরী সহায়তার অব্যাহত থাকবে বলে আশ্বাস দেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে সানজিদা ইসলাম ইরাকে সভাপতি করে এবং আঁখি রানী দাস তিতলি কে সাধারণ সম্পাদক করে উইমেন লিডার্সের আগামী ১ বছরের কমিটি ঘোষণা করে ভাইস-চ্যান্সেলর (অন্তর্বর্তীকালীন) প্রফেসর মো. জালাল উদ্দিন।
নারী নেতৃত্বের বিকাশ ও নারীর জীবনের নানাবিধ প্রতিকূলতা- নারী সহিংসতা, বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা, লিঙ্গ বৈষম্যসহ সমাজে চলমান প্রভৃতি অসমতা বিষয়াবলীর নিরসনে উইমেন লিডার্স প্রজেক্ট সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। কোভিডের এই দুঃসময়ে নারী কিভাবে নেতৃত্ব দিবে, সেই লক্ষ্যে উইমেন লিডার্স কর্তৃক পিস অ্যাম্বাসিডর ও স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য বিভিন্ন নিয়মিতভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
অনলাইন ও অফলাইন দুইটি ফেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। ফ্রেশারস রিসিপশন, নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক কর্মশালা, নিবন্ধ লেখার প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতা, ডিজিটাল লিটারেসি ওয়ার্কশপ, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, ফটোগ্রাফি কনটেস্ট, গবেষণা পদ্ধতি বিষয়ক প্রশিক্ষণ, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, সরাসরি ফিল্ডওয়ার্ক কার্যক্রম, ওয়েবসাইট তৈরিসহ নানান কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করেছে উক্ত প্রকল্পটি।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম, দর্শন বিভাগের প্রভাষক মোঃ তারিফুল ইসলাম, ফোকলোর বিভাগের প্রভাষক মো রকিবুজ্জামান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোঃ রিয়াজুল ইসলাম, ফিনান্স এন্ড ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক চন্দন কুমার পাল, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এর সহকারী অধ্যাপক আলভী রিয়াসাত মালিক, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রভাষক মোঃ রফিকুল ইসলাম, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডঃ শেখ মেহেদী হাসান।
আলোচনা সভা শেষে প্রজেক্টে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগিদের মধ্যে পুরস্কার হিসেবে বই,সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সময়োপযোগী অনবদ্য এই প্রজেক্টের কার্যক্রম প্রতিটি নারীর জীবনপথে নেতৃত্ব প্রদানে সাহায্য করবে এই প্রত্যাশা রেখে প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।