Friday, November 15, 2024
Homeসারাদেশফুলবাড়ীর ফুলসাগর লেক ঘিরে সম্ভাবনার আশা পর্যটকদের

ফুলবাড়ীর ফুলসাগর লেক ঘিরে সম্ভাবনার আশা পর্যটকদের

নবদূত রিপোর্টঃ

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা সদর থেকে ১ কিলোমিটার উত্তরে পানিমাছকুটি গ্রামের কোল ঘেঁষে ছায়া শ্যামল প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত সুবিশাল সরকারী জলমহাল ফুলসাগর লেকটি সৌন্দযর্য প্রেমীদের আর্কষনীয় বিনোদন কেন্দ্র হতে পারে। সরকারী উদ্যোগে প্রাচীন এই লেকটির চারপাশে দর্শনার্থীদের বসার বেঞ্চ,পানিতে নেমে গোসল করার জন্য সান বাধানো ঘাট,সাঁতার কাটার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ,লেকের পাড়ে কফি হাউস বা আধুনিক রেস্তোরা স্থাপন,শোভা বর্ধনকারী বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ সারিবদ্ধভাবে লাগিয়ে সৌন্দর্য্য ফুটিয়ে তুললে দুর দুরান্ত থেকে ভ্রমন পিপাসু মানুষ চিত্ত বিনোদনের জন্য এখানে ভীড় করবে।

লেকের পাড়ে কয়েকটি পিকনিক স্পট তৈরী করলে বনভোজনকারী নারী পুরুষ শিশু কিশোর কিশোরীদের পদচারণায় জায়গাটির গুরত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি রাজস্ব আয় অর্জনের সম্ভবনাও বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া এই লেকের পাশেই বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ার ছড়ার অবস্থান। ঐতিহাসিক কারনে দাসিয়ার ছড়ার পরিচিতি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। দেশ বিদেশের মানুষ ছিটমহল দেখার জন্য দাসিয়ার ছড়ায় আসেন। কিন্তু সেখানে তেমন কোন দর্শনীয় স্থান না থাকায় হতাশ হয়ে ফিরে যান অনেকেই। অন্যদিকে ফুলবাড়ীর কুলাঘাটে ধরলা নদীতে শেখ হাসিনা ধরলা সেতু নির্মান হওয়ায় পার্শ্ববর্তী নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার মানুষ ফুলবাড়ী হয়েই রাজধানীসহ সারাদেশে যাতায়ত করে।

বিলুপ্ত ছিটমহল সংলগ্ন ফুলসাগর লেকটি বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে তৈরী হলে দর্শনীয় স্থান হিসাবে ফুলবাড়ীর গুরত্ব অনেকাংশে বাড়তে পারে। তাই ফুলবাড়ীবাসীর প্রাণের দাবী উপজেলা সদরের প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত ৪৬.৩৭ একর আয়তন বিশিষ্ট ফুলসাগর লেকটিকে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হোক।

ওই এলাকার অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক এনছার আলী (৬৭),কানাই লাল সেন (৬৫) ময়েন উদ্দিন (৭০) গোলাম মতুর্জা বকুল (৪৮) সহ প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, ভারতের কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার নটকোবাড়ী এলাকা দিয়ে একটি খরস্রোতা নদী প্রবেশ করে উপজেলার বালাতাড়ী,পুর্ব ফুলমতি,কুরুষা ফেরুষা গ্রামের বুক চিরে ভারতের গ্যান্দার কুড়ায় পড়ে। নদীটি পরে ভারতীয় সীমান্তের কোল ঘেঁষে নন্দিরকুটি ও পানিমাছকুটি গ্রামের মধ্য দিয়ে ফুলবাড়ীর ছড়া হয়ে নীল কমল নদীর সাথে যুক্ত হয়। স্থানীয়দের কাছে এটি বুড়া ধল্লা নামে পরিচিত ছিল। নীল কমল ও বুড়া ধল্লার যৌথ স্রোত গড়াতে গড়াতে এক সময় পূর্ব-ধনিরাম গ্রামের উপর দিয়ে মূল ধরলা নদীর সাথে মিলিত হয়। নীল কমল নদীর স্রোতধারা প্রবাহিত থাকলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সময় ঘন ঘন বাধ দেয়ার কারনে অলস হয়ে পড়ে বুড়া ধল্লা। পরবতর্ীতে ১৯৭৭ সালে সরকারী উদ্যোগ ও তৎকালীন চেয়ারম্যান সামছুল হক সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় ফুলবাড়ীর ছড়াটি খনন করা হয়। ফুলবাড়ীর নামের সাথে মিল রেখে সরকারী এই জলমহালের নাম রাখা হয় ফুল সাগর। ফুলবাড়ীসহ গোটা কুড়িগ্রাম জেলার মানুষ এই লেকটিকে ফুলসাগর নামেই চেনেন। তাই আমরা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এই লেকটিকে অম্লান করে রাখতে বিনোদন কেন্দ্র বানানোর জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি।


জানা যায়, প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে মেয়াদ ভিত্তিক ইজারা নিয়ে এই লেকে মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে স্থানীয় মৎস্যজীবিরা। উপজেলার মানুষের আমিষের চাহিদার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পূরণ হয় এই লেকের মাছ দিয়ে। তাছাড়া এই লেকের উত্তর পাশে আরও একটি সরকারী পুকুর তৈরী করা হয় পরবর্তীতে। যার নাম দেয়া হয় প্রেম সাগর। দুই লেকের মাঝে পাকা রাস্তা, লেকের পাড়ে বিশাল কৃষ্ণচুড়া গাছ জায়গাটির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে। দক্ষিনা বাতাসে ফুলসাগর ,প্রেম সাগরের মৃদু ঢেউ আর পড়ন্ত বিকেলের সোনালী রোদ এক অপরূপ খেলায় মেতে উঠে। এই নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে অম্লান করে রাখার জন্য ফুলসাগর লেকটিকে একটি আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে দেখতে চায় ফুলবাড়ী বাসী।

এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সরকার বলেন,উপজেলা সমন্বয় কমিটির মিটিংয়ের মাধ্যমে এ বিষয়টি জেলা প্রসাশনসহ উপর মহলে জানানো হবে।

RELATED ARTICLES

Most Popular