স্টাফ রিপোর্টার/ (অভয়নগর) যশোর :
পরকীয়ার জেরে আত্মহত্যা, মা-মেয়ের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে করা মামলায়
৮ আগষ্ট রোববার গৃহকর্তা (স্বামী)কে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।
৭ আগষ্ট ২০২১ শনিবার যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার কুলটিয়া গ্রামের ভাড়া বাড়ির রান্নাঘর থেকে গৃহবধূ পিয়া মণ্ডল (২২) ও তাঁর তিন বছরের মেয়ে অদ্রিতা মণ্ডল কথার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পিয়া মন্ডল যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার সুজাতপুর গ্রামের কনার মণ্ডলের স্ত্রী। জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে পার্শ্ববর্তী অভয়নগর উপজেলার দত্তগাতী গ্রামের ভগিরথ মন্ডলের মেয়ে পিয়ার সঙ্গে কণার মন্ডলের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর মেয়ে কথার জন্ম হয়। কথা তাঁদের একমাত্র মেয়ে। উপজেলার কুলটিয়া গ্রামে ফাল্গুন মণ্ডলের বাড়িতে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন কনার। বিয়ের পর থেকে কণার মন্ডলের পরকীয়া প্রেম নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায় ঝগড়া লেগেই থাকত। এরই জেরে মাস খানেক আগে শিশুসন্তান কথাকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যায় পিয়া মন্ডল। ভালো হওয়ার আশ্বাস দিয়ে স্ত্রী পিয়াকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন স্বামী কণার মন্ডল।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র রায় জানান, পিয়া মন্ডলের স্বামী কণার মন্ডল স্থানীয় মশিয়াহাটি কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক। ৭ আগষ্ট ২০২১ শনিবার বিকেলে ভাড়া বাড়ির রান্না ঘর থেকে দুই দড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় তাদের লাশ দেখতে পান এলাকাবাসী। খবর পেয়ে ওসি রফিকুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যান।
পুলিশ ও এলাকার কয়েকজনের ভাষ্যমতে, উপজেলার কুলটিয়া গ্রামের ভাড়া বাড়ির রান্নাঘরের সিলিংয়ে ফ্যান লাগানোর জন্য কিছুটা ঝুলে থাকা লোহার রডের হুক রয়েছে। ওই হুকে একটি লম্বা রশি প্যাঁচানো অবস্থায় ছিল। রশির এক প্রান্তে মা পিয়া ও অপর প্রান্তে মেয়ে কথা গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলছিল। কনার এ সময় বাড়িতে ছিলেন না। প্রতিবেশীরা মরদেহ দুটি ঝুলতে দেখে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে লাশ দুটি উদ্ধার করে এবং এ সময় কনার মণ্ডলকে আটক করে।
এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে পিয়া মণ্ডলের স্বামী কনার মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা হয়। আত্মহত্যাকারী পিয়া মন্ডলের ভাই চন্দন কুমার মণ্ডল বাদী হয়ে আজ ৮ আগষ্ট ২০২১ রোববার মনিরামপুর থানায় মামলাটি করেন। ওই মামলায় পুলিশ কনার মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে। মামলার এজাহারে চন্দন কুমার মণ্ডল অভিযোগ করেন, একাধিক নারীর সঙ্গে কনার মণ্ডলের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক আছে। এ নিয়ে গতকাল দুপুরে তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। পরে মেয়েকে নিয়ে তাঁর বোন পিয়া মন্ডল গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।
পিয়া মন্ডলের মা শিপ্রা মন্ডল বিলাপ করে বলেন, জামাই কণারকে বহুবার ভালো হতে বলেছি। কথা শোনেনি। মেয়ে তাকে বিপথ থেকে ফিরে আসতে বললেই মারধর করত। স্বামীকে পরকীয়া থেকে ফেরাতে না পেরেই আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
মণিরামপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মেয়েকে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে মারার পর পিয়া আরেক রশিতে আত্মহত্যা করেছেন। স্বামীর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের কারণে প্রায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকত। এ নিয়ে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। কলেজ শিক্ষক কণার মন্ডলকে আটক করা হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে এবং সার্বিক তদন্ত করে আত্মহত্যার পুরো রহস্য উন্মোচন হবে।
এলাকাবাসীর দাবি এ আত্মহত্যার সকল রহস্য উদ্ঘাটন করে দোষীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে আর কেউ এমন ঘটনার সাহস পাবেনা।
বিলাল মাহিনী / অভয়নগর যশোর
bhmahini@gmail.com