নবদূত রিপোর্ট:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলের কথিত’গেস্টরুম’ নির্যাতনের শিকার হয়ে জ্ঞান হারিয়েছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১সেশনের শিক্ষার্থী আখতার হোসেন।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) রাত ১০টায় এই ঘটনা ঘটে। অসুস্থতার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে গেস্টরুমে না আসায় ডেকে তাকে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে সে অসুস্থ হয়ে গেলে গণরুমে পাঠালে সেখানে জ্ঞান হারায়। এবিষয়ে আখতার হল প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে।
আখতারের লিখিত অভিযোগ পত্র থেকে জানা যায় এ ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া অভিযুক্তরা হলেন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের কামরুজ্জামান রাজু,আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাইফুল ইসলাম, লোকপ্রশাসন বিভাগের সাইফুল ইসলাম রোহান, ইতিহাস বিভাগের হৃদয় আহমেদ কাজল, সমাজকল্যাণ বিভাগের ইয়ামিন ইসলাম, সাইকোলজি বিভাগের ওমর ফারুক শুভ। তারা সকলেই ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী। জানা যায় অভিযুক্তরা হল ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশী আবু ইউনুস ও রবিউল ইসলমা রানার অনুসারী। এবং ইউনুস এবং রানা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী।
আবু ইউনুস বলেন,তারা যে গেস্টরুম নিচ্ছে সে বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। হল প্রশাসনের প্রতি উদার্ত আহ্বান থাকবে যে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হয়।
বরিউল ইসলাম রানা বলেন,এবিষয়ে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান থাকবে তদন্ত সাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার।
সুত্র জানায়,বুধবার(২৬জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১০টায় তথাকথিত গেস্টরুম ছিলো। অন্যরা গেস্টরুমে আসলেও আখতার অসুস্থ থাকায় সে গেস্টরুমে আসেনি। রাজু,কাজল,ইয়ামিম,সাইফুল, রোহান ও শুভ তাকে ডেকে গেস্টরুমে না আসার কারণ জানতে চাইলে সে তার অসুস্থতার কথা জানায়। প্রতিত্তোরে অভিযুক্তরা তাকে বলে, কিসের অসুস্থ তুই? তোকে বিকালে কলা ভবনের সামনে দেখলাম! কথা বলার সময় তার হুডির টুপি মাথায় থাকলে, তাকে গালি দিয়ে বলে ‘তুই গেস্টরুমের কালচার জানস না! তুই জলন্ত লাইটের দিকে আধা ঘন্টা তাকিয়ে থাকবি! ১০মিনিট তাকিয়ে থাকার পর সে আরো অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ব্যাচমেটের সাহায্যে গণরুমে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানে আখতার অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডাক্তার তার ইসিজি, কোভিড টেস্ট ও প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হলে প্রেরণ করে। আখতার জানায় তার বাবা সাতদিন আগে স্ট্রোক করেছে এবং ছোট ভাই দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। যার কারণে সে আগে থেকেই মানসিক ট্রমার ভিতরে ছিলো।
হল প্রভোস্টকে জানালে তিনি নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী আখতারের সাথে দেখা করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন।
এবিষয়ে আখতার হল প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে। হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল বাছির বলেন,এবিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবে। সেই আলোকে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদেরকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হবে।’
এসময় তিনি ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের প্রতি ইতিবাচক ভুমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন,এতো রাতে বিজয় একাত্তর হলে আসতে হয়েছে, বিষয়টা খুবই দুঃখজনক। ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান থাকবে সকল কিছুতে ইতিবাচক ভুমিকা রাখার জন্য।
