নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস কারাখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মরদেহ খুঁজে বের করতে শুক্রবার সারা রাত ধরে তল্লাশি চালিয়েছে দমকলের বিভিন্ন ইউনিট।
বৃহস্পতিবারের এই অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২। বহু শ্রমিক এখনও নিখোঁজ রয়েছে।
দমকল বাহিনী এখনও তাদের তল্লাশি এবং উদ্ধার কাজ অব্যাহত রেখেছে। ভবনের ছয়তলায় কিছু কিছু স্থানে আগুন জ্বলে উঠছে।
ওদিকে শ্রমিক এবং তাদের স্বজন ছাড়াও দমকল বাহিনীর সূত্রে বলা হচ্ছে, কারখানা ভবনের চারতলায় ছাদে ওঠার সিঁড়ির মুখের দরজাটি তালা বন্ধ থাকায় অনেক মানুষ ছাদে উঠে প্রাণরক্ষা করতে পারেননি।
ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে রূপগঞ্জের যে কারখানায়, সেই কারখানাটির নাম হাসেম ফুডস। এটি সজীব গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান।
আগুন লাগার কারণ খুঁজতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন তদন্তের ঘোষণা করেছে।
কারখানাটির ভবনের চারতলায় তালাবদ্ধ থাকায় এবং অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র না থাকার যে অভিযোগ করেছে ফায়ার সার্ভিস এবং স্থানীয় প্রশাসন, সে ব্যাপারে সজীব গ্রুপের মালিক এম. এ. হাসেমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে মালিকের পক্ষ থেকে ঐ গ্রুপের একজন ম্যানেজার কাজী রফিকুল ইসলাম বিভিন্ন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
“ইকুইপমেন্ট (যন্ত্রপাতি) এনাফ (যথেষ্ট) পরিমাণ ছিল। আমার অ্যালার্ম দেয়ার জন্য সবকিছু ছিল,” বলেন মি. ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, “আপনার নীচতলায় আগুন ধরার কারণে পুরাটা ছড়ায় গেছে।”
এই ঘটনার ক্ষেত্রে বড় অভিযোগ এসেছে যে, ভবনে তালাবদ্ধ ছিল, সেকারণে শ্রমিকরা বের হতে পারেননি। ফায়ার সার্ভিস এই অভিযোগ করেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কারখানাটির মালিক পক্ষের কাজী রফিকুল ইসলাম বলেছেন, “এটি মিথ্যা কথা, এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
কিন্তু ফায়ার সার্ভিস বলেছে, আগুন নেভানোর পর তারা চারতলায় তালাবদ্ধ থাকায় একটি জায়গায় ৪৯ জনে মৃতদেহ পেয়েছেন। তাহলে সেটাকে কীভাবে মিথ্যা কথা বলছেন?
এই প্রশ্ন করা হলে কাজী রফিকুল ইসলাম বলেছেন, “যখন নীচ তলায় আগুনটা ধরেছে, তখন সবাই আতঙ্কে উপরে চলে গেছে।”
এখন এই যে এত মানুষের মৃত্যু হলো-এর দায়িত্বটা কে নেবে?
এই প্রশ্নে ইসলামের বক্তব্য হচ্ছে, “ডিসি মহোদয় এবং ডিআইজির সাথে কথা বলা হয়েছে। এটা আমাদের মালিক পক্ষ দেখবে। এদের ক্ষতিপূরণ সম্পূর্ণ ম্যানেজমেন্ট দেবে।”
কিন্তু ক্ষতিপূরণই শুধু বিষয় নয়। এই যে এতগুলো প্রাণহানি হলো, সেখানে একটা দায় দায়িত্বের প্রশ্ন আসে- এ ব্যাপারে কারখানাটির মালিকপক্ষের কাজী রফিকুল ইসলামের জবাব একই।
“এটা অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।
কারখানাটির মালিকের পক্ষ থেকে অসংগতির অভিযোগগুলো অস্বীকার করা হলেও ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ভবনে চারতলায় সিঁড়ির গেট তালাবন্ধ থাকায় সেখানে আটকা প্রত্যেকেরই মৃত্যু হয়েছে।
এক জায়গা থেকেই তারা ৪৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেন।
মি. বর্ধন আরও বলেছেন, মৃতদেহগুলো আগুনে পুড়ে এমন অবস্থা হয়েছে যে নারী, পুরুষ কিংবা পরিচয় – তাদের পক্ষে কোনকিছুই চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা কারখানার ভবনটি আগুন নেভানোর ব্যবস্থা না থাকার অভিযোগও তুলেছেন।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেছেন, তাদের তদন্তে সব অভিযোগ খতিয়ে দেয়া হবে।
“ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যারা ছিলেন, তারা আমাকে জানিয়েছেন যে, তারা সন্দেহ করছেন, একটা শট সার্কিট থেকে আগুনের উৎপত্তি হতে পারে,” তিনি বলেন, “এবং যথেষ্ট পরিমাণ অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র না থাকার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া জুসের কারখানা ক্যামিকেল এবং পলিথিন ছিল, সেকারণেও আগুন দ্রুত ছড়িছে বলে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানিয়েছে।”
কারখানাটিতে গতকাল বিকেলে আগুন লাগার পর রাত পর্যন্ত তিন জন নারী শ্রমিকের মৃতদেহ এবং ২৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছিল।
কিন্তু অনেক মানুষের প্রাণহানির ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারাও বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ধারণা করতে পারেননি।
এরপর দুপুরে আগুনে বিধ্বস্ত ভবন থেকে একের পর এক মৃতদেহ বের করে আনা হয়।