যারা লোকাল বাসে চলাচল করেন তারা দেখে থাকবেন একই রোডে চলাচল করা লোকাল বাসগুলোর মধ্যে ওভারটেকের প্রতিযোগিতা কতটা ভয়ংকর! কতটা বেপরোয়া! বাসের জানালার পাশে বসে থাকলে হঠাত করে দেখা যায় অন্য একটা বাস এসে জানালা ঘষে বিকট শব্দ করে চলে গেছে, মনে হয় জানালার কাচ ভেঙে ভেতরে পরে গেছে৷আবার একই কোম্পানির বাস কোনটা আগে যাবে কোন টা পরে যাবে, কোন বাস আগে যাত্রী নিবে সেটা নিয়ে জ্যামহীন রোডে এক বাস আরেক বাসকে সাইড না দিতে দেখা যায়।
এই ছবিটির কথা মনে আছে? ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল দুই বাসের রেষারেষিতে একবাস আরেকবাসকে ওভারটেক করার সময় সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজিবের হাত শরীর থেকে ছিন্ন করে দিয়ে যায়। রাজি বের হাত ঝুলে থাকে দুইবাসের মাঝে৷ পরবর্তীতে রাজিব মারা যায়।
গতকাল রাত ১০ টায় সদ্য সমাপ্ত হওয়া এসএসসি পরীক্ষার্থী মাইনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয় দুটি বাসের প্রতিযোগিতায় অনাবিল বাসের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান। প্রতিবাদে উত্তেজিত জনতা ১০ টার বেশি বাসে আগুন লাগিয়ে দেয়। কিছুদিন আগেও রাইদা নামে বাস একটি ছাত্রকে হাফ পাশ ভাড়া না দিলে বাস থেকে নামিয়ে আহত করে ফলে বিক্ষুব্ধ সহপাঠীরা রাইদা বাস চলাচলকারী বন্ধ করে দেয়৷সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কাতে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে নটরডেম কলেজের নাঈম হাসান ও আহসান কবির নামে এক সাংবাদিকও মারা যান৷নাঈম হত্যার দাবি, শিক্ষার্থীদের হাফ পাশ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। অন্তত দুঃখের বিষয় সেখানেও ছাত্রলীগ বর্বর হামলা চালায়। ছাত্ররা আবারো ৯ দফা দাবি জানিয়েছে যদিও ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ৯ দফার প্রতিশ্রুতি আজও বাস্তবায়ন করেনি সরকার৷৷
“রাজধানীতে বাসের ধাক্কায় ” লেখে সার্চ দিলে অসংখ্য নিউজ পাবেন৷ কেউ হাত, কেউ পা, কেউ প্রাণ হারিয়েছেন। রাজধানীসহ বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কিছুদিন পর পর এসব নিউজ দেখতে হয়৷ বাসগুলোর মধ্যে রেষারেষি,ওভারটেকের প্রতিযোগিতা, ঘষাঘষি, বেপরোয়া চালকের জন্য এসব প্রাণহানিকে আমরা কখনো দূর্ঘটনা বলতে পারি না, এসব প্রাণহানিকে আমরা সরাসরি খুন, হত্যা বলতে চাই। এসব খুনের দায়ভার অবশ্যই সরকারকে নিতে হবে৷কারণ বেশিরভাগ গাড়ির বৈধতা ও ফিটনেস নেই, চালকদেরও ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই৷এগুলোর বিরুদ্ধে সরকার কখনো যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি৷ এসব বাস কোম্পানির মালিকগুলো প্রত্যক্ষ/ পরোক্ষভাবে সরকারদলীয় রাজনীতির সাথে জড়িত৷দলীয় ক্ষমতার বলে রাজধানীতে এসব অবৈধ বাস নামিয়েছে।
সরকারকে বলব এসবের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে সময় থাকতে রাজধানীকে নিরাপদ চলাচলের উপযোগী করে তুলুন। ২০১৮ সালের মত নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ৯ দফা ও হাফপাশসহ বর্তমান ছাত্রদের আন্দোলন বিভিন্ন দাবিগুলো বাস্তবায়ন করুন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ দিয়ে আন্দোলন বানচাল করার চিন্তা কখনো করবেন না এতে হিতে বিপরীত হবে৷
মোঃ সোহরাব হোসেন,
যুগ্ম আহ্বায়ক, বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদ৷