করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষতি বিবেচনায় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩২ বছর করার দাবিতে আগামীকাল রোববার (২৭ জুন) মানবন্ধন করবে ৩২ চাকরি প্রত্যাশীরা। আগামী কাল সকাল ১১ ঘটিকায় রাজধানীর শাহবাগে এই মানববন্ধটির স্থান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
শনিবার (২৬ জুন) সরকারি চাকরির আবেদনের বয়সসীমা ৩২ করার দাবিতে আন্দোলনরতদের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যে কোভিড-১৯ এর ভয়াল থাবা অন্য সকল সেক্টরের মানুষের মতো চাকরিপ্রত্যাশী যুব প্রজন্মকেও বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্তকরেছে। আমরা চাকরি প্রত্যাশী যুব প্রজন্ম করোনাকালীন এই সময়ে চরম ক্ষতিগ্রস্ত এবং এক প্রকার অসহায়ত্ব ভাবে অবস্থা করছি।
সকল বয়সী শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে করোনা দেড় বছর সময়কাল কেড়ে নিয়েছে যা ২ বছরের দিকে ধাবমান। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, করোনাকালে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরিমাণ ৮৭% কমে ১৩% এ উপনীত হয়েছে । সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ হওয়ায় প্রায় দুই লাখ পরীক্ষার্থী চাকরিতে আবেদনের যোগ্যতা হারাতে চলেছেন এই করোনাকালীন অচলাবস্থার মধ্যে যা এদেশের গণমাধ্যমগুলোতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রিপোর্টে বলা হচ্ছে। অন্যদিকে বেকারত্বের হার ২০% থেকে ৩৫% এ উন্নীত হয়েছে যা সামনে আরও বৃদ্ধি পাবে৷ সারা দেশজুড়ে দাবি উঠেছে সকলের জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া এই দুই বছর বিবেচনা করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩২ বছরে উন্নীত করা হোক। সম্প্রতি মাননীয় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর গণমাধ্যমে দেওয়া ব্যক্তব্যে বয়স সমন্বয় বা ব্যাকডেট এর প্রসঙ্গ উঠে এসেছে যেটা সকল বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বৈষম্যমূলক পদ্ধতি আসলে। ব্যাকডেট দেওয়ার মাধ্যমে সকল বয়সী শিক্ষার্থী তথা চাকরিপ্রত্যাশীদের ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়। চাকরিতে আবেদনের বয়স স্থায়ীভাবে ২ বছর বাড়িয়ে ৩২ বছর করলে সকলেই তাদের হারিয়ে যাওয়া সময় ২ বছর ফিরে পাবে। আর ৩২ বছর দিলে এই প্রজন্ম আসলে প্রকৃত ৩০ বছর সুযোগ পাবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়
❖ করোনাকালীন অচলাবস্থায় সকল বয়সের শিক্ষার্থী – চাকরিপ্রত্যাশীরা ইতোমধ্যেই দেড় বছর হারিয়ে ফেলেছে যা দুই বছরের দিকে ধাবমান
❖ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ হওয়ায় প্রায় দুই লক্ষ তরুণ-তরুণী (করোনার শুরুর সময়ে যারা ২৮+ বয়সের ছিলো) চাকরির পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ না পেয়েই ৩০ এর গন্ডি অতিক্রম করতে চলেছে
❖ যে ছেলেমেয়েরা ২৬ বছর বয়সে শিক্ষাজীবন শেষ করে সেই করোনা শুরুর সময় থেকে আশায় বসে আছে চাকরির পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবে, তারাও এই দেড় বছর হারিয়ে ফেলেছে যা দুই বছরের পথে ধাবমান।
❖ সরকারি বিধি মোতাবেক প্রচলিত যে ৩০ বছর বয়স অবধি আবেদনের সুযোগ পাওয়ার কথা করোনার আঘাত কিন্তু প্রকৃতই সেই সুযোগ দিচ্ছে না। ৩২ এ উন্নীত করলে বর্তমান ক্ষতিগ্রস্ত সকল বয়সী শিক্ষার্থীরা মূলত সেই ৩০ বছরের প্রাপ্য সুযোগ পাবে
❖ ১৯৯১ সালে শেষবার সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ করা হয় যখন গড় আয়ু ছিলো ৫৭ বছর । এই ৩০ বছরে গড় আয়ু ১৬ বছর বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছর হলেও বৃদ্ধি পাই নাই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা
❖ ২০১১ সালে এসে অবসরের বয়সসীমা বেড়ে হয় ৫৯ আর মহান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য হয় ৬০। অবসরের বয়স যেহেতু ২ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে সেক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ২ বছর বৃদ্ধি করলে সেটাও আর সাংঘর্ষিক হয় না
❖ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ বা আবেদনের বয়সসীমা ৩০ হলেও বিসিএস স্বাস্থ্য ও জুডিশিয়ারি এর ক্ষেত্রে ৩২ বছর। অন্যদিকে বিভিন্ন কোটার ক্ষেত্রে এই বয়সসীমা ৩২ বছর দেওয়া হয়❖ প্রাপ্ত তথ্যমতে, করোনাকালে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরিমাণ ৮৭% কমে ১৩% এ উপনীত হয়েছে; বেকারত্বের হার ২০% থেকে ৩৫% এ উন্নীত হয়েছে৷ করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্ততার স্বীকার এই দুই লক্ষ চাকরিপ্রত্যাশী বেকারত্বের হার আরও বৃদ্ধি করবে
❖ ব্যাকডেট দেওয়ার মাধ্যমে সকল বয়সী শিক্ষার্থী তথা চাকরিপ্রত্যাশীদের ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়। চাকরিতে আবেদনের বয়স স্থায়ীভাবে ২ বছর বাড়িয়ে ৩২ বছর করলে সকলেই তাদের হারিয়ে যাওয়া সময় ২ বছর ফিরে পাবে
❖ করোনাকালে ভারতের আসাম রাজ্যে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২ বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে
সরকারি চাকরিপ্রত্যাশী যুব প্রজন্মের দাবি:
করোনায় শিক্ষার্থীদের প্রায় ২ বছর সময় জীবন থেকে অতিবাহিত হতে চলেছে। তাই করোনাকালীন সরকারের সকল প্রণোদনার পাশাপাশি মুজিববর্ষের ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির বছরে আমরা বেকার যুবকরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট ‘প্রণোদনা স্বরূপ’ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার দাবি জানাচ্ছি।
আওয়ামী লীগ সরকারের ২০১৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লিখিত ‘প্রতিশ্রুতি’ (বাস্তবতার নিরিখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ) অনুযায়ী করোনাকালীন প্রণোদনা হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২এ উন্নীত করার জোরালো দাবি ও আবেদন জানাচ্ছে এদেশের যুব সমাজ। করোনা জীবনের যে সময় কেড়ে নিচ্ছে এর চেয়ে বড় বাস্তবতা আর কি হতে পারে!