নবদূত রিপোর্ট:
অমর একুশে বইমেলা-২০২২’র উদ্বোধন আগামীকাল মঙ্গলবার (১৫ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩টায়। বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী আটত্রিশতম বইমেলার উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। করোনার কারণে অর্ধেক সময় নিয়ে বইমেলা শুরু হলেও করোনা সংক্রমণের নিম্নগতি অব্যাহত থাকলে সময়সীমা বাড়ানোর প্রত্যাশা রাখছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
সোমবার(১৪ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় বইমেলা-২০২২ উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এ তথ্য জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন,’বইমেলার এবারের প্রতিপাদ্য হলো ‘জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’। করোবা মহামারীর কারণে একসময় মনে হয়েছিল এবার হয়তো বইমেলা করতেই পারব না। প্রধানমন্ত্রী ঐকান্তিক নির্দেশনায় আশা করছি আগামীকাল বিকাল তিনটায় বইমেলা পর্দা ওঠবে৷ কোভিডের কারণে এবারের বইমেলায় সময় অর্ধেক কমিয়ে আনা হয়েছে৷ ১৫থেকে ২৮তারিখ পর্যন্ত মেলা চলবে । সংক্রমণ কমলে মেলার সময় কিছুটা হলেও বাড়াতে পারব। সংক্রমণ যেভাবে কমছে এ ধারা যদি অব্যাহত থাকে,আমরা বিশ্বাস করি মেলার সময়সীমা খানিকটা বাড়াতে পারব। সেজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর নিদর্শনার অপেক্ষায় আমরা আছি। এসমস তিনি মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন।’
মেলার প্যাভিলয়ন করার ক্ষেত্রে যে উচ্চতাসীমা দেয়া আছে সকল প্রতিষ্ঠান সেটি মানলেও দু’একটি প্রতিষ্ঠান তা মানে নি। এদের ক্ষেত্রে নির্দেশনা কী জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন,’ কালে আমি নিজেও এমনটি দেখে তাদেরকে নির্দেশনা মানার নিদর্শন দিয়েছে। এখনো যে দু’একটি আছে তাদের জন্যও একই নির্দেশনা। আইন সকলের জন্য সমান, সকলকেই মানতে হবে। ‘
করোনাকালে বইমেলায় স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষই শুধু না আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অনেককেও নির্দেশনা মানতে দেখা যায় না। এক্ষেত্রে নিয়ম কী জানতে চাইলে তিনি বলেন,’ স্বাস্থ্যবিধি সবাইকেই মানতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অনুরোধ জানাবো যেন সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে দায়িত্ব পালন করে।
মেলার অর্ধেক সময় ধরে করার কারণে প্রকাশকদের লোকসান হয়। এক্ষেত্রে তাদের জন্য কোনো প্রণোদনার ব্যাবস্থা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি,’ মেলা পনের চললে সেক্ষেত্রে অর্ধেক ভাড়া নিলে মূলত একশ পার্সেন্ট স্টল ভাড়াই হয়। যদি মেলার সময় বাড়ানো যায় এটিই হবে তাদের জন্য প্রণোদনা। আমরা কখনোই চাইবো না যে,মেলার প্রাণশক্তি প্রকাশকরা ক্ষতি গ্রস্থ হয়।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা বলেন,অনেক শঙ্কা কাটিয়ে আমরা বইমেলা শুরু করতে যাচ্ছি। বইমেলা আয়োজন করতে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাগুলোই আমাদের সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে। আমাদের ভাষা আন্দোলনের সত্তর বছর,সংবিধান প্রণয়নের পঞ্চাশ বছর, বাংলাদেশের পঞ্চাশ-এমন ক্ষণে এসে আমরা দাঁড়িয়ে অনেক দোষত্রুটি সত্ত্বেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। স্টল প্যাভেলিয়নের কাজ আজকের মধ্যেই শেষ হব, আশা করছি কাল সকালের মধ্যে বই তুলতে পারবে। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মেলার অগ্রগতি হবে।’
এসময় বইমেলার সার্বিক তুলে ধরে বইমেলার সদস্য সচিব এবং বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল আহমেদ জানান,’ এবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে বইমেলা হবে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি ইউনিট; মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।মেলায় ৩৫টি প্যাভিলিয়ন থাকবে। বাংলা একাডেমির ৩টি প্যাভিলিয়ন, শিশুকিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য ১টি এবং সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকার-এর ১টি স্টল থাকবে। এবারও শিশুচতুর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। তবে কোভিড পরিস্থিতির কারণে প্রথমদিকে ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে না।
‘এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এম্ফি থিয়েটারের পূর্বদিকে মেলার মূল প্রাঙ্গণে। সেখানে ১২৭টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবারের গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত ১০৭টি বই। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। অমর একুশে বইমেলা ২০২২-এর প্রচার কার্যক্রমের জন্য একাডেমিতে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে ১টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২টি তথ্যকেন্দ্র থাকবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবার নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে।
মেলার নতুনত্বের বিষয় উল্লেখ্য করে তিনি আরো জানান, এ-বছর মেলার বিন্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। গতবার প্যাভিলিয়নগুলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যমাঠে রাখা হয়েছিল। এই বিন্যাস অনেকের দ্বারা সমালোচিত হয়। এবার প্যাভিলিয়নগুলো উদ্যানের সকল প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে বিন্যাসে পরিবর্তন ও সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। এবছর লিটল ম্যাগাজিনের স্টলগুলোকে উদ্যানের এম্ফি থিয়েটারের পূর্বদিকে উদ্যানের মূল প্রাঙ্গণে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এর ফলে আমাদের তরুণ ও উদ্ভানশীল সাহিত্যকর্মীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান যেমন বরাদ্দ করা হয়েছে, তেমনি এটি মেলার বিন্যাসেও পরিবর্তন এনেছে।
‘এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ বাস্তবায়ন কমিটি একটি প্যাভিলিয়ন নিয়েছেন। এই প্যাভিলিয়নটি অনন্য সুন্দররূপে সাজানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্বাধীনতার মর্মবাণী সবার মাঝে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু-গ্রন্থভুক্ত হস্তলিপি বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যবহার করা হয়েছে। কোভিড-প্রটোকল মানা এবার সবার জন্য বাধ্যমূলক করা হয়েছে। মেলায় প্রবেশে টিকার সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যারা টিকা নেয়নি, তাদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২২ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার এবং ২০২২ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হবে। এছাড়া ২০২২ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হবে-বলেও তিনি জানান।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল মনসুর, বাংলা একাডেমির সচিব এইচ এম লোকমান,বিকাশের চীফ মার্কেটিং এডভাইজার মীর নওবত আলীসহ আরো অনেকে।