নবদূত রিপোর্ট:
মাথায় হিজাব পরে আসায় ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের একটি স্কুলে ছয় শিক্ষার্থীকে ক্লাসে ঢুকতে না দেওয়ার প্রতিবাদে রাজ্যটিতে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনে সংহিত জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাষ্কর্য এই উপলক্ষে একটি সংহতি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ছাত্র অধিকার পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল শাখার আয়োজনে মূলত এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বিভিন্ন বিভাগের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এতে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়। এসময় তারা ‘সলিডারিটি ফ্রম বিডি’, ‘হিজাব ইজ মাই চয়েস’,‘পোশাকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করো’ ইত্যাদি লিখা সম্বলিত প্ল্যকার্ড প্রদর্শন করেন।
সমাবেশে জয়দেব চন্দ্র রায় নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ভারতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সেটি রাষ্ট্রীয়ভাবে করা হচ্ছে। সনাতনধর্মাবলম্বী হিসেবে আমি লজ্জাবোধ করছি। আমি মনে করি বোরখা ভালো জিনিস। আমার মা বা বোন যদি এটি পরতে চাই তাহলে তারা পরতে পারে। যারা এটি করছে তাদের দুঃখ প্রকাশ করা উচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ আহসান বলেন, কারও ইচ্ছা হলে বিকিনি পরবে আর কারও ইচ্ছা হলে হিজাব বা বোরখা পরবে। পোশাকের স্বাধীনতা থাকা উচিত। শুধু ভারত নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও নারী শিক্ষার্থীরা পোশাকের কারণে বিভিন্ন কটু কথার শিকার হয়। আমরা বলতে চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও যার যার পছন্দের উপর ভিত্তি করে পোশাক পরার স্বাধীনতা থাকতে হবে। ভবিষ্যতে যদি কোন শিক্ষার্থীকে হিজাব পরার কারণে বাধা দেওয়া হয় বা কটু কথা শুনানো হয় আমরা সেগুলোর ডকুমেন্টশন করবো। আমরা চাই না কেউই হিজাব বা অন্য কোন পোশাক পরার কারণে সমস্যায় পড়ুক।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত তাবাস্সুম বলেন, বোরখাকে মুসলিম আইডেন্টি হিসেবে বিবেচনা করে এটি নিষিদ্ধ করা ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদ ছড়িয়ে দেওয়ার একটা চাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও হিজাব বা বোরখা পরার কারণে যেমন কটুক্তি শুনতে হয় তেমনি টিশার্ট পরার কারণেও কটু কথা শুনতে হয়। আর ওয়েস্টার্ন পোশাক পরে যারা আসে তারাও নানা রকম বুলিংয়ের শিকার হয়। আমরা বলতে চাই, মেয়েরা কোন পোশাক পরবে বা পরবে না সেটি তাদের নিজস্ব পছন্দের বিষয়। এখানে কারও হস্তক্ষেপ আমরা মেনে নিব না।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আশরেফা তাসনিম বলেন, আমরা বাঙালি। বাঙালি জাতীয়তাবাদ মেনে যেমন আমরা পোশাক পরতে পারি তেমন ধর্মীয় নির্দেশনা মেনে হিজাব বা বোরখা পরতে পারি। এই হিজাব বা বোরখাকে যখন আমরা আফগানি বা তালিবানি পোশাক বা সংস্কৃতি হিসেবে আখ্যায়িত করবো সেটিই হচ্ছে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা। আমরা অসাম্প্রদায়িকতার নামে এই যে বিদ্ধেষ ছড়িয়ে দিচ্ছি এটাই সবচেয়ে বড় সাম্প্রদায়িকতা। যখন আমি বা আমার বান্ধবী স্বাধীনভাবে শাখা-সিঁদুর বা হিজাব বোরখা পরতে পারবে সেটাই অসাম্প্রদায়িকতা।
সমাপনী বক্তব্যে ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন, ভারতের যে ঘটনা নিয়ে আজকে আমরা সংহতি জানাতে দাঁড়িয়েছি এই ঘটনা বাংলাদেশেও ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাব, বোরখা বা টিশার্ট পরে আসার কারণেও শিক্ষকদের হাতে নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তার শিকার হতে হয়। কোন শিক্ষার্থীর পোশাকের স্বাধীনতাকে খর্ব করা চলবে না। পোশাকের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার কারণে ভারতের শিক্ষার্থীরা যে প্রতিবাদ জারি রেখেছে তার প্রতি আমরা সংহতি জানাই। পোশাকের স্বাধীনতা যেখানেই কেড়ে নেওয়া হবে সেখানেই আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াবো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সালেহ উদ্দীন সিফাত সমাবেশের সঞ্চলনা করেন। সমাবেশে শেষে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাষ্কর্য থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা পর্যন্ত মিছিল করেন।