বিলাল মাহিনী, যশোর :
ভারত-বাংলার সমপ্রিয়, বিটিভি-বেতারের জনপ্রিয় জারি ও বাউল শিল্পী চারণকবি সাইফুল ইসলাম সাবু’র ৭ম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সাবুভক্তবৃন্দ। শিল্পী সাবুর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দক্ষিণ নড়াইলে শিল্পীর নিজ বাসগৃহে বিশেষ দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এছাড়া প্রতিবছর ভৈরব সংস্কৃতি কেন্দ্রসহ ভৈরব উত্তর জনপদের বিভিন্ন সমাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রায়ত শিল্পীর স্মরণসভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। শিল্পী সাইফুল ইসলাম সাবু খুলনা বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন বেসরকারী টিভি চ্যানেলে নিয়মিত গান করতেন। তার জনপ্রিয়তা বাংলাদেশ ছাপিয়ে ভারতেও অসামান্য জনপ্রিয়তা লাভ করে। তিনি একাধারে একাধারে বাংলাদেশ বেতার খুলনার গীতিকার, বাউল শিল্পী ও জারি শিল্পী হিসেবে অসংখ্য গান পরিবেশন করেন।
কবির অনুজ ভক্ত তরুণ চারণ কবি শামিম হাসান লেখেন, ‘তোমার শিল্পকর্ম ভোলার নয় হে চারন কবি, তুমি চলে গেলে না ফেরার দেশে, তোমার কাব্য, ছন্দ, সাহিত্য, সুর চিরদিন ভক্ত হৃদয়ে দোলা দিয়ে যাবে…তুমি নড়াইলের গর্ব, কৃতি সন্তান,! তোমাকে হয়তো নতুন প্রজন্ম জানবে না, তোমার সময়ে তুমি সেরা এক সুরের জাদুকর, অনবদ্য গীতিকবি ও কণ্ঠশিল্পী সাইফুল ইসলাম সাবু। তোমার ৭ম মৃত্যুবার্ষিকীতে তোমার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি!!’
ক্ষণজন্মা এ মানুষটি ‘সাবু’ নামেই সর্মাধিক পরিচিত। যিনি একাধারে কবি, গীতিকার, লোক ও জারি শিল্পী এবং জীবনমূখী অসংখ্য গানের স্রস্টা। অগনন প্রতিভার অধিকারী বলেই কী জীবনের মাঝ পথে হারিয়ে গেল। হ্যাঁ, আমরা সাবু’র হারিয়ে যাওয়ার কথাই বলছি। ২০১৬ সনের ৯ এপ্রিল মাত্র ৪৮ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে গেছেন এই ক্ষণজন্মা সৃষ্টিশীল জীবনমূখী শিল্পী। মহান এ শিল্পী’র জন্ম ১৯৬৭ সালের ১৫ জুন নড়াইল জেলার সদর উপজেলার চাকই গ্রামে। ছাত্র জীবন থেকেই সংগীত সাধনায় ব্রত হন তিনি। খ্যাতিমান এ জারি শিল্পী, খুলনা বেতারের নিয়মিত লোকশিল্পী, বিজয় গীতির প্রখ্যাত সাধক সাইফুল ইসলাম সাবু’র নানা প্রখ্যাত জারি বয়াতি মরহুম আব্দুল জব্বার মোল্যা ছিলেন তৎকালীন একজন জারি গানের বয়াতি।
জীবনমূখী এ গানের কবি ও গীতিকার অসংখ্য আধ্যাত্মিক গান ও রচনা উপহার দিয়েছেন শিল্পী জীবনে। তার এক একটি গান একেকটি দর্শন। এ মহান শিল্পী গানে মানুষ ফিরে পেয়েছে জীবন। ফিরেছে মানুষের জীবনের গতিময়তা। তিনি লিখেছেন, ‘আমার আল্লাহ যারে রক্ষা করে কে তারে মারতে পারে/ শুকরিয়া জানাই তোমার দরবারে/ আমার মওলারে, শুকরিয়া জানাই তোমার দরবারে। এছাড়াও তিনি রচনা করেছেন আরো অনেক জীবনমূখী গান।
তিনি বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই গান করেছেন। অধ্যক্ষ রওশন আলী বয়াতি, রিনা পারভিন, বেবি পারভিন, সালমা পারভিন, আব্দুর রহামান বয়াতি নাজমুল বয়াতিসহ দেশি-বিদেশি স্বনামধন্য বহু জনপ্রিয় শিল্পীর সাথে গান করেছেন। এছাড়াও তিনি বিটিভি ও বেসরকারী টিভি চ্যানেলসহ বেতার ও বিভিন্ন মঞ্চের নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ-ভারত বিজয় মেলা কোলকাতায় বিজয় সরকারের মরমী গান পরিবেশন করে খ্যাতি অর্জন করেন।
২০১৫ সালে স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে যাকে নিয়ে ‘জারি শিল্পী সাবুর দু’টি বাল্বই বিকল : সহায়তা কামনা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল সেই সবার প্রিয় সাইফুল ইসলাম সাবু ২০১৬ সালের ৯ এপ্রিল হাজারো ভক্ত-অনুরাগীকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ২০১৬ সালের এই দিন ভোরে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে দ্রুত অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে পথিমধ্যে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
প্রায়ত এ মহান শিল্পী মৃত্যুকালে স্ত্রী, এক পুত্র ও দুইকন্যাসহ অসংখ্য ভক্ত ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন। আমিন।
বিলাল মাহিনী, যশোর।
০১৯২২-৯৬৮২৯২