নবদূত রিপোর্ট:
দেশের দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করার জন্য অবিলম্বে প্রস্তাবিত ‘বৈষম্য বিলোপ আইন’ পাশের দাবিতে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশে করেছে দলিত শ্রেণি একদল মানুষ।
শনিবার (৯ অক্টোবর) বিকালে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন, দলিত মহিলা ফোরাম ও নাগরিক উদ্যোগের যৌথ আয়োজনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
২০১৮ সালে ‘বৈষম্য বিলোপ আইন ২০১৮’ নামে একটি নতুন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। পরে মানবাধিকার কমিশন থেকে আইন মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে এ খসড়াটি পাঠানো হয়। এর আগে ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল ‘বৈষম্য বিলোপ আইন’ নামে আরও একটি খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল আইন কমিশন। তবে এত বছর পরও পাশ হয়নি সমাজের দলিত শ্রেণির মানুষের অধিকার আদায়ের এ আইন।
সমাবেশে দলিত নারী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলনের(বিডিইআরএম) সভাপতি মনি রানী দাস বলে,” আমাদের সন্তানের কোনো ভালো স্কুলে পড়া লেখা করতে পারে না। আমরা ভালো কোনো হোটেলে রেস্টুরেন্টে-হোটেলে খেতে পারে না। আমারা আমাদের ন্যায্য অধিকারগুলো পাই না। আমরা আমাদের সন্তানদের ভালো স্কুলে পড়াতে চাই,আমরা ভালো হোটেল-রেস্টুরেন্টে খেতে চাই,আমাদের মৌলিক অধিকার চাই,এর জন্য বৈষম্য বিলোপ আইন পাশ করা হোক।”
সমাবেশে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে সমি রাণী দাস বলেন,”জন্ম ও পেশাগত কারণে বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার বাংলাদেশে প্রায় ৬৫ লক্ষ জনগোষ্ঠী রয়েছে যারা দলিত হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে দলিত জনগোষ্ঠীর পেশা ও জন্ম পরিচয়ভিত্তিক প্রায় ৮০টি সম্প্রদায় রয়েছে, যারা সমাজ এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার। এছাড়াও বাংলাদেশের অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী তাদের সামাজিক পরিচয় এবং অবস্থানগত কারণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সমতলের আদিবাসী চা-শ্রমিক, তৃতীয় লিঙ্গ, বেদে, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী, নৃ-তাত্ত্বিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী, যৌনকর্মী এবং ভিন্ন যৌন বৈচিত্রের মানুষ।
তিনি আরো বলেন,”আইন কমিশনের রিপোর্টে মুচি, মেথর, সুইপার, জোলা, রবিদাস, ডোম, ডোমার, বাগদি, বেদে, বাওয়ালি,ঋষিসহ সামাজিক নিগ্রহ ও অস্পৃশ্যতার শিকার প্রায় ২৩ রকমের দলিত শ্রেণীর মানুষের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দলিত শ্রেণীর মানুষের বাইরেও যারা বঞ্চিত তাদের আইনের সুরক্ষার আওতায় আনার প্রস্তাব করা হয়েছে যেমন: হিজড়া, যৌনকর্মী, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী, নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ দলিতরা অর্থনৈতিক পশ্চাদপদ তো বটেই শুধুমাত্র তাদের জাত-পাত-ধর্ম পরিচয়ের জন্যে অনেকে এদের সঙ্গে একসাথে খাবার খায়না, বসেনা, চাকরি দেয়না, বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি পর্যন্ত নেয়না। এই অস্পৃশ্যতা ও জাতপাত ভেদাভেদ তাই শুধু আমাদের সামাজিক ন্যায়বিচার প্রাপ্তির প্রতিশ্রুতির ব্যত্যয় নয় বরং এ আমাদের মানবিক ধারণার উপর এক বড় আঘাত।
” আইন কমিশন ২০১৪ সালে দলিত জনগোষ্ঠীর অধিকারকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বৈষম্য বিলোপ আইনের একটি খসড়া প্রণয়ন করে। খসড়া প্রণয়নকালে আইন কমিশন নাগরিক সমাজের বিভিন্ন অংশীজনের সাথে আলোচনা করে। চূড়ান্ত খসড়া আইনটি আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। এরপর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফোরাম- বাংলাদেশ সরকারকে বৈষম্য বিরোধ আইনটি প্রণয়নের ব্যাপারে সুপারিশ করে। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে মাননীয় আইন মন্ত্রী মহোদয় এই আইন প্রণয়নের ব্যাপারে একাধিকবার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আইনটি পাশের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি। তাই আজ এই সমাবেশ থেকে আমাদের একমাত্র দাবি-অতি দ্রুত ‘বৈষম্য বিলোপ আইন’ পাশ করা হোক।”
সমাবেশে মাহমুব আক্তারের নির্দেশনায় দলিত শ্রেণির বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরে একটি নাটিকা পরিবেশন করা হয়।
সমাবেশে মনি রানী দাস সভাপতিত্বে এবং বিডিইআরএম’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কৈলাশ রবি দাস এর সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিডিইআরএম’র উপদেষ্টা ও নাগরিক উদ্যোগে জাকির হোসেন, বিডিইআরএম’র সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার,সাংগঠনিক সম্পাদক ভীম্পাল্লী ডেভিড রাজু,মৌলবাজার শাখার সভাপতি পরিমল সিং বাড়াইক,নাগরিক উদ্যোগের উন্নয়নকর্মী এবিএম আনিসুজ্জামান।