নবদূত রিপোর্ট:
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধাপে ধাপে খুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্যতম সংগঠন ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’।
মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’ আয়োজিত অনলাইন প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে এ পরামর্শ জানান সংগঠনটি। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় না খুললে প্রতিবাদ কর্মসূচি হিসেবে শিক্ষকরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতীকী ক্লাস নেয়া শুরু করবেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরিনের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন, কাজী মারুফুল ইসলাম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আরাফাত রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসির উদ্দিন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, সেপ্টম্বরের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধাপে ধাপে খুলে দেওয়া হোক। আমরা বলছি না, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে খুলতে হবে। আমাদের দাবি হলো, সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে শক্তিশালী করে খুলে দেওয়া হোক। যেখানে টিকা, টেস্ট এবং আইসিউর ব্যবস্থা থাকবে।
তারা আরও বলেন, হলগুলোতে গণরুমের ব্যবস্থা বাদ দিয়ে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হোক। সরকার যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে আরো গড়িমসি করে তাহলে আমরা প্রতিবাদ হিসেবে উন্মুক্ত স্থানে প্রতিকী ক্লাস নিবো। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ ক্লাস নিয়েছেন। আমরাও নিবো। প্রতিকী ক্লাস নেওয়ার আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে ১১টি পরামর্শমূলক প্রস্তাবও দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এই সংগঠন। পরামর্শগুলো হলো-
১.সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হলে ফেরার সুযোগ করে দিতে হবে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রথম থেকেই পূর্ণ কার্যক্রম শুরু করা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তাই আবাসিক হলে প্রথমে শুধু অনার্স এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা, যারা তাদের শিক্ষা জীবনের শেষের দিকে রয়েছে তাদের ওঠার অনুমতি থাকবে।
২.আবাসিক হলে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত না করে কোনভাবে এইসব পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার নেয়ার কোন ধরনের কার্যক্রম শুরু করা যাবে না। এইসব ছাত্র ছাত্রীদের পরীক্ষা কার্যক্রম শেষ হয়ে গেলে, পরবর্তী ব্যাচগুলোর ধাপে ধাপে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। প্রাথমিক ধাপে যে শিক্ষার্থীরা হলে থাকবে আর যারা বাসা থেকে আসবে তাদের পরীক্ষা আলাদা রুমে নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৩.আবাসিক হলে গণরুম নামক কোন ব্যবস্থা থাকতে না পারে তার সমাধানে এখনই কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। আবাসিক হল ব্যবস্থাপনা পরিপূর্ণভাবে শিক্ষকদের মাধ্যমে পরিচালিত হতে হবে, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে নয়।
৪.বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টেস্ট এবং টিকা দানের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে হলে প্রবেশ করা শিক্ষার্থীরা কোভিড টেস্ট এবং টিকাগ্রহণে অগ্রাধিকার পায়।
৫.ক্যাম্পাসগুলোতে অবস্থিত মেডিকেল সেন্টারগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, আইসোলেশনের ব্যবস্থা, অসুস্থ হলে শিক্ষার্থীদের দেখা-শুনার ব্যবস্থা উন্নত করার কোনো বিকল্প নাই। এ বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬.পরীক্ষার কার্যক্রম শেষ হয়ে যাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে নিয়মিত পাঠদানের কার্যক্রম শুরু করতে হবে। তবে এখানেও করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ৫০ শতাংশ অনলাইন এবং ৫০ শতাংশ অফলাইন ক্লাস চালু করা যেতে পারে।
৭.অনলাইন ক্লাসেও হাইব্রিড পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে । যে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসতে পারবে, তারা সশরীর অনসাইট ক্লাস করবে। যারা পারবে না তারা অনলাইন ক্লাসে অংশ নেবে। যে ক্লাসে এসেছিলো সে অসুস্থ হলে সে অনলাইন চলে যাবে।
৮.শিক্ষকদের অনলাইন টিচিং লার্নিং ম্যানেজমেন্টের সিস্টেম তৈরি করার জন্য প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা কমিটি গঠন করে এর কাজ শুরু করতে হবে এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৯.শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।
১০.অনলাইনে সুষ্ঠভাবে পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্পমূল্যে দ্রুত গতির ইন্টারনেট সার্ভিসের বিশেষ প্যাকেজ ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
১১.ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে তাদের শিক্ষায় ফিরিয়ে আনার সেফটি নেটের ব্যবস্থা করতে হবে।