কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় প্রায় ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত এলাকায় ছোটবড় প্রায় ১৫টি হাট-বাজার রয়েছে। বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমান্তবর্তী হাটবাজারসহ বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে অবাধে যাতায়ত করছে ভারতীয় নাগরিকরা। ফলে দু’রাষ্ট্রের নাগরিকগণ অবাধে চলাফেরা করায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বাড়ছে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের আশঙ্কা।
উপজেলার নাখারজান সীমান্তের আন্তর্জাতিক মেইন পিলার ৯৪১ এর নিটকবর্তী এলাকার বাসীন্দা আবেদ আলী (৫২), গংগাহাট এলাকা হাসেম আলী (৫৫) এবং আন্তর্জাতিক মেইন পিলার ৯২৯ এর নিকটবর্তী গোরকমন্ডল সীমান্ত এলাকার ফজলুল হক (৩৫) করোনা পজেটিভ হওয়ায় গোটা সীমান্ত এলাকার হাট-বাজারে ভাতীয়দের আসা যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। সেই সঙ্গে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করছেন বাসিন্দারা। এ অবস্থায় ভারতীয়দের আসা যাওয়া ঠেকাতে সীমান্ত এলাকায় প্রশাসনের নজরদারীর বৃদ্ধির দাবী জানিয়েছেন সীমান্তবাসীরা।
কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, সীমান্ত উপজেলা হওয়ায় এখানে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে তবে, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট কিংবা করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য বিভাগ,জেলা প্রশাসন,বিজিবি,পুলিশ প্রশাসন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সীমানায় ও লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি’র অধীনে ৩৬কি.মি. সীমান্ত জুড়ে কাঁটাতারের বাহিরের ভারতীয় নোম্যান্স এ্যান্ডে বসবাসকারী নাগরিকরা বিভিন্ন প্রয়োজনে আইডি কার্ড জমা দিয়ে ভারতের ভিতরে প্রবেশ করছেন। ঠিক ঐ সব নাগরিক বিজিবি- বিএসএফ’র চোখ ফাঁকি দিয়ে বাজার সওদা, ধানচাল কেনা বেচাসহ নিত্যনৈমেত্তিক প্রয়োজনে অবাধে বাংলাদেশের হাটবাজার গুলোতে আসা যাওয়া করছে। দুই দেশের নাগরিকগণ গরু-ছাগলকে ঘাস খাওয়ানোসহ বিভিন্ন কাজে প্রতিবেশির মতোই চলাফেরা করে থাকেন।কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে ভারতীয় নোম্যান্স ল্যান্ডে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকরা বিভিন্ন প্রয়োজনে আইডি কার্ড জমা দিয়ে যেমন কাঁটাতারের গেট দিয়ে ভারতের ভিতরে প্রবেশ করছে তেমনি বাংলাদেশে আসা যাওয়া করছেন নিয়মিত।
সীমান্তবাসীরা জানান, করোনা আক্রান্ত আবেদ আলীর বাড়ী নাখারজান সীমান্তের ৯৪১ নম্বর পিলার থেকে মাত্র ১শ গজ বাংলাদেশের ভিতরে। আর তার শ্বশুরবাড়ী ৯৪১ নম্বর পিলার থেকে ১০০ গজ ভারতের ভিতরে নোম্যান্স লান্ডে ভারতের সাহেবগঞ্জ থানার সেওটি-২ গ্রামে। শ্বশুরবাড়ীর লোকজন সব সময় আবেদ আলীর বাড়ীতে যাতায়ত করে। অন্যদিকে গজেরকুটি সীমান্তের ৯৩২ এবং ৯৩৩ নম্বর পিলারের বিপরীতে ভারতীয় কিশামত করলা গ্রামের রবিচন্দ্রের জামাই সুজন সম্প্রতি দিল্লীর ইটভাটায় কাজ শেষে বাড়ী এসে বালারহাট সহ গোটা এলাকা ঘুরে বেড়াচ্ছে। একই গ্রামের বাংটুর ছেলে হারাধন (২৮) বর্তমানে রংপুরে নির্মান শ্রমিকের কাজ করছে। ফলে, করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশংকা প্রকট হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে লালমনিরহাট-১৫ ব্যাটালিয়ন (বিজিবি)-র অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্ণেল এস এম তৌহিদুল আলম বলেন, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট কিংবা করোনা প্রভাব বিস্তারসহ চোরাচালান এবং অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি টহল জোরদার করা হয়েছে। এছাড়াও সীমান্ত এলাকায় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে বিজিবি।
ফুলবাড়ী(কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি